|
|
|
|
ভোটে খারাপ ফলের জের |
কালো টাকা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ বাজেট অধিবেশনেই |
দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় • নয়াদিল্লি |
পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনে ফল খারাপের পর দুর্নীতির অভিযোগের ক্ষত মেটাতে বাজেটকে ব্যবহার করলেন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। লালকৃষ্ণ আডবাণীদের বহু বছরের দাবি মেনে শেষ পর্যন্ত কালো টাকা নিয়ে সংসদের চলতি অধিবেশনেই একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হবে বলে ঘোষণা করলেন তিনি।
উত্তরপ্রদেশের ফল প্রকাশের এক দিন পরেই দশ জনপথের বাইরে এসে সনিয়া গাঁধী বলেছিলেন, দুর্নীতি রোধে মনমোহন সিংহ সরকার যা পদক্ষেপ করেছেন, আর কেউ তা করেনি। ভোটের ফল পর্যালোচনা করে কংগ্রেস নেতৃত্ব বুঝতে পেরেছেন, মূল্যবৃদ্ধি আর দুর্নীতি নিয়ে লাগাতার অভিযোগ নির্বাচনেও আঁচ ফেলেছে। যার ফলে নির্বাচনগুলিতে সে ভাবে দাগ কাটতে পারেনি কংগ্রেস।
ভোটের পরই সনিয়া চাইছিলেন, শুধু পদক্ষেপ করলেই হবে না, সেটি বারবার বিভিন্ন মঞ্চে প্রচারও করতে হবে। সে কারণে বাজেটেও ফের নতুন করে বার্তা দেওয়ার তাগিদ ছিল প্রণববাবুর। বাজেটে কালো টাকা ও অপচয় রুখতে এ যাবৎ কী কী পদক্ষেপ করেছেন, তার যেমন বর্ণনা দেন, তেমনই ভবিষ্যতে আরও কড়া দাওয়াইয়ের পথও বাতলে দেন তিনি। একই সঙ্গে বিরোধীদের মুখ বন্ধ করতে সংসদের চলতি অধিবেশনেই কালো টাকা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের ঘোষণা করেন।
অর্থ পাচার নিয়ন্ত্রণ আইন, ৮২টি দেশের সঙ্গে দ্বৈত কর ব্যবস্থা পরিহার চুক্তি, ১৭টি দেশের সঙ্গে কর সংক্রান্ত তথ্য বিনিময় চুক্তি, বিদেশি ব্যাঙ্কে ভারতীয়দের সম্পত্তির খতিয়ান সংগ্রহের পাশাপাশি কালো টাকা উদ্ধারে একগুচ্ছ নতুন প্রস্তাবও দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি জানান, এ বার থেকে বিদেশে সম্পত্তি থাকলে সেটি জানানো বাধ্যতামূলক হবে। প্রয়োজনে ১৬ বছরের পুরনো রেকর্ড বার করা হবে। জমি ছাড়া অন্য সম্পত্তি হস্তান্তর করলেও কর দিতে হবে। শেয়ারহোল্ডারের থেকে অর্থ পেলে ও বাজারের দাম থেকে বেশি মূল্যে শেয়ারের প্রিমিয়াম পেলেও কড়াকড়ি হবে। দু’লক্ষ টাকার বেশি নগদে গয়না কিনলেও উৎসমূলে কর সংগ্রহ করা হবে। কোনও টাকা, বা ধার নেওয়া টাকা, বিনিয়োগ, খরচের যদি হিসাব দেওয়া না হয়, তা হলে সরাসরি ৩০ শতাংশ হারে কর কেটে নেওয়া হবে। সেই ব্যক্তির আয় কত, তার পরোয়া করা হবে না।
অর্থমন্ত্রীর এই প্রস্তাব নিয়ে ইতিমধ্যেই অবশ্য রাজধানীর অলিন্দে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, প্রথমে কোনও সম্পত্তি ঘোষণা না করার পর যদি সেই ব্যক্তি কোনও রকম জরিমানা না দিয়ে স্রেফ ৩০ শতাংশ কর দিয়েই ছাড় পেয়ে যান, তা হলে কী অর্থমন্ত্রী ঘুরপথে ‘অ্যামনেস্টি’ প্রকল্প ঘোষণা করলেন?
অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা অবশ্য বলছেন, ‘না।’ তাঁদের মতে, কালো টাকা রুখতে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে দ্বিমুখী রণকৌশল রয়েছে। ইউরোপীয় দেশগুলি আর্থিক সঙ্কট দ্রুত মেটার নয়, আমেরিকার অর্থনীতিও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি, জাপানের হালও তথৈবচ এই পরিস্থিতিতে বাজেটে দেশি-বিদেশি শিল্পমহলকে একটি সদর্থক বার্তা দেওয়াও উদ্দেশ্য ছিল।
খোদ প্রণববাবুও বলেন, “অর্থমন্ত্রী হিসাবে গোটা দুনিয়াকে আমি বার্তা দিতে চাই, ভারত বিনিয়োগের জন্য আদর্শ নিরাপদ আশ্রয়। এখানে বহু দলের সরকার রয়েছে। গণতন্ত্র রয়েছে। সরকারে যেই আসুক না কেন, আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতা থেকে কখনও পিছু হঠে না। তার থেকেও বড় কথা, ভারতের মতো এত বিশাল একটি স্থিতিশীল বাজার রয়েছে। বাজেটে তাই দেশীয় ব্যবস্থাকে চাঙ্গা করার পাশাপাশি বিদেশি মহলকেও বার্তা দিতে চেয়েছি আসুন, এ দেশে বিনিয়োগ করুন।”
প্রণববাবু মনে করেন, কালো টাকা উদ্ধারের পিছনে যেমন একটি রাজনৈতিক দিক আছে, তেমনই একটি অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটও রয়েছে। ভর্তুকির বোঝা কমানোর পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকল্পে অপচয় রোধ করাও সরকারের লক্ষ্য। আধার কার্ড (ইউআইডি) চালু করে বিভিন্ন গ্রামীণ প্রকল্পে অপচয় রোধ করা, ভর্তুকি সরাসরি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়ার উপায় বাতলানো হয়েছে বাজেটে। স্বচ্ছতা বাড়াতে নতুন কিছু আইনও আনা হবে। এ বছর অগস্টের মধ্যে কর ফাঁকি রুখতে একটি জাতীয় তথ্য সহযোগিতা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। রাজনৈতিক দলগুলির কাছেও এ ব্যাপারে পূর্ণ সহযোগিতা চেয়েছেন প্রণববাবু। |
|
|
|
|
|