কেন্দ্রের অতিরিক্ত বরাদ্দ অমিল, প্রশ্ন ২ টাকা কেজি চাল নিয়ে
দারিদ্রসীমার নিচে থাকা মানুষদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার অতিরিক্ত বরাদ্দ মঞ্জুর না করায় আগামী ১ এপ্রিল থেকে রাজ্যের ২০ লক্ষ মানুষ ২ টাকা কিলোগ্রাম দরে চাল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবেন। অনুন্নয়ন এবং অশান্তিতে বিধ্বস্ত জঙ্গলমহল, পাহাড়, আয়লা-দুর্গত এলাকা ও চা বাগানে দারিদ্রসীমার নিচে থাকা মানুষদের সমস্যা হবে বেশি। বৃহস্পতিবার এ কথা জানিয়েছেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি জানান, প্রতি বছরই কেন্দ্রীয় সরকার দারিদ্রসীমার নীচে থাকা মানুষদের জন্য সাধারণ রেশন বরাদ্দের সঙ্গে অতিরিক্ত চাল বরাদ্দ দেয়। এ বার সেই চাল দেওয়া হবে না বলে সোমবার কেন্দ্রীয় সরকারের খাদ্য মন্ত্রক থেকে রাজ্যকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সংঘাত যখন তুঙ্গে, তখন খাদ্যমন্ত্রকের ওই চিঠিতে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক আরও ‘জটিল’ হল বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং জঙ্গলমহল, পাহাড়, আয়লা-দুর্গত এলাকা ও চা বাগানে দারিদ্রসীমার নিচে থাকা মানুষদের ২ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। সেই লক্ষ্যে রেশন কার্ড তৈরির প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকার দারিদ্রসীমার নিচে থাকা মানুষদের জন্য অতিরিক্ত বরাদ্দ মঞ্জুর না করায় মুখ্যমন্ত্রীর কথার খেলাপ হয়ে যেতে পারে। যে কারণে জ্যোতিপ্রিয়বাবু এ দিন অভিযোগ করেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে জঙ্গলমহল,পাহাড়, আয়লা-বিধ্বস্ত এলাকায় শান্তি আনতে যে প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে, তাকে বানচাল করতেই কেন্দ্রীয় সরকার পরিকল্পিত ভাবে চাল না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” জ্যোতিপ্রিয়বাবুর আরও দাবি, পশ্চিমবঙ্গ বঞ্চিত হলেও মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, গুজরাত কিন্তু দারিদ্রসীমার নিচে থাকা মানুষদের জন্য অতিরিক্ত বরাদ্দ পেয়েছে।
জ্যোতিপ্রিয়বাবু জানান, মাওবাদী-প্রভাবিত জঙ্গলমহলে ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার ভর্তুকি দিয়ে ২ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়ার কাজ চালাচ্ছে। একই ভাবে চাল দেওয়া হচ্ছে পাহাড়ে এবং বন্ধ চা বাগান এলাকাতেও। ঠিক হয়েছে, আয়লা-বিধ্বস্ত এলাকায় দুই ২৪ পরগনা মিলিয়ে প্রায় ৪ লক্ষ পরিবারকে আগামী ১ বৈশাখ থেকে ৬ মাসের জন্য ২ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়া হবে। খাদ্যমন্ত্রী আরও জানান, রাজ্যে দারিদ্রসীমার নিচে থাকা মানুষদের সস্তায় চাল দেওয়ার চাহিদা মেটাতে বছরে অতিরিক্ত ১৭ লক্ষ ৭৮ হাজার মেট্রিক টনের কিছু বেশি চাল এবং ২৬ লক্ষ ৩৮ হাজার মেট্রিক টন গমের প্রয়োজন। খাদ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, গত বছর কেন্দ্র ন’মাসে অতিরিক্ত ২ লক্ষ ৪৪ হাজার ৫১২ মেট্রিক টন চাল দিয়েছিল। সেখানে এ বছর তারা ন’মাসে অতিরিক্ত ১ লক্ষ ৫২ হাজার ৬৪০ মেট্রিক টন চাল দিয়েছে।
অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় বরাদ্দ না পেলে যে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ সস্তায় চাল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবেন, সে কথা মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন জ্যোতিপ্রিয়বাবু। কেন্দ্রীয় সরকারের ওই বঞ্চনার প্রতিবাদ জানাতে মুখ্যমন্ত্রীরই পরামর্শে তৃণমূল সাংসদরা দিল্লিতে কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রী কে ডি টমাসের সঙ্গে দেখা করতে চান। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে খাদ্যমন্ত্রী এ দিনই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী তথা তৃণমূল সংসদীয় দলের মুখ্য সচেতক সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রী সম্প্রতি কলকাতায় এসে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েও দেখা পাননি। ফলে এখন তৃণমূল সাংসদরা কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তিনি তাঁদের সময় দেবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে তৃণমূলের অন্দরেই।

১০০ দিনের কাজ, হাজার কোটি চেয়ে রাজ্যের চিঠি কেন্দ্রকে
গত আর্থিক বছরে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে ২৮৪০ কোটি ৬১ লক্ষ টাকা পেয়েছিল রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতর। ওই প্রকল্পে কাজের গড় বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রের কাছে আরও এক হাজার কোটি টাকা চাইল রাজ্য। বুধবার কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশকে এই অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। গত বারে পাওয়া টাকার ৭০ শতাংশেরও বেশি খরচ করা হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে জানিয়ে দিয়েছেন সুব্রতবাবু। তাঁর হিসেব, তিনি পঞ্চায়েত দফতরের দায়িত্ব নেওয়ার দু’মাসের মধ্যে এ রাজ্যে ওই প্রকল্পে কাজের হার গড়ে ২৬ দিন করা গিয়েছে। সেই গড় অন্তত ৪০ দিন করতে আরও টাকার দরকার। তাই নতুন অর্থবর্ষ শুরু হওয়ার আগেই এক হাজার কোটি টাকা চাওয়া হল বলে সুব্রতবাবু জানান। রাজ্যের পঞ্চায়েত এলাকায় মোট ৭৩০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরির সবিস্তার প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর)-ও এ দিন দিল্লিতে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রী জানান, এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কের সাহায্যপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা (পিএমজিএসওয়াই) প্রকল্পে ৫২২ কিলোমিটার এবং কেন্দ্রের নিজস্ব পিএমজিএসওয়াই প্রকল্পে ২৩০ কিলোমিটার রাস্তার ডিপিআর পাঠানো হয়েছে। যদিও জাতীয় গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন সংস্থার বেঁধে দেওয়া তালিকা অনুযায়ী চলতি অর্থবর্ষের মধ্যে এক হাজার কিলোমিটার সড়কের ডিপিআর পাঠানোর কথা ছিল। দু’টি প্রকল্প থেকে সড়কের জন্য মোট ৩৬৫ কোটি টাকা চাওয়া হচ্ছে বলে পঞ্চায়েত দফতরের সূত্রের খবর।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.