কলকাতা হাইকোর্টের এজলাস ভিড়ে ভিড়াক্কার। ঢাকুরিয়ায় আমরি হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ডে ধৃত সেখানকার কর্তাদের জামিন নিয়ে শুনানি চলছে।
হঠাৎ মূর্তিমান ছন্দপতন! দেখা গেল, দর্শকদের জন্য নির্দিষ্ট বেঞ্চে দাঁড়িয়ে আছেন এক ব্যক্তি।
হঠাৎ তালভঙ্গও! এজলাসেই বেজে উঠল একটি মোবাইল।
আসনে বসে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলেন বিচারপতি অসীম রায় ও বিচারপতি অসীম রায় (দু’জনের একই নাম)। বিচারপতিদের সামনে নির্ধারিত আসনে বসে আবেদনকারী ও সরকার পক্ষের প্রায় ১৫ জন আইনজীবীও সচকিত হয়ে উঠলেন। বৃহস্পতিবার এই মামলায় সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি,
আমরি-কর্তাদের আত্মীয়বন্ধু, অন্যান্য আইনজীবী সকলেই শুনছিলেন আবেদনকারীদের পক্ষে প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল বলাই রায়ের সওয়াল। তিনি তখন বলে চলেছেন, আমরির অগ্নিকাণ্ড ও মৃত্যু নিয়ে পুলিশ চার্জশিট দিয়েছে। অথচ সরকার পক্ষ আদালতে ধৃতদের বিরুদ্ধে যে-সব অভিযোগ এনেছে, চার্জশিটে তার কোনও উল্লেখ নেই। চার্জশিটে বলা হয়েছে, আগুনজনিত দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা যায় না। ঘটনা ঘটেছে দায়িত্ব পালনে আমরি-কর্তৃপক্ষের গাফিলতির জন্য। |
চার্জশিটের বিরুদ্ধে অভিযুক্তদের কৌঁসুলির এই ‘চার্জ’ বা অভিযোগের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তেই এজলাসে বেজে ওঠে মোবাইল। প্রায় একই সময়ে দেখা যায়, দর্শকদের বেঞ্চে এক জন দাঁড়িয়ে আছেন। মাঠে খেলা চলাকালীন অতি উৎসাহে কোনও কোনও দর্শক যেমন গ্যালারির আসনে উঠে দাঁড়ান, অনেকটা তেমনই। যিনি বেঞ্চে দাঁড়িয়ে আছেন, বেজে ওঠা মোবাইলটি অবশ্য তাঁর নয়। এই দু’টি ঘটনায় ক্ষুব্ধ বিচারপতি জানতে চান, কার মোবাইল? জানতে চান, এজলাসের মধ্যে দর্শকাসনে উঠে দাঁড়ানো লোকটিই বা কে?
বেঞ্চে দাঁড়ানো লোকটিকে বিচারপতির সামনে হাজির করানো হয়। বিচারপতি প্রশ্ন করেন, নাম কী?
কাঁচুমাচু মুখে সেই দর্শক বললেন, “বিনোদ শরাফ।”
প্রশ্ন: হাইকোর্টে এসেছেন কেন?
বিনোদ: ভাইয়া বলল, ‘কোর্টে চল’। তাই...।
প্রশ্ন: ভাইয়া কোর্টে এসেছে কেন?
বিনোদ: দেখতে।
প্রশ্ন: বেঞ্চে দাঁড়িয়ে ছিলেন কেন?
বিনোদ: এত ভিড়ে দেখতে অসুবিধা হচ্ছিল। ভাল করে দেখব বলেই বেঞ্চে উঠেছিলাম।
এর পরেই বিনোদের ‘ভাইয়া’ রমেশ শরাফ কাছে আসেন। তিনিই বিনোদকে মামলা দেখার জন্য হাইকোর্টে এনেছিলেন। যাঁর মোবাইল বেজেছিল, তাঁকেও বিচারপতির সামনে হাজির করানো হয়। বিচারপতি পুলিশ ডাকেন। আদালতের সময়ও তত ক্ষণে প্রায় শেষ। পুলিশ এলেও বিনোদ-রমেশ এবং মোবাইলের মালিক ক্ষমা চাওয়ায় বিচারপতি তিন জনকেই ছেড়ে দেন।
আমরির দুই কর্তা রাধেশ্যাম গোয়েনকা ও প্রশান্ত গোয়েনকা জামিনের আবেদন জানিয়ে হাইকোর্টে মামলা করেছেন। আজ, শুক্রবার ফের শুনানি হবে। ওই দুই আমরি-কর্তা ১০০ দিনের বেশি জেলে আছেন। বলাইবাবু বারবার বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে ‘বেল ইজ ল, নট জেল’।
অর্থাৎ জামিনটা হচ্ছে আইন, তা কখনওই জেল নয়। জেল বা কারাদণ্ড হচ্ছে বিচার শেষে আদালতের রায় অনুযায়ী শাস্তি। অথচ তদন্ত শেষের পরেও বিচার ছাড়াই ওই আমরি-কর্তাদের দীর্ঘদিন ধরে জেলে আটকে রাখা হয়েছে। জামিন হচ্ছে না। সরকার পক্ষের আইনজীবীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ জামিনের বিরোধিতায় সওয়াল করবেন তাঁরা।
|
এ দিনই আমরির ‘ফেরার’ তিন ডিরেক্টর রাহুল তোদি, আদিত্য অগ্রবাল ও প্রীতি সুরেখার আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে নিম্ন আদালত। আলিপুরের জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক অসিত দে তাঁর নির্দেশে জানান, ওই হাসপাতালে কী ভাবে আগুন লেগেছিল, তা জানতে ওই তিন জনকে জেরা করার প্রয়োজন আছে। আদালতের এই আদেশের পরে ওই তিন আমরি-কর্তা আত্মসমর্পণ করতে অথবা হাইকোর্টে আবেদন জানাতে পারেন। সোমবার তিন অভিযুক্তের আগাম জামিন চেয়ে তাঁদের আইনজীবীরা দাবি করেন, হাসপাতালের প্রশাসনিক ব্যাপারে ওই তিন কর্তার কোনও দায়িত্ব ছিল না। বুধবার সরকারি আইনজীবী ওই তিন জনের আগাম জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করেন। তিনি জানান, পুলিশ তিন ফেরার আমরি-কর্তার বাড়িতে আদালতের সমন নিয়ে গিয়েও তাঁদের দেখা পায়নি। |