১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির অভিযোগ উঠল ময়ূরেশ্ব থানার দু’টি পঞ্চায়েত এলাকায়। কোথাও ভুয়ো টিপ ছাপ দিয়ে, কোথাও বা কাজ না করিয়ে টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রধান, গ্রামোন্নয়ন সমিতির সচিব কিংবা সুপার ভাইজারের বিরুদ্ধে। বিডিও-র কাছে লিখত ভাবে তদন্তের দাবি করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তির আর্জি জানিয়েছেন বাসিন্দারা। বিডিও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর জানুয়ারি মাসে দাসপলশা পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে বীরনগরী গ্রামের মোড়ল পুকুরের পাড় সমান করার জন্য ১০০ দিনের প্রকল্পে ৮৩ হাজার ২০০ টাকা বরাদ্দ হয়। ওই কাজ দেখাশোনার জন্য বিশ্বজিৎ মণ্ডলকে সুপারভাইজার নিয়োগ করা হয়। সদস্য সংখ্যার নিরিখে পঞ্চায়েত সিপিএমের। কিন্তু তফসিলি মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষিত হওয়ায় প্রধান হয়েছেন বিজেপির প্রতিমা বাগদি। অভিযোগ, গ্রামোন্নন সমিতিকে অন্ধকারে রেখে সুপারভাইজার ও প্রধান যোগসাজোস করে প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করছেন। গ্রামোন্নয়ন সমিতির সভাপতি তথা সিপিএমের পঞ্চায়েত সদস্য বৈদ্যনাথ মণ্ডল বলেন, “বরাদ্দ টাকায় ৬৪০ জন মজুরের কাজ করার কথা। কিন্তু কাজ করানো হয়েছে ২০৪ জনকে। বাকি টাকা প্রধানের যোগসাজোসে কাজ করেনি এমন মজুরের নামে কিংবা তিন দিন কাজ করা মজুরের নামে সাত দিনের ভুয়ো মাস্টাররোল করে টিপ ছাপ দিয়ে টাকা তুলে নিয়েছেন সুপারভাইজার।”
অভিযোগ অস্বীকার করে বিশ্বজৎবাবু বলেন, “প্রকল্পে যাঁরা যতদিন কাজ করেছেন তাঁরা তত দিনের মজুরি পেয়েছেন। উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে ওই সব অভিযোগ করা হচ্ছে।” প্রধান প্রতিমা বাগদি বলেন, “গ্রামোন্নয়ন সমিতিকে নিয়ে কাজের ব্যাপারে জানানো হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করেনি। এখন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।” একই বক্তব্য পঞ্চায়েতের এগজিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট নন্দ মালেরও।
একই অভিযোগ উঠেছে সিপিএম পরিচালিত কলেশ্বর পঞ্চায়েতেও। ওই পঞ্চায়েতের ছামনা গ্রামে কাঁদর সংস্কার, ডাঙা সমতল, রাস্তা তৈরির জন্য দেড় লক্ষের বেশি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। বেশকিছু জবকার্ডধারীর অভিযোগ, গ্রামোন্নয়ন সচিব তথা পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান মিহির ঘোষ, জব ওয়ার্কার কাশীনাথ রায় যোগসাজোস করে তিনটি প্রকল্পে কাজ করেননি এমন জবকার্ডধারীর নামে টাকা তুলে নিয়েছেন। তৃণমূলের কলেশ্বর অঞ্চল কমিটির সভাপতি প্রমোদ রায়ের অভিযোগ, “সচিবের ছেলে অতীশ ঘোষ, গ্রামোন্নয়ন সমিতির সদস্য সজল অধিকারীর কাকা লালমোহম অধিকারী, জব ওয়ার্কারের ঘনিষ্ঠ অজিত কোনাই-সহ বেশ কিছু জবকার্ডধারী কোনও কাজই করেননি। কিন্তু তাঁদের নামে টাকা তোলা হয়েছে। অথবা বোঝাপড়ার ভিত্তিতে টাকা পাইয়ে দিয়েছেন সচিব ও জব ওয়ার্কার।” অতীশবাবুরা অবশ্য কাজ করেছেন বলে দাবি করেছেন। একই বক্তব্য কাশীনাথবাবু ও মিহিরবাবুর। তাঁরা বলেন, “প্রতি ১০০ জন মজুরের পানীয় জল সরবহারের জন্য ১ জন মজুর বরাদ্দ। যাঁদের নামে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ, তাঁরা মাটি কাটার কাজ না করলেও পানীয় জল সরবরাহের কাজ করেছেন। রাজনৈতিক কারণে তৃণমূল মিথ্যা অভিযোগ করছে।” প্রধান দশরথ মণ্ডল বলেন, “অভিযোগ প্রসঙ্গে কিছু জানি না। খোঁজ নিতে হবে।” ময়ূরেশ্বর ২ ব্লকের বিডিও বাবুলাল মাহাতো বলেন, “দাসপলশা পঞ্চায়েতের বিষয়টি তদন্ত চলছে। কলেশ্বরের অভিযোগ পাইনি। পেলে তদন্ত হবে। দুর্নীতি প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |