ধার শোধ করেনি ছেলে, গণপ্রহারে মৃত্যু বাবার
গ্রিম নেওয়া টাকা শোধ করতে পারেননি এক যুবক। পাওনাদারদের হাত থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। তাঁর বাবাকে সামনে পেয়ে পাওনাদার ও তাঁর লোকজন পিটিয়ে মেরেছে বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে বসিরহাটের দন্ডিরহাট বাজারে। খুনের ঘটনায় জড়িতেরা সিপিএমের কর্মী-সমর্থক বলে অভিযোগ। অন্য দিকে, নিহত সাবদার আলি গাজি (৫৫) এলাকায় তৃণমূল সমর্থক বলে পরিচিত। স্বভাবতই এই ঘটনায় রাজনীতির রঙ লেগেছে। দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে এ দিন দন্ডিরহাটে ঘণ্টা দু’য়েক টাকি রোড অবরোধ করে তৃণমূল। ঘটনার ‘নিন্দা’ করেছেন সিপিএম নেতৃত্ব। তাঁদের দাবি, একেবারেই টাকা-পয়সা নিয়ে বিবাদের জেরে খুন। এর সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। অভিযুক্তেরা পলাতক।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মূল অভিযুক্ত সামাদ মোল্লা সোলাদানার একটি ইটভাটায় শ্রমিক নিয়োগের ঠিকাদারি করেন। কাজের জন্য শ্রমিকদের অগ্রিম টাকা (দাদন) দেওয়া হয়। সাবদারের ছেলে মিজারুল গাজি মাস আটেক আগে সামাদের থেকে কয়েক হাজার টাকা অগ্রিম নিয়েছিলেন। কিন্তু টাকা নিলেও মিজারুল ঠিক মতো কাজ করছিলেন না বলে অভিযোগ তোলেন সামাদ। টাকা ফেরত চান তিনি। এই নিয়ে দু’জনের গোলমাল চলছিল। টাকা না পেয়ে সামাদের লোকজন মাস তিনেক আগে মিজারুলের অনন্তপুরের বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দেয় বলেও অভিযোগ। তাঁরা আশ্রয় নেন অনন্তপুরে স্টেশন-সংলগ্ন ঝুপড়িতে। মিজারুল ঘরছাড়া ছিলেন।
তাঁর বাবা সাবদার হাড়োয়ায় একটি ইটভাটার শ্রমিক। বুধবার তিনি অনন্তপুরের বাড়িতে ফিরেছিলেন। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ স্টেশনের কাছে একটি চায়ের দোকানে বসেছিলেন সাবদার। অভিযোগ, সে সময়ে সামাদ মোল্লা, সহিদুল মোল্লা, গফফর মোল্লা-সহ কয়েক জন মোটর বাইকে চেপে আসেন। সাবদারকে বাইকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় দন্ডিরহাট বাজারে। ছেলের কাছ থেকে পাওনা টাকা চাওয়া হয় বাবার কাছে। এই নিয়ে শুরু হয় বচসা। বাজারে তখন অনেক লোকজন। সকলের সামনেই সাবদারকে জুতো পেটা করা হয়। বাঁশের ঘা মারা হয় প্রৌঢ়ের মাথায়, বুকে। মাটিতে পড়ে যান সাবদার।
পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে আক্রমণকারীদেরই কেউ কেউ সাবদারকে একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে। ওই চিকিৎসকের পরামর্শ মতো জখম ব্যক্তিকে নিয়ে যাওয়া হয় বসিরহাট মহকুমা হাসপাতালে। তত ক্ষণে অবশ্য দেহে প্রাণ নেই সাবদারের। হাসপাতালের বারান্দায় তাঁর দেহ রেখে চম্পট দেয় আততায়ীরা। পরে তাঁর দেহ ময়না-তদন্তে পাঠায় পুলিশ।
সাবদারের স্ত্রী জাহানারা বলেন, “ইটভাটায় কাজ করার জন্য ছেলেকে ১৪ হাজার টাকা দিয়েছিল সামাদ। সেই টাকা শোধ দিতে না পারায় আমাদের উপরে প্রায়ই অত্যাচার করত। বাড়ি থেকেও তাড়ায়। বাধ্য হয়ে আমরা রেললাইনের ধারে থাকি। আজ ওঁকে ধরে নিয়ে গিয়ে ছেলের ধার শোধ করতে বলে। এই নিয়ে কথা কাটাকাটির পরে সকলের সামনে পিটিয়ে মারল।” মিজারুল বলেন, “দাদন তো আমরা নিয়েই থাকি। বলেছিলাম, টাকা শোধ দিয়ে দেব যে কোনও ভাবে। কিন্তু ওরা সে সব শুনল না। বাবাকে একলা পেয়ে পিটিয়ে মারল।”
সাবদারকে খুনের ঘটনায় প্রতিবাদে সামিল হয়েছে ইটভাটা শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন এবং সিপিআইএমএল (লিবারেশন)। দোষীদের শাস্তি এবং নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন দুই সংগঠনের নেতারা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.