খাদ্য সুরক্ষার লক্ষ্যে কৃষিতে মন কেন্দ্রের |
আগামী লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে কেন্দ্রের মন এ বার কৃষিতে!
গত লোকসভা নির্বাচনে সুফল দিয়েছিল ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের জনপ্রিয়তা। দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে মনমোহন সিংহের সরকার প্রথম থেকেই চাইছে আর্থিক সংস্কারকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সেই রকমই আর একটি কোনও সমাজকল্যাণমূলক প্রকল্পকে ২০১৪-র জন্য হাতিয়ার করতে। কিন্তু একের পর এক কেলেঙ্কারি, দুর্নীতির অভিযোগ আর বিরোধী দল তো বটেই শরিক দলের আপত্তিতে জেরবার মনমোহন সরকার, না পেরেছে সে ভাবে সংস্কারে এগোতে। না পেরেছে নতুন কোনও সামাজিক প্রকল্পকে উল্লেখযোগ্য ভাবে মানুষের সামনে তুলে ধরতে। আটকে গিয়েছে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির প্রবেশ, বিমা-পেনশন ক্ষেত্রের সংস্কার। আর সামাজিক ক্ষেত্রে সরকার ভরসা করতে চাইছে খাদ্য সুরক্ষা আইন করা ও সকলের জন্য নিখরচায় ওষুধ ও স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার উপরে। স্বাস্থ্যে এমন প্রকল্প চালু করার আগে যেমন তার জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তোলা জরুরি, তেমনই দেশের সকলের জন্য খাদ্যের নিশ্চয়তা দিতে গেলে তার জোগানটাও নিশ্চিত করা দরকার।
সেটা বুঝতে পেরেই গত বছর, লোকসভা ভোটের তিন বছর আগে থেকেই পূর্ব ভারতে সবুজ বিপ্লব আনার প্রকল্প চালু করে সরকার। তাতে দেশের এই অংশে গম উৎপাদনে যথেষ্ট সাফল্য পাওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই উৎসাহিত সরকার। ভোটের বছরে অন্তত খাদ্য সুরক্ষা আইন করে আম আদমির মন জয় করতে হলে, তার আগে এই বছরটাই কৃষি উৎপাদনকে এক লাফে অনেকটাই বাড়িয়ে নেওয়ার শেষ সুযোগ। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় তাঁর বাজেটে কৃষি খাতে বরাদ্দ বাড়াতে কার্পণ্য করেননি। পূর্ব ভারতে সবুজ বিপ্লব আনার প্রকল্পে বরাদ্দ ৪০০ কোটি থেকে বাড়িয়ে করেছেন ১ হাজার কোটি টাকা। আর কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়েছেন ১ লক্ষ কোটি টাকা। ২০১২-১৩ সালে কৃষকদের মোট ৫ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। ‘কিষান বিকাশ ক্রেডিট কার্ড’-কে পরিণত করা হচ্ছে স্মার্ট কার্ডে, যা ব্যাঙ্কের এটিএমগুলিতেও ব্যবহার করা যাবে। কৃষক আত্মহত্যার কলঙ্ক ঘোচাতে মহারাষ্ট্রের বিদর্ভে সেচ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে বরাদ্দ করা হয়েছে ৩০০ কোটি টাকা। খাদ্য সুরক্ষার জন্য শস্যই শেষ কথা নয়। প্রোটিনের জোগান বাড়াতে বিশ্বব্যাঙ্কের সহায়তায় ২ হাজার ২৪২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প চালু হচ্ছে ডেয়ারি শিল্পে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর লক্ষ্যে। সেই সঙ্গে উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে মাছের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বাজেটে রাখা হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। কৃষি গবেষণার জন্য সরিয়ে রাখা হয়েছে ২০০ কোটি টাকা। সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নেও দ্রুত এগোতে তৎপর মনমোহন সরকার। ‘তরাণ্বিত সেচ সুবিধা প্রকল্প (এআইবিপি)’-এ কিছু পরিবর্তন ঘটানো হয়েছে। বাজেটে এর জন্য রাখা হয়েছে ১৪ হাজার ২৪২ কোটি টাকা। এই ক্ষেত্রে বরাদ্দ বেড়েছে ১৩%। সেচ প্রকল্পে বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগের ব্যবস্থা করতে সেচ ও জলসম্পদ ব্যবহারের প্রকল্পে বড় অঙ্কের অর্থের সংস্থান করতে আলাদা একটি সংস্থাও (আইডব্লিউআর এফসি) গড়া হচ্ছে। কৃষিতে উন্নতির পাশাপাশি প্রয়োজনীয় একটি জরুরি ক্ষেত্র হল তার উপযুক্ত সংরক্ষণ। সরকারি গুদামে শস্য নষ্ট হওয়ার নজির নেহাত কম নেই। প্রণববাবুর বাজেট জানাচ্ছে, শস্য মজুতের ক্ষমতা বাড়াতে তৎপর হবে কেন্দ্র। ২০১৪-র লোকসভা ভোটে খাদ্য সুরক্ষা আইনের সুফলকে বাজি ধরতে হলে সেটাও কম জরুরি নয়। |