পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক পালাবদল হলেও সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি এখনও তাদের সদস্য-সমর্থক বলে কো-অর্ডিনেশন কমিটির দাবি। অথচ গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সিটু-সহ ১১টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের ডাকা ধর্মঘটের দিনে ‘কাজে উপস্থিত’ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থাগ্রহণের কথা ঘোষণা করেও পিছিয়ে আসতে হল সিপিএমের কর্মী সংগঠনটিকে। কর্মীমহল-সূত্রের ব্যাখ্যা, সংগঠনে ভাঙন রুখতেই তারা ‘এক পা এগিয়ে দু’পা পিছিয়ে আসতে’ বাধ্য হয়েছে।
শুধু তা-ই নয়। সে দিন কাজে অনুপস্থিত কো-অর্ডিনেশনের বহু সদস্য-সমর্থক সংগঠনের নীতির বিরুদ্ধে গিয়ে সরকারের শো-কজের জবাবে এক দিনের ‘ছুটি’ (সিএল) চেয়েছেন। ফলে নেতৃত্ব যথেষ্ট অস্বস্তিতে। কমিটির সাধারণ সম্পাদক অনন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য প্রকাশ্যে বলছেন, “ব্যক্তিগত ভাবে আমি শো-কজের জবাবে ছুটি চাইব না। সরকার এক দিনের বেতন কাটলে গর্ব বোধ করব। কিন্তু সংগঠনের অন্য এক জন তা না-ও মনে করতে পারেন।”
বাম-জমানায় এমন সব দিনে গরহাজির সরকারি কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আগেই জানিয়ে দেয়, ওই দিন কারও ছুটি মঞ্জুর হবে না। ধর্মঘটের পরে সরকার ঘোষণা করে, অনুপস্থিত কর্মীদের এক দিনের বেতন কাটা হবে, চাকরির মেয়াদও এক দিন কমবে। এ হেন ‘রীতিবিরুদ্ধ’ পরিস্থিতির মুখে গোড়ায় ‘কঠোর’ থাকলেও ওই দিন কর্মী-উপস্থিতির চেহারা দেখে কো-অর্ডিনেশন কার্যত ঢোঁক গিলতে শুরু করেছে। কী রকম?
যেমন প্রথমে বলা হয়েছিল, তাদের সদস্যেরা শো-কজের জবাবে লিখবেন, ‘ধর্মঘট সমর্থন করেই কাজে আসিনি।’ এ দিকে সংগঠনের বিভিন্ন মহল থেকে পাঠানো উত্তরের প্রতিলিপি অনুযায়ী, ‘ধর্মঘটের জন্য কাজে আসতে পারিনি’ লিখতে হবে। সিএল চাওয়ার কথাও তাতে
রয়েছে। অনন্তবাবু অবশ্য বৃহস্পতিবার বলেন, “কে কী লিখবেন, তা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। আমরা ছুটির আবেদনের বিরুদ্ধে।” অর্থাৎ তিনি মেনে নিচ্ছেন, নীতিগত ভাবে উচিত না-হলেও অনেকে ছুটির আবেদন করছেন। এ দিকে আর এক কর্মী সংগঠন নবপর্যায়ের অভিযোগ, কো-অর্ডিনেশন ভিতরে ভিতরে সদস্যদের ছুটির আবেদন করারই পরামর্শ দিচ্ছে।
পাশাপাশি সে দিন ‘অফিস করা’ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ‘ব্যবস্থা’র কথা ঘোষণা করেও পিছিয়ে এসেছে কো-অর্ডিনেশন। কমিটি-সূত্রের খবর: গত ৫ মার্চ কর্মীদের সাকুর্লার দিয়ে (কো-অর্ডি-৪/১২) সাধারণ সম্পাদক বলেছিলেন, ‘সংগঠনের অল্প কিছু নেতা-কর্মীও ধর্মঘটের দিন হাজিরা দিয়েছেন বা উক্ত পরিস্থিতিতে শুধু নিজেকে রক্ষার তাগিদে নানা কৌশলে আগে-পরে ছুটির সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেছেন।.. এঁদের মধ্যে সংগঠন/সমিতির সর্বোচ্চ স্তর থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন স্তরের কমিটিগুলির সভাপতি/সম্পাদক/আহ্বায়ক স্তরের নেতা-কর্মী কেউ থাকলে তাঁদের অন্তত এখন যেন উক্ত দায়িত্ব পালন না-করানো হয়।’ কিন্তু দু’দিন পরে ফের সার্কুলার দিয়ে সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ওই নেতা-কর্মীদের সংগঠনের সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি বুঝিয়ে দিয়ে সংশ্লিষ্ট কমিটির নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করার অনুরোধ জানাতে হবে।
আগের অবস্থান বদলে গেল কেন?
অনন্তবাবুর ব্যাখ্যা, “আমাদের সংগঠনে কেউ পদে নির্বাচিত হন সম্মেলন থেকে। তাই পরের সম্মেলনের আগে তাঁকে পদচ্যুত করা যায় না। অন্য সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” কো-অর্ডিনেশনের কিছু নেতা অবশ্য জানাচ্ছেন, সংগঠনের নীতি-বিরোধী কাজ করলে মাঝপথেও কাউকে পদচ্যুত করা যায়। |