|
|
|
|
ঘর গোছাতে ব্যস্ত বিজেপি |
দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় • নয়াদিল্লি |
মনমোহন-সরকারের সঙ্কটে অন্তর্বর্তী ভোটের হাওয়া তুলে নিজেদের দলের নেতৃত্বের সমস্যা মেটাতে চাইছে বিজেপি। তাই এক দিকে সংসদে তারা সরকারের বিরুদ্ধে সরব হচ্ছে, অন্য দিকে অন্তর্বর্তী নির্বাচনের সম্ভাবনা উস্কে দিচ্ছে।
রাষ্ট্রপতির বক্তৃতায় ধন্যবাদসূচক বিতর্কে আজই লোকসভায় জবাব দেওয়ার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রীর। তার পরে জাতীয় সন্ত্রাস দমন কেন্দ্র (এনসিটিসি)-সহ বিভিন্ন বিষয়ে সংশোধনীতে ভোটাভুটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আপাতত সেটি সোমবার পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকারকে এক হাত নিয়ে লোকসভার বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজ বলেন, “এক শরিক নেত্রী নিজের দলেরই রেলমন্ত্রীকে সরানোর দাবিতে সরকারের সঙ্গে দর কষাকষি করছেন। অন্য শরিক ডিএমকে শ্রীলঙ্কা প্রশ্নে জোট ছাড়ার হুমকি দিয়েছে। ফলে আজ ভোটাভুটি হলে এদের সমর্থন পাওয়ার আশা কম ছিল। তার মধ্যে আজই অখিলেশ প্রসাদের শপথ অনুষ্ঠানের জন্য সপা সাংসদরা লখনউয়ে ছিলেন। ফলে সরকারের সংখ্যা ছিল না। তাই লোকপাল বিল নিয়ে যেমন পালিয়েছিল, তেমনই আজও পালাল!”
সুষমা জানান, চার দিকের এই সঙ্কট সামলাতে না পেরে দেশকে অন্তর্বর্তী ভোটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে সরকার। তবে তাঁরা যে ভোটের জন্য প্রস্তুত, তা-ও এ দিন জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
মুখে এ কথা বললেও ঘরোয়া স্তরে বিজেপি নেতারা স্বীকার করছেন, এখনই ভোট হলে তাঁরা যে সরকারে আসবেন, তেমন নিশ্চয়তা কিন্তু নেই। তা হলে প্রকাশ্যে কেন এমন বলছেন তাঁরা? বিজেপির এক শীর্ষ নেতার মতে, মনমোহন-সরকার যে সঙ্কটে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে বিজেপিও যে খুব ভাল আছে, তা-ও নয়। দলের মধ্যে এখনও নেতৃত্বের কোন্দল, প্রধানমন্ত্রিত্ব নিয়ে লড়াই আছে। কেন্দ্রীয় সরকারের যা অবস্থা, তাতে অন্তর্বর্তী নির্বাচনের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অনিশ্চয়তা তো কিছুটা রয়েইছে। ফলে প্রকাশ্যে এ সব বলে দল যদি নেতৃত্বের সঙ্কট দ্রুত মিটিয়ে ফেলতে পারে, তাতেই মঙ্গল।
বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন, আঞ্চলিক দলগুলির যে রমরমা চলছে, তাতে এখনই ভোট হলে তারাই নির্ধারক শক্তি হবে। তবে আঞ্চলিক দলগুলির জোট কোনও সরকার গড়লে, তা স্থায়ী হবে না বলেই মনে করছে দলের একাংশ। সে ক্ষেত্রে বিজেপি নিজেদের শক্তি বাড়ানোর জন্য আরও সময় পাবে। তাই মনমোহন-সরকারকে যথাসম্ভব আক্রমণ করে নিজেদের সংগঠিত করার কৌশল নিচ্ছে বিজেপি। সংসদের চলতি অধিবেশনে সরকারকে আক্রমণের জন্য এমন বিষয় চিহ্নিত করছে, যাতে এমনকী সরকারের শরিক ও সমর্থক দলগুলিকেও পাশে পাওয়া যায়।
এই অঙ্কেই আজ সংসদে বামেদের সঙ্গে জোট বেঁধে রেলমন্ত্রী এবং রেলবাজেটের অস্তিত্ব নিয়ে সরব হয় বিজেপি। অখিলেশের শপথে আডবাণীর যাওয়ার কথা থাকলেও তা বাতিল করেন তিনি। সুষমার নেতৃত্বে বিজেপি সাংসদরা এ দিন প্রশ্ন তোলেন, বাজেট পেশ করে রেলমন্ত্রী সরে গেলে রেল বাজেটের কী হবে?
শোরগোলে প্রায় এক ঘণ্টা সভা মুলতুবি থাকে। বিজেপি নেতা বেঙ্কাইয়া নায়ডুর কটাক্ষ, “মনমোহন সিংহ যদি সরকার চালাতে না পারেন, তা হলে ছেড়ে দিন! সরকার কত দিন এ ভাবে পালিয়ে বেড়াবে?” সুষমার বক্তব্য, সোমবার ‘নৈতিক পরাজয়’ এড়াতে সরকার যদি রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা থেকে পিছুও হঠে, তা হলেও বিজেপির ‘নৈতিক জয়’ হবে। |
|
|
|
|
|