দশ বছর আগে শেষ বার আই এফ শিল্ড ঢুকেছিল ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে!
সাত বছর আগে ফাইনালে উঠেও ট্রফি ছুঁয়ে দেখতে পারেনি ইউনাইটেড ফুটবলাররা! হেরে গিয়েছিলেন বায়ার্ন মিউনিখের কাছে।
ইতিহাসের শিকড়ে টান দিয়ে দেখা যাচ্ছে গত নয় বছর ভারতীয় ফুটবলের ঐতিহ্যপূর্ণ এই ট্রফি জিততে পারেনি বাংলার কোনও ক্লাবই!
টোলগে ওজবে বা ইউসিফ ইয়াকুবু--- আজ শুক্রবার বিকেলে রাজ্যপালের হাত থেকে ট্রফি নিয়ে যিনিই যুবভারতীতে ভিকট্রি ল্যাপ দিন, একটা ব্যাপার অন্তত নিশ্চিত শিল্ড বাংলাতেই থাকছে।
কিন্তু ভিকট্রি ল্যাপের গতিমুখ কোন দিকে হবে? ময়দান না সল্টলেক? তাঁর দল টুর্নামেন্ট থেকে সরে দাঁড়ালেও, সুব্রত ভট্টাচার্য এই যুদ্ধে অবশ্য কাউকেই এগিয়ে রাখতে নারাজ। “ইস্টবেঙ্গল এবং প্রয়াগ ইউনাইটেড সমান শক্তিশালী। বেশ কিছু ভাল ফুটবলার আছে দু’দলেই,” সতর্ক মন্তব্য মোহনবাগান কোচের।
বৃহস্পতিবার সকালে দুই শিবিরের আবহাওয়া দেখে মনে হল, মরসুমের প্রথম ট্রফি জয়ের সামনে দাঁড়িয়ে কেউই এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ। “যে কোনও ট্রফি জয়ই গুরুত্বপূর্ণ। আর মরসুমের প্রথম ট্রফি জয়ের সুযোগ। জিতলে টিমের আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়বে। যে করেই হোক ট্রফিটা পেতে হবে,” অনুশীলনের পর বলে দেন মর্গ্যান। এর কিছুক্ষণ পর সল্টলেক পুরসভার মাঠে বসে ইউনাইটেড কোচ সঞ্জয় সেনের মন্তব্য “ব্রাজিলের বোতাফোগোকে হারিয়েছি। কলকাতার কোনও বড় দল এই ম্যাচটা জিতলে হইচই পড়ে যেত। ছেলেরা যা খেলছে তাতে ইস্টবেঙ্গলকে না হারানোর কোনও কারণ দেখছি না।” |
জাঁকজমকহীন শিল্ডকে প্রাণ দিতে আই এফ এ কর্তারা নাকি চেষ্টা করেছিলেন জিনেদিন জিদান বা পাওলো রোসির মতো কোনও বিশ্বকাপারকে ফাইনালে এনে চমক দিতে! বিশাল টাকার দাবি শুনে তাঁরা পিছিয়ে এসেছেন। যা অবশ্য স্বাভাবিকই ছিল।
আইএফএ ব্যর্থ হলেও, যুবভারতী থেকে খালি হাতে আজ ফিরতে চাইছেন না দু’দলের কোচই। জেতার জন্য দু’জনেই নানা অঙ্ক কষতে শুরু করেছেন। খুঁজতে শুরু করেছেন বিপক্ষের ফাঁক ফোকর। মর্গ্যান যেমন বলে দিলেন, “শেষ দু’ম্যাচে ওরা দু’রকম ফর্মেশনে খেলেছে। ওদের টিম বেশ ব্যালান্সড। ইয়াকুবু, ডেনসন, লালকমল...ভাল খেলছে।” উল্টো দিকে ইউনাইটেড কোচের মন্তব্য, “রবিন গোলের মধ্যে আছে। পেন-রবিন-টোলগের মধ্যে কম্বিনশেনটা দারুণ ভাবে কাজে লাগাচ্ছে ওরা।” টুর্নামেন্টের সেরা কোচের দৌড়ে এগিয়ে থাকা সঞ্জয় সেনের কথাতেই পরিষ্কার ইস্টবেঙ্গলের ত্রিভুজ আটকাতে কতটা মরিয়া তিনি।
মরসুমে চার বার দেখা হয়েছে দু’দলের। ইস্টবেঙ্গল জিতেছে দু’বার। একবার প্রয়াগ। ইয়াকুবু যা শুনে হাসতে হাসতে বললেন, “ওটা ২-২ হয়ে যাবে। আমি যে দলে থাকি তারা একটা না একটা ট্রফি পায়ই। মনে হচ্ছে কাল সে দিনটাই আসছে।” ভারতীয় ফুটবলে ২০০-র বেশি গোল আছে ইয়াকুবুর। ঘানাইয়ানের সঙ্গে আজ ‘যুদ্ধ’ নাইজিরিয়ার উগা ওপারার। যেমন শেষ দু’ম্যাচে দু’গোল করে আলোয় ফেরা টোলগের সঙ্গে লড়াই বেলো রাজ্জাকের। ইস্টবেঙ্গলের অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকার অনুশীলনের মাঝেই ‘ভি’ দেখিয়েছেন বার কয়েক। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আগের দু’টো ম্যাচের মতো ফাইনালেও গোল করবেন।
দুই কোচই অবশ্য বিদেশিদের একে অন্যের বিরুদ্ধে ব্যাক্তিগত লড়াইয়ের চেয়েও বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন মাঝমাঠের যুদ্ধকে। আর সম্ভবত সে জন্যই খাবরা-পেন-সুশান্তের সঙ্গে সঞ্জু না পাইতে, ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে তা ঠিক করে উঠতে পারেননি মর্গ্যান। আবার ডেনসন দেবদাসকে শুরুতে খেলাবেন কি না তা নিয়ে ধন্দে রয়েছেন ইউনাইটেড কোচ। তার হাতে অবশ্য লালকমল, জয়ন্ত, গৌরাঙ্গর মতো অস্ত্র মজুত মাঝমাঠে।
যে অঙ্কই করুন, দু’দলের কোচই মনে হল ধরে নিয়েছেন নব্বই মিনিটেই ম্যাচ শেষ হয়ে যাবে। ওপারা-পেনরা এ দিন ঘণ্টা দেড়েক মাঠে থাকলেও পেনাল্টি কিক অনুশীলন করাননি। মর্গ্যান যুক্তি দিলেন, “আগে থেকে ভবিষদ্ববাণী করা কি সম্ভব!” আর বোতাফোগোর বিরুদ্ধে ১২০ মিনিট খেলতে হয়েছে বলে প্রথম একাদশকে কার্যত অনুশীলনই করাননি সঞ্জয়। বললেন, “আমরা সেমিফাইনালের আগেই পেনাল্টি অনুশীলন করে নিয়েছি।”
দু’দলেই চোট-আঘাত প্রচুর। ইউনাইটেডে জোসিমার, অর্ণব, জাস্টিনরা নেই। ইস্টবেঙ্গলে নেই নওবা, ভাসুম, রাজুরা। তাতে অবশ্য হা-হুতাশের রাস্তায় হাঁটছেন না কেউই। তবে এটা ঘটনা, প্রয়াগের চেয়ে ইস্টবেঙ্গলের উপর ট্রফির চাপটা বেশি। মর্গ্যানকে নিয়ে ক্লাব তাঁবুতে গুঞ্জন একটা আছেই। তার উপর ফেসবুক, ফ্যানস ক্লাবের সাইটে উপচে পড়ছে প্রত্যাশা। ট্রফি জয় মসৃণ করতে ম্যাচের দিন সকালে মনোবিদকে ডেকে পাঠিয়েছেন ব্রিটিশ কোচ। আর চাপ কাটাতে বারবার বলছেন, “শিল্ড জেতা না জেতার উপর আমার আর ক্লাবের মনোভাবের কোনও পরিবর্তন হবে না।”
ইস্টবেঙ্গলের যে টিমটা শেষ বার শিল্ড জিতেছিল সেই দলের এক সদস্য অ্যালভিটো ডি’কুনহা রয়েছেন এ বারের টিমেও। এক দশক পর শিল্ড জয়ের সামনে দাঁড়িয়ে মনে হল লাল-হলুদের কোচ কাম ফুটবলার বেশ উত্তেজিত। “আমরাই জিতব। এ রকম সুযোগ কেউ হাতছাড়া করে?”
|
শুক্রবার
আই এফ এ শিল্ড ফাইনালইস্টবেঙ্গল: প্রয়াগ ইউনাইটেড (যুবভারতী ২-৩০)। |