|
|
|
|
|
উন্নয়নে উদ্যোগ স্বাগত,
কর বৃদ্ধি চিন্তা শিল্পমহলের
ইন্দ্রজিৎ অধিকারী • কলকাতা |
|
ঘাটতি কমানো, পরিকাঠামো নির্মাণ এবং সকলের জন্য উন্নয়নের উদ্যোগ স্বাগত। কিন্তু বৃদ্ধির চাকায় গতি ফেরার পথে সমস্যা হতে পারে উৎপাদন শুল্ক ও পরিষেবা কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত। দিনের শেষে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বাজেটকে এই আতস কাচেই দেখছে শিল্পমহল। তাই এ বারের বাজেট সম্পর্কে তাদের প্রতিক্রিয়া আক্ষরিক অর্থেই মিশ্র।
বণিকসভা ও শিল্পপতিদের একটি বড় অংশ মনে করছেন, তেন্ডুলকরের শততম শতরানের দিনেই নিখাদ দ্রাবিড় ঘরানার ইনিংস খেলেছেন প্রণববাবু। যেখানে তাক লাগানো ঘোষণার নতুনত্ব নেই। সংস্কারের চোখ ধাঁধানো প্রতিশ্রুতি নেই। বরং কঠিন পরিস্থিতিতে খুঁটে খুঁটে রান কুড়োনোর মতোই রাজকোষ ও রাজস্ব ঘাটতি হ্রাসে মন দিয়েছেন তিনি। জোর দিয়েছেন পরিকাঠামো নির্মাণে। প্রাপ্য গুরুত্ব পেয়েছে কৃষি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। আগামী দিনে ৯ শতাংশ বৃদ্ধির সড়কে ফিরতে যার প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী।
কিন্তু অপর পক্ষের মতে, দেশের অর্থনীতির চাকায় গতি ফেরানোর মশলাই মজুত নেই এ বারের বাজেটে। গত এক বছরেরও বেশি সময় চড়া সুদ গুণতে গিয়ে ঝিমিয়ে পড়েছে শিল্পোৎপাদনের হার। তাই আশা ছিল, রাজকোষ ঘাটতি কমিয়ে মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানার চেষ্টা করবেন অর্থমন্ত্রী। যাতে আগামী দিনে সুদের হার কমে। সুলভ হয় শিল্প ঋণ। কিন্তু পরোক্ষ কর (উৎপাদন শুল্ক ও পরিষেবা কর দুই-ই) ১০ শতাংশ থেকে বেড়ে ১২ শতাংশ হওয়ার সুবাদে দাম বাড়বে প্রায় প্রতিটি পণ্য ও পরিষেবার। যা ফের উস্কে দেবে মূল্যবৃদ্ধির হারকে। ফলে আপাতত বিফলে যাবে সুদ কমার সম্ভাবনা। চাঙ্গা হবে না শিল্পও।
এই আশঙ্কা যে একেবারে অমূলক নয়, তা স্পষ্ট আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের এমডি এবং সিইও চন্দা কোছরের কথাতেই। তাঁর মতে, এর পর এপ্রিলে সুদ কমার সম্ভাবনা কম। গোদরেজ গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান আদি গোদরেজ, বায়োকনের সিএমডি কিরণ মজুমদার শ, বজাজ অটোর চেয়ারম্যান রাহুল বজাজ, জে কে অর্গানাইজেশনের ডিরেক্টর হর্ষ পতি সিংহানিয়া-সহ অনেকেই মনে করেন, মূল্যস্ফীতির সেই নাছোড় সমস্যাকেই ফের উস্কে দেবে পরোক্ষ কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত।
দেশের এই অগ্রণী শিল্পপতিদের সমালোচনার মূল প্রতিপাদ্য হল, ইউরোপ-সহ বিশ্ব অর্থনীতির টালমাটাল দশায় পায়ের তলা থেকে রফতানির বাজার যে দ্রুত ধসে যাচ্ছে, তা সকলের জানা। তাই এই পরিস্থিতিতে কাঙ্খিত ছিল দেশের বাজারের চাহিদাকে আরও চাঙ্গা করা। কিন্তু উৎপাদন শুল্ক, পরিষেবা কর এবং অনেক ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক বাড়ানোর জেরে সেই সম্ভাবনা মুখ থুবড়ে পড়বে বলেই তাঁদের অভিযোগ। প্রত্যাশিত ভাবেই, এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে গাড়ি, গয়না-সহ বেশ কয়েকটি শিল্প। বাজেটের এই দিকটির সমালোচনা করেছে দেশের তিন প্রধান বণিকসভাই সিআইআই, ফিকি এবং অ্যাসোচ্যাম। আয়করে সামান্য অতিরিক্ত ছাড় দিয়ে এই সমস্যার কোনও সুরাহা হবে না বলেও স্পষ্ট জানিয়েছে তারা। সমালোচনার এই সুর শোনা গিয়েছে বিএনসিসিআই এবং ফেডারেশন অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রেড অ্যাসোশিয়েসন্সের গলাতেও।
কিন্তু বাজেট ঘিরে শিল্পমহলের প্রতিক্রিয়া যে কতটা মেলানো-মেশানো, তা স্পষ্ট সিআইআইয়ের প্রতিক্রিয়া থেকেই। পরোক্ষ কর বৃদ্ধির জন্য স্পষ্টতই বাজেটকে দুষেছেন বণিকসভাটির প্রেসিডেন্ট বি মুথুরামন। অথচ রাজকোষ ঘাটতি হ্রাস, পরিকাঠামোয় লগ্নি বৃদ্ধির মতো উদ্যোগগুলির জন্য সেই প্রণববাবুরই দরাজ প্রশংসা করেছেন তিনি।
এ দিনের বাজেটকে সুচিন্তিত, বাস্তববাদী, ভারসাম্যপূর্ণ বাজেটের শংসাপত্র দিয়েছেন ইনফোসিসের চিফ ফিনান্সিয়াল অফিসার ভি বালকৃষ্ণন। এই একই মতের শরিক হিন্দুজা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান এস পি হিন্দুজা, অম্বুজা রিয়েলটির চেয়ারম্যান হর্ষ নেওটিয়া, আর পি সঞ্জীব গোয়েন্কা গোষ্ঠীর কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েন্কা-সহ বহু শিল্পপতিই। সঞ্জীববাবুকে বিশেষত খুশি করেছে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের উপর বাড়তি জোর। এঁদের সকলেরই মতে, বর্তমান আর্থ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এর থেকে ভাল কিছু করা সম্ভব ছিল না অর্থমন্ত্রীর পক্ষে। এ বিষয়ে কিছুটা একমত এমসিসি এবং ভারত চেম্বার অফ কমার্স-ও। তাই দিনের শেষে শিল্পমহলের কাছে বাজেট প্রায় এ দিনের ভারত-বাংলাদেশ ক্রিকেট ম্যাচের প্রতিফলন। যেখানে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বশীল ঘোষণার আলোর পাশেই রয়েছে কর বৃদ্ধির ‘অন্ধকার’। সচিনের মাইলফলক সেঞ্চুরির দিনেও ভারতের ম্যাচ হারার মতো। |
|
|
|
|
|