|
|
|
|
‘বাড়বে গরিবের দুঃখ’ |
বাজেটে খুশি নয় ছ’জেলা |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
ভাড়া বাড়ানো সত্বেও রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী রেল বাজেট নিয়ে যতটা উচ্ছ্বসিত হয়েছিল উত্তরবঙ্গ, শুক্রবার সংসদে পেশ করা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সাধারণ বাজেটে ততটাই নিরুত্তাপ। সাধারণ বাসিন্দা এবং ব্যবসায়ীদের অনেকেরই বরং আক্ষেপ, এক দশক ধরে দাবি করে আসা উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মতো উত্তরবঙ্গেও শিল্পের জন্য কর ছাড়ের প্রস্তাব এ বারের বাজেটেও ঠাঁই পায়নি। উত্তরবঙ্গে ক্ষুদ্র শিল্প কিংবা চা শিল্পের আলাদা বরাদ্দ হয়নি। বরং গুডস অ্যান্ড সার্ভিস ট্যাক্স চালুর যে প্রস্তাব বাজেটে রাখা হয়েছে সেটা চলতি বছরের মাঝামাঝি নাগাদ চালু করার ক্ষেত্রে তাঁদের আপত্তির কথা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন। তাঁদের বক্তব্য, নয়া কর ব্যবস্থা আগামী বছরের এপ্রিল থেকে চালু করতে হবে। তার আগে এই কর ব্যবস্থা সম্পর্কে ব্যবসায়ীদের ভাল ভাবে অবহিত করতে হবে। তবে মালদহে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য অর্থ বরাদ্দ হওয়ায় খুশি সেখানকার বাসিন্দারা। ফেডারেশন অব চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, নর্থ বেঙ্গলের (ফোসিন) সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “উত্তরবঙ্গের জন্য সাধারণ বাজেটে কিছুই নেই। চা শিল্পে দুরবস্থা সত্বেও কোনও ছাড়ের কথা বলা হয়নি। |
|
কেন্দ্রীয় বাজেট নিয়ে শিলিগুড়িতে সিআইআইয়ের আলোচনাসভা। ছবি: সন্দীপ পাল। |
গুডস অ্যান্ড সার্ভিস ট্যাক্সে আপত্তি আছে। বছরের মাঝপথে এটা চালু করলে সমস্যা হবে। ২০১৩ সালের এপ্রিলে চালু করতে হবে। তার আগে ব্যবসায়ীদের এই পদ্ধতি সম্পর্কে ভাল করে অবহিত করতে হবে।” মালদহে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য অর্থ বরাদ্দ হওয়ায় খুশি মার্চেন্ট চেম্বার অব কমার্সের সম্পাদক জয়ন্ত কুণ্ডু। তিনি বলেন, “মালদহের মতো জেলায় বন্যাপ্রবণ নিয়ন্ত্রণের জন্য অর্থ বরাদ্দ হওয়ায় আমরা খুশি। আয়করের সরলীকরণ ও ৮৮৮০ কিলোমিটার জাতীয় সড়ক পরিবর্ধনের যে কথা বলা হয়েছে তাতে সাধারণ ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সকলেই উপকৃত হবেন।” বাজেট নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলি নিজের মতো করে মূল্যায়ন করেছে। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ মনে করেন, এ বারের বাজেট দিশাহীন। বিশেষ করে শিল্পায়নের জন্য উত্তরবঙ্গকে করমুক্ত ঘোষণা না-হওয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ। রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “আয়করের উর্ধ্বসীমা যা বাড়ানো হল তাতে মধ্যবিত্তের লাভ হবে না। এটা উচ্চবিত্তদের বাজেট ছাড়া অন্য কিছু নয়।” ওই জেলারই কংগ্রেস সভাপতি শ্যামল চৌধুরীর বক্তব্য, ভারসাম্যের বাজেট। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। ফরওয়ার্ড ব্লক জেলা সম্পাদক তথা দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহের মতে, “কৃষিতে বরাদ্দ বাড়ানোর কথা বলা হলেও মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় রয়েছে সারের নাম। এই বাজেটে আখেরে গরিবের স্বার্থ উপেক্ষা করা হয়েছে।” সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদক মন্ডলী সদস্য অনন্ত রায়ের অভিযোগ, কোচবিহার-সহ উত্তরবঙ্গের প্রচুর মানুষ কাজের খোঁজে ভিনরাজ্যে যান। তা ঠেকানোর পরিকল্পনা বাজেটে নেই। তিনি দাবি করেছেন, “দিশাহীন, জনস্বার্থ বিরোধী বাজেটে গরিবের দুঃখ আরও বাড়বে।” বামফ্রন্টের উত্তর দিনাজপুর জেলার সচিব অপূর্ব পালের মতে, বহুজাতিকদের খুশি করতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ওই বাজেট তৈরি করেছেন। তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক অসীম ঘোষের মতে, গরিব মানুষদের জন্য আরও ঘোষণা দরকার ছিল। আয় কর আইনজীবী তথা শিলিগুড়ির ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর কমল অগ্রবালও বাজেটে হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “সাধারণ মানুষের জন্য বাজেটে কিছু নেই। আয়কর ছাড়ের উর্ধ্বসীমা তেমন কিছুই বাড়েনি। পরিষেবা কর ২ শতাংশ বেড়েছে। রেলের যাত্রী ভাড়া এবং পণ্য মাসুল বেড়েছে।” অর্থনৈতিক লগ্নি পরামর্শদাতা সংস্থা বিসিপিএসের কর্ণধার বিজন চক্রবর্তী করেন, বাজেটের দীর্ঘমেয়াদী সুফল মিলবে। তিনি বলেন, “পিছিয়ে পড়া এলাকায় বরাদ্দ বাড়ায় উত্তরবঙ্গ উপকৃত হবে। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় বরাদ্দ বাড়ায় গ্রামাঞ্চলের অর্থনীতি সুফল পাবে।”
|
এবার বাজেট শুনে মনে হল
ভয়ের যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
তবে সামাজিক
সুরক্ষা খাতে
বরাদ্দ বাড়ানো ভাল ব্যাপার।
সুপর্ণা দাশগুপ্ত, বধূ |
বাজেট প্রতিক্রিয়া |
আয়করের ঊর্ধ্বসীমায়
অল্প ছাড়
ছাড়া আমাদের জন্য
তেমন কিছুই নেই। বরং
দাম বাড়বে
কি না সেই ভয়ে রয়েছি।
সুদেষ্ণা দাস, বধূ
|
উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির
মতো
উত্তরবঙ্গেও শিল্পে কর
ছাড়ের প্রস্তাব
এবারেও
বাজেটে ঠাঁই পেল না।
বিশ্বজিৎ দাস, সম্পাদক, ফোসিন |
শিক্ষা খাতে ২৫ হাজার
কোটি
টাকা বরাদ্দ হওয়ায়
খুশি হয়েছি।
মধুশ্রী চৌধুরী
স্নাতকোত্তরের ছাত্রী |
পরিবেষা কর, ফোন বিল বেড়েছে।
ছোট
ও মাঝারি ব্যবসায় প্রভাব
পড়বে। কিছু নিত্য
প্রয়োজনীয়
জিনিসের দাম কমেছে।
শুভাসিন্ধু দত্ত, ব্যবসায়ী |
জীবনদায়ী ওষুধের দাম কমেছে। ক্যান্সার,
এইডসের চিকিৎসায় ব্যয় কমবে। চিকিৎসক
হিসাবে এটা আমার কাছে স্বস্তির। তবে উত্তরবঙ্গের
শিল্পের জন্য কোনও প্যাকেজ থাকলে খুশি হতাম।
রাজেন্দ্রকুমার অগ্রবাল, চেয়ারম্যান,
সিআইআই, উত্তরবঙ্গ শাখা |
উত্তরবঙ্গকে শিল্প স্থাপনের
ক্ষেত্রে করমুক্ত ঘোষণা করা
না-হলেও সামগ্রিক ভাবে এটাকে
ব্যালান্স বাজেটই বলব।
রাজেন বৈদ্য, সম্পাদক,
কোচবিহার মার্চেন্ট অব কমার্স |
গ্যাস ও সারের উপর থেকে
ভরতুকি তোলা ছাড়া মোটের
উপর এ বারের বাজেট ভাল হয়েছে।
জয়ন্ত কুণ্ডু, সম্পাদক, মালদহ
মার্চেন্ট চেম্বার অব কমার্স |
পিএফের সুদের হার কমানো হল।
আবার আয়কর ছাড়েন ঊর্ধ্বসীমা সামান্যই
বেড়েছে। ওই ঊর্ধ্বসীমা অন্তত তিন
লক্ষ টাকা করা হলে ভাল হত।
রণজিৎ সেন, প্রধানশিক্ষক,
নাটাবাড়ি হাইস্কুল |
প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের
সঙ্গে বাণিজ্য প্রসার নিয়েও
বাজেটে
কোনও উল্লেখ না
থাকায় আমরা হতাশ।
হিমাদ্রী সাহা, সম্পাদক,
ধূপগুড়ি চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ |
সংস্কারের খুব একটা
পদক্ষেপ নেই। সমাজিক
উন্নয়নের দিশা রয়েছে।
সাধন বসু, সম্পাদক,
জলপাইগুড়ি
ব্যবসায়ী সমিতি |
|
|
|
|
|
|