এলাকার ক্ষু্দ্র চাষিদের স্বার্থে বছর দশেক আগে হিমঘর তৈরির জন্য শিলান্যাস হয়েছিল। চাষিরা আশা করেছিলেন, তাঁদের ফসল বাঁচবে। বাজারে ফসলের উপযুক্ত দাম পাবেন তাঁরা। কিন্ত তাঁদের আশায় জল ঢেলে আজও হিমঘর চালু হয়নি। এই অবস্থায় এলাকার চাষিরা হতাশ।
উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার কল্যাণগড়ে ২০০২ সালের ১৯ অগস্ট একটি ফল ও সবজি সংরক্ষণের বহুমুখী হিমঘর’-এর শিলান্যাস হয়েছিল। শিলান্যাস করেছিলেন তদানীন্তন বামফ্রন্ট সরকারের পুর বিষয়ক দফতরের প্রতিমন্ত্রী অঞ্জু কর। উপস্থিত ছিলেন খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যানপালন দফতরের মন্ত্রী শৈলেন সরকার ও পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান সিপিএমের শর্মিষ্ঠা দত্ত। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের উদ্যোগে এবং পুর দফতরের আর্থিক সহায়তায় হিমঘরের তৈরির কাজ শুরু করেন অশোকনগর-কল্যাণগড় পুর কর্তৃপক্ষ।
সম্প্রতি ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল হিমঘরের নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। যদিও স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই ছাদ দিয়ে জল পড়তে শুরু করেছে। এ ছাড়া চারপাশ আগাছায় ভরে গিয়েছে। গেটে তালা ঝুলছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভবনটির অবস্থা খারাপ হতে শুরু করেছে। কেন তৈরি হয়েও হিমঘর চালু করা গেল না সে ব্যাপারে শর্মিষ্ঠাদেবী বলেন, “আমরা হিমঘর তৈরির কাজ শেষ করেছিলাম। পুরসভার পক্ষে একক ভাবে হিমঘরটি চালানো সম্ভব ছিল না। তাই লিজ দেওয়ার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিলাম। কিন্তু প্রথমে সুবিধামতো দাম পাওয়া যাচ্ছিল না। যখন তা পাওয়া গেল তখন আমরা পুরসভায় ক্ষমতা হারিয়েছি।” তাঁর পাল্টা অভিযোগ, তৃণমূল পুরসভায় ক্ষমতায় আসার পরে হিমঘরটি চালু করতে কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি। যদিও পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের সমীর দত্ত জানিয়েছেন, হিমঘরটি সংস্কার করে শীঘ্রই চালু করা হবে। |
পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, হিমঘরটি চালু করার জন্য ইতিমধ্যেই পুরসভার তরফে প্রায় ৩৭ লক্ষ টাকা খরচ করে তিনটি গুদাম কেনা হয়েছে। কেনা হয়েছে তিন বিঘা জমিও। সমীরবাবু বলেন, “ এর ফলে চাষিরা প্রথমে গুদামে ফসল রেখে তাঁদের সুবিধামতো হিমঘরে রাখতে পারবেন। শুধু ফল বা সব্জি নয়, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যও রাখার ব্যবস্থা থাকবে হিমঘরে।”
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের পুরনির্বাচনে সিপিএমকে হারিয়ে পুরসভার ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল। হিমঘর তৈরির কারণ সম্পর্কে শর্মিষ্ঠাদেবী বলেন, “কল্যাণগড়ের পাশে বহু গ্রাম রয়েছে। চাষিরা বিশেষ করে ক্ষুদ্র চাষি ও ভাগচাষিদের কতা ভেবে ওই হিমঘর তৈরি করা হয়েছিল।” শুধু পুর এলাকাই নয়, গোটা অশোকনগর বিধানসভা এলাকায় কোনও হিমঘর নেই। ফলে উৎপাদিত ফসল নিয়ে সমস্যায় পড়ে যেতেন চাষিরা।
স্থানীয় বিধায়ক ধীমান রায় বলেন, “কল্যাণগড়ের হিমঘরটি চালু করার জন্য রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসকে অনুরোধ করেছি। মন্ত্রী জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।”
চাষিদের বক্তব্য, শীতের সময় সবজির দাম অনেক কমে যায় কিন্তু সবজি সংরক্ষণের জন্য কোনও হিমঘর না থাকায় আর্থিক ক্ষতি করেই সবজি বাজারে বিক্রি করে দিতে হয়। অনেক সময় পরিবহণ খরচও ওঠে না। তার উপর অধিক ফলনেও ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। আম, লিচু, বিভিন্ন ধরনের লেবু, পান, ফুল এখানে প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয়। ওই সব চাষের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত তাঁরা সমস্যায় পড়েন। হিমঘর চালু হলে এই সমস্যা থেকে রেহাই মিলবে। |