|
|
|
|
কিছু বাঁচালেন, কিন্তু কর বাড়িয়ে নিলেন আরও বেশি |
শঙ্খদীপ দাস ও দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় • নয়াদিল্লি |
দিলেন অঠন্নি, নিলেন রুপিয়া।
আজ বাজেটে কর প্রস্তাবে এই ব্যবস্থাটিই করে রাখলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। আয়কর ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে করে দিলেন ২ লক্ষ টাকা। কিন্তু পরিষেবা কর ও উৎপাদন শুল্ক ২ শতাংশ করে বাড়িয়ে তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করলেন তার থেকে বেশি।
এত দিন পর্যন্ত বছরে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় ছিল করমুক্ত। এ বার প্রণববাবু ২০ হাজার টাকা বাড়িয়ে সেই সীমা নিয়ে গেলেন ২ লক্ষে। নতুন হিসেব মতো ২ লক্ষ ১ টাকা থেকে ৫ লক্ষ পর্যন্ত আয়কর দিতে হবে ১০ শতাংশ হারে, ৫ লক্ষ ১ টাকা থেকে ১০ লক্ষ পর্যন্ত ২০ শতাংশ হারে এবং তার বেশি হলে ৩০ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হবে। এর ফলে বছরে কমপক্ষে ২ হাজার ৬০ টাকা এবং সর্বাধিক ২২ হাজার ৬৬০ টাকা বাঁচানো সম্ভব হবে। রাজনৈতিক দলগুলির বিরোধিতায় আর্থিক সংস্কারের লক্ষ্যে দু’টি বড় পদক্ষেপ, প্রত্যক্ষ কর বিধি (ডিটিসি) এবং পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) এখনও বাস্তবায়িত করতে পারেননি অর্থমন্ত্রী। কিন্তু এ বার কর কাঠামোয় বদল এনে এই দু’টিরই প্রায় সব প্রস্তাব কার্যকর করে ফেললেন তিনি। ফলে মধ্যবিত্তের পকেটে চাপও কমলো।
কিন্তু একই সঙ্গে প্রণববাবু জুড়ে দিয়েছেন বর্ধিত পরিষেবা কর ও উৎপাদন শুল্ক। দু’টি ক্ষেত্রেই হার ১০ থেকে বাড়িয়ে ১২ শতাংশ করা হল। মাত্র ১৭টি বাদে সব পরিষেবা ক্ষেত্রেই এ বার থেকে কর দিতে হবে। আর্থিক ঘাটতি মেটাতে অর্থমন্ত্রী যে ভাবে ধীরে ধীরে গরিব মানুষের কাছে সরাসরি ভর্তুকি পৌঁছে দিতে চাইছেন, তাতে ভবিষ্যতে মধ্যবিত্তের রান্নার গ্যাসের দাম বাড়াও অসম্ভব কিছু নয়। ফলে অদূর ভবিষ্যতে মূল্যবৃদ্ধির হার বাড়তে পারে বলে এর মধ্যেই আশঙ্কা করছেন অনেকে। আর সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কেরও কড়া দাওয়াই-ও অপ্রত্যাশিত নয়।
গ্রাহকদের পকেটে কতটা হাত দেবে পরিষেবা কর এবং উৎপাদন শুল্ক? হেঁসেল হোক বা নিত্যদিনের কেনাকাটা, মাসকাবারি বাজার বা সপ্তাহান্তের ছুটি কাটানো এই দুইয়ের দরুণ সব ক্ষেত্রেই এ বার খরচ বাড়তে চলেছে। মোবাইল তো বটেই, যে কোনও ফোনে কথা বলার ক্ষেত্রেও পরিষেবা বাবদ বেশি কর দিতে হবে। পরিষেবা করের আওতায় আসছে বিমানের টিকিট এবং ট্রেনের বাতানুকূল শ্রেণির ভাড়াও। এমনকী, যাঁরা হরদম ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে থাকেন, তাঁদেরও এ বার থেকে বেশি মাসুল গুনতে হবে। পরিষেবা করের আওতা থেকে বাদ যাচ্ছে না আইপিএল ম্যাচও। যাঁরা সেই পরিষেবা দিচ্ছেন, তাঁরা স্বাভাবিক ভাবেই গ্রাহকদের ঘাড়ে বাড়তি করের বোঝা চাপাবেন। আর উৎপাদন শুল্ক? নাট-বল্টু থেকে প্যাকেটজাত আলুভাজা, যে সব জিনিস উৎপাদন করা হয়, তাতেই এ বার থেকে শুল্ক বাড়ছে। আর্থিক মন্দার সময় উৎপাদন শুল্ক কমানো হয়েছিল। এ বার তা বাড়িয়ে পকেটের উপরে চাপ বাড়িয়ে দিলেন অর্থমন্ত্রী। কারণ, সেই বোঝাও বইতে হবে গ্রাহকদের। অর্থমন্ত্রীর মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কৌশিক বসুর মতে, “আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে, এই বাড়তি বোঝার অর্ধেক গ্রাহকদের ঘাড়ে চাপানো হয়। কিন্তু এই বোঝাও যদি এখন না চাপানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তা হলে আর্থিক ঘাটতিও কম করা যাবে না। স্বল্পমেয়াদে
বোঝা বাড়লেও দীর্ঘমেয়াদে এই পদক্ষেপে লাভ হবে।” |
বাঁচবে কত |
|
২০১১-’১২ |
২০১২-’১৩ |
বার্ষিক আয় |
কর |
কর |
সাশ্রয় |
১,৮০,০০০ পর্যন্ত |
০ |
০ |
- |
২,০০,০০০ |
২,০৬০ |
০ |
২,০৬০ |
৫,০০,০০০ |
৩২,৯৬০ |
৩০,৯০০ |
২,০৬০ |
১০,০০,০০০ |
১,৫৬,৫৬০ |
১,৩৩,৯০০ |
২২,৬৬০ |
• শিক্ষা সেস-সহ করের হিসেব
• প্রবীণদের ক্ষেত্রে ৬০ থেকে ৮০ বছরে ২,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত করছাড় বহাল। ৮০ বছরের বেশি বয়স্ক অতি-প্রবীণদের ক্ষেত্রে ৫ লক্ষ পর্যন্ত কর লাগবে না। |
তথ্যসূত্র: অমিতাভ গুহ সরকার |
|
অতএব সাবধান! বাজেটের শেষ দিকে এসে প্রণববাবু সেই অশনিসঙ্কেত নিজেই শুনিয়েছেন। বলেছেন, “অর্থনীতির যখন অসুখ হয়, তখন ওষুধের সন্ধানে সকলে অর্থমন্ত্রীর কাছেই আসেন। চিকিৎসার জন্য অর্থমন্ত্রীকে তাই এমন পদক্ষেপ করতেই হয়, যখন সাময়িক ভাবে যন্ত্রণার হলেও দীর্ঘমেয়াদে সুখকর।” শেক্সপিয়ারের হ্যামলেট উদ্ধৃত করে অর্থমন্ত্রী বলেন, “সদয় হওয়ার জন্য নির্মম হতেই হবে।”
এর সঙ্গে অবশ্য সামান্য আর কিছু সুরাহার কথা ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। ব্যক্তিগত করদাতাদের সেভিংস অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রাপ্ত সুদের ওপর কোনও কর দিতে হবে না। ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক আয়ের চাকুরিজীবীদের সেভিংস অ্যাকাউন্ট থেকে প্রাপ্ত সুদ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হলে আর আয়করের রিটার্ন জমা দিতে হবে না। এত দিন শুধু স্বাস্থ্য বিমার জন্য ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দেয় প্রিমিয়াম করযোগ্য বেতন থেকে ছাড় হিসেবে পাওয়ার সুবিধা ছিল। সেই ঊর্ধ্বসীমার মধ্যেই হেল্থ চেকআপের জন্য এ বার ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ করযোগ্য বেতন থেকে ছাড় দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন অর্থমন্ত্রী। দেশের আমজনতাকে শেয়ার বাজারমুখী করতে করছাড়ের একটি পথ খুলে দিলেন। রাজীব গাঁধী ইক্যুইটি সেভিংস প্রকল্প ঘোষণা করে তিনি বলেছেন, ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করলে তার অর্ধেক কর ছাড় পাওয়া যাবে। কিন্তু এই বিনিয়োগের সুযোগ পাওয়া যাবে গোটা জীবনে মাত্র একবারই।
প্রণববাবুর যুক্তি, “এই জুনে ১৮ বছরে পা দিচ্ছে পরিষেবা কর। শিক্ষা, স্বাস্থ্য-সহ সরকারি বিভিন্ন ক্ষেত্র ও বিশেষ কয়েকটি পরিষেবা বেছে নিয়ে করের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। কিন্তু সরকারি সংস্থাও যেখানে বেসরকারি ক্ষেত্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে, সেখানে কর ছাড় দেওয়ার কোনও অর্থ হয় না।” অর্থাৎ, এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে চাপতে গেলে পরিষেবা কর দিতেই হবে। চলতি বছরের তুলনায়
আগামী আর্থিক বছরে শুধু
পরিষেবা কর থেকেই ৫০ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আদায় করতে চাইছেন অর্থমন্ত্রী।
কিন্তু অর্থনীতিবিদের একাংশ থেকে বিরোধী দলগুলি মনে করছে, এর ফলে মূল্যবৃদ্ধির হার বাড়বে।
এই মূল্যবৃদ্ধি সামলাতে রিজার্ভ
ব্যাঙ্কের পক্ষেও সুদের হার বাড়ানো ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না বলে মনে করছেন অনেকে। তখন আবার অন্য বিপত্তি! |
|
|
|
|
|