বিনা চিকিৎসায় শিশু মৃত্যুর অভিযোগকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার সকালে উত্তাল হয়ে ওঠে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট হাসপাতাল। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ৬ মাস বয়সী শিশুটির নাম সুফল মার্ডি। বাড়ি হিলি থানার আগ্রা এলাকার বইগ্রামে। তার বাড়ির লোকজনদের অভিযোগ, বুধবার রাত ৮টা নাগাদ ভর্তি করানোর পরে রাত ১১টা পর্যন্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক না-দেখায় শিশুটির বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে। এদিন সকালে মৃত শিশুটিকে নিয়ে বাড়ির লোকজন হাসপাতালের সামনে গাছতলায় বসে কাঁদছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দারা তা দেখে সেখানে জড়ো হন। তার পরেই শুরু হয় বিক্ষোভ। শহরের রঘুনাথপুর ট্যাঙ্ক মোড়ে সকাল ৮টা থেকে রাস্তা অবরোধ শুরু হয়। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনেও। সেই সময়ে পুলিশ পরিস্থিতি আয়ত্বে আনতে লাঠি চালায় বলে অভিযোগ। তাতে কেউ জখম হওয়ার খবর অবশ্য মেলেনি। পুলিশের তরফে লাঠি চালানোর কথা অস্বীকার করা হয়েছে। পরে হাসপাতালের সুপার ঘটনার তদন্তের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি আয়ত্বে আসে। শিশুর দাদু এই ব্যাপারে হাসপাতালের সুপারকে লিখিত অভিযোগ জানান। |
জেলার ভারপ্রাপ্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গৌরব রায় বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত শুরু করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর বেশি কিছু বলব না।” অভিযোগ পেয়ে ঘটনার বিশদে খোঁজ নিচ্ছেন রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা বালুরঘাটের বিধায়ক তথা রাজ্যের কারামন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তীও। তিনি বলেন, “খোঁজ নিচ্ছি।” হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার শিশুটিকে চিকিৎসক অচিন্ত্য বিশ্বাসের অধীনে ভর্তি করানো হয়। এদিন সকালে তিনিই শিশুর ডেথ সার্টিফিকেট লেখেন। অভিযোগ, ওই ডেথ সার্টিফিকেটেও মৃত্যুর কারণ লেখা হয়নি। চিকিৎসক অচিন্ত্যবাবু বলেন, “স্বাস্থ্য দফতরে আইন হয়ে গিয়েছে দফতরের নির্দিষ্ট আধিকারিক ছাড়া কেউ মন্তব্য করবেন না। আমিও এর বেশি কিছু বলব না।” ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ কেন লেখা নেই তা নিয়েও মম্তব্য করতে নারাজ তিনি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, হিলি থানার আগ্রা এলাকার বইগ্রামের বাসিন্দা সাবিত্রী মার্ডি তাঁর ছ’মাসের শিশুপুত্রকে নিয়ে বুধবার রাত ৮টা নাগাদ হিলি গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে আসেন। সঙ্গে তাঁর বৃদ্ধ বাবা লাপাং মার্ডি ছিলেন। শিশুটির প্রস্রাব হচ্ছিল না। মা সাবিত্রী দেবীর অভিযোগ, সারা রাত বিনা চিকিৎসায় শিশুকে ফেলে রাখা হয়। তিনি বলেন, “ছেলের প্রস্রাব হচ্ছিল না। রাত ১১টা নাগাদ ছেলে যন্ত্রণায় ছটফট করতে শুরু করে। রাতে নার্স আয়াদের সামনে ছেলে মরে গেল। বার বার নার্সদের হাতেপায়ে ধরে ডাক্তারকে ডাকতে বলি। ওঁরা কোনও কথা শোনেননি। বাচ্চাকেও দেখতে সামনে আসেননি।” তাঁর অভিযোগ, ভোর পাঁচটা নাগাদ ডেথ সার্টিফিকেট হাতে দিয়ে ওয়ার্ড থেকে তাঁকে বার করে দেওয়া হয়। হাসপাতালের নার্স ও চিকিৎসকদের সম্পর্কে একই অভিযোগ জানিয়েছেন রাতে ওই হাসপাতালে কাটানো অন্য দুই রোগীর পরিবারের লোকেরাও। |
তপন থানার গুরইল এলাকার বাসিন্দা মকবুল হোসেন এবং তপনের হজরতপুরের হায়দার আলি সরকার এদিন পুলিশের সামনেই হাসপাতাল সুপারের কাছে অভিযোগ করে বলেন, “আত্মীয়রা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকায় বুধবার রাতে আমরা হাসপাতালের মধ্যে ছিলাম। রাত ১১টা নাগাদ ওই মহিলার কান্নাকাটি শুনে আমরা ওয়ার্ডে যাই। সে সময় এক নার্সকে তাচ্ছিল্য করে বলতে শুনি, কে ভিড়বে ওঁর কাছে। শিশুটির অবস্থার অবনতি হতে দেখেও ডাক্তারকে ‘কল বুক’ পাঠাতে দেখিনি।” দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক দুর্গাদাস গোস্বামী বলেন, “সুপারের সঙ্গে কথা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে ২৪ ঘন্টার মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলেছি।”
|
ছবি দু’টি অমিত মোহান্তের তোলা। |