|
|
|
|
কৌশলে সংযত বাজেট নিয়ে |
সপা এলে সরকার ছাড়তে তৈরি মমতা |
অগ্নি রায় • নয়াদিল্লি |
মুলায়ম সিংহ যাদব ইউপিএ-তে সামিল হলে সরকার ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সমাজবাদী পার্টিকে সরকারে আনার জন্য কংগ্রেস যে মরিয়া প্রয়াস শুরু করেছে, তা বুঝতে পারছেন মমতা। সেই অনুযায়ীই নিজের ভবিষ্যৎ রাজনীতির পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন বলে ঘনিষ্ঠমহলে জানিয়েছেন তিনি। বস্তুত, মমতা এক দিকে যেমন চেষ্টা করছেন যত দ্রুত সম্ভব মুকুল রায়কে রেলমন্ত্রী করতে। তেমনই শেষ মুহূর্তে ‘অন্য রকম’ কিছু ঘটলে তার জন্যও নিজেকে তৈরি রাখছেন। তাই কড়া নজর রাখছেন কংগ্রেস-সপা সমীকরণের দিকে।
মমতা শিবিরের দাবি, শুধুমাত্র সপা-কে সঙ্গে পেলেই সরকার বিপন্মুক্ত হবে না। তৃণমূলকে বাদ দিয়ে মুলায়মকে নিলে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু টায়েটায়ে। যা আদৌ স্বস্তিজনক হবে না কংগ্রেসের পক্ষে। আবার সপা সরকারে এলে মায়াবতীর দল বিরোধী হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে যখন তখন সরকার পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। এখানেই শেষ নয়। সামনেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। সেখানে কংগ্রেস সমর্থিত প্রার্থীকে জেতাতে হলে তৃণমূলকে সঙ্গে পাওয়া অত্যন্ত জরুরি বলেই মমতা শিবিরের দাবি। তা ছাড়া, রাজ্যসভায় কংগ্রেস এখনই সংখ্যালঘু। রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা নিয়ে যদি তৃণমূল বিরোধিতা করে তা হলে তার উপর ধন্যবাদসূচক প্রস্তাব পাশ হবে না। সেটাও সরকারের পক্ষে বড় অস্বস্তি।
অন্য দিকে, কংগ্রেসের প্রস্তাব নিয়ে সপা-র অন্দরেও ঐকমত্য তৈরি হয়নি। আজ লখনউয়ে কংগ্রেসের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে বৈঠকে বসেছিলেন সপা নেতারা। কেন্দ্রীয় সরকারে যোগ দেওয়া কতটা উচিত হবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়। মুলায়মকে রেলমন্ত্রিত্বের প্রস্তাব দিয়েছে কংগ্রেস। সপা-র একটি বড় অংশ যার বিরোধিতা করছেন। আজম খান-সহ সেই অংশের বক্তব্য, ‘নেতাজি’ ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার। তিনি কেন রেলমন্ত্রীর পদ নেবেন? তা ছাড়া, মুলায়ম এর আগে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন। আজ যখন তাঁর শক্তি অনেক বেশি, তখন কেন তিনি তুলনায় ছোট পদ নেবেন!
ফলে সব মিলিয়ে রাজনৈতিক টানাপোড়েন ক্রমশ জটিল হচ্ছে। তাই সপা-র সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি মমতার দাবি মতো দীনেশ ত্রিবেদীকে সরিয়ে মুকুল রায়কে রেলমন্ত্রী করার বিষয়টিও গত কাল প্রাথমিক ভাবে মেনে নিয়েছে কংগ্রেস। কিন্তু এ ব্যাপারে স্বাভাবিক ভাবেই কিছুটা সময় কিনতে চাইছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। ফলে কবে বিষয়টি বাস্তবায়িত হবে তা এখনও অনিশ্চিত। এরই মধ্যে কিছু প্রস্তাব কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যার মধ্যে একটি হল, মুকুলকে পূর্ণ মন্ত্রিত্ব না দিয়ে রেলের প্রতিমন্ত্রীর অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া। দ্বিতীয়টি, রেলের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তাঁকে নিয়োগ করা। যদিও এই প্রস্তাবগুলি নিয়ে মমতার সঙ্গে এখনও কেউ কথা বলেননি। তৃণমূলনেত্রী কিন্তু প্রস্তাব কানে আসামাত্র ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়ে দিয়েছেন, রেলের পূর্ণ মন্ত্রিত্বের নীচে কোনও কিছুতেই তিনি রাজি হবেন না।
তবে এই জটিল পরিস্থিতিতেও আজ কেন্দ্রীয় বাজেট নিয়ে উচ্চস্বরে কোনও বিরোধিতা করেননি তৃণমূল সাংসদরা। বরং তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় একে ‘সহনীয়’ বলেই বর্ণনা করেছেন।
বাজেট নিয়ে আজই খুব বড় মাপের বিরোধিতায় না-যাওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রথমত, সত্যি সত্যিই বিশেষ বিরোধিতার জায়গা খুঁজে পাননি তৃণমূল নেতৃত্ব। দ্বিতীয়ত, কৌশলগত ভাবে এখন মুকুলকে যত শীঘ্র সম্ভব রেলমন্ত্রী করতে চাইছেন মমতা। এ ব্যাপারে সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে প্রাথমিক সমঝোতা হওয়ার পরে এখনই বিরোধে যেতে চাইছেন না তিনি। সপা-র সঙ্গে কংগ্রেসের কথাবার্তা যে দ্রুত এগোচ্ছে, সেটাও বুঝতে পারছেন তিনি। তৃতীয়ত, মমতার বক্তব্য, বাজেটে বিরোধিতার যে জায়গাগুলি রয়েছে তা সংসদে আলোচনার সময় যথেষ্ট জোরের সঙ্গে তুলে ধরার সুযোগ রয়েছে। বাজেটে বদল আনারও সুযোগও রয়েছে।
তাই আগামী সপ্তাহে সংসদে বাজেট-আলোচনার সময় সার এবং পেট্রোপণ্যের উপর থেকে ভর্তুকি তুলে নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন সুদীপ। তাঁর কথায়, “সার, কেরোসিন, রান্নার গ্যাস, গরিব মানুষের ঘর পর্যন্ত পৌঁছায়। আমরা দাবি করব, এই সব ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব ছাড় দেওয়া হোক। এ ছাড়া সরকার যে ভাবে পরোক্ষ কর আদায় বাড়াতে চলেছে, তাতে অস্বচ্ছতা রয়েছে। এর ফলে মূল্যবৃদ্ধি বাড়তে পারে বলেই আমাদের আশঙ্কা।”
পাশাপাশি বাজেটে পশ্চিমবঙ্গকে আর্থিক ভাবে সাহায্য করার কোনও ইঙ্গিত না-থাকায় হতাশ তৃণমূল। পার্থবাবু বলেন, বিপুল ঋণের বোঝা ঘাড়ে চেপে থাকায় আর্থিক ভাবে ঘুরে দাঁড়াতে কেন্দ্রের কাছে কিছু প্রস্তাব পাঠিয়েছিল রাজ্য। কিন্তু তা নিয়ে বাজেটে কিছু উল্লেখ করেননি প্রণববাবু। গোটা বিষয়টি যাতে ‘পুনর্বিবেচনা’ করা হয় সে জন্য কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করবেন তৃণমূল নেতারা। |
|
|
|
|
|