|
|
|
|
নেত্রীর নির্দেশ অগ্রাহ্য করে দীনেশ অনড়ই |
অনমিত্র সেনগুপ্ত • নয়াদিল্লি |
সংসদ তথা জাতীয় রাজনীতি গত কাল থেকে তাঁকে নিয়ে উত্তাল। গদিচ্যুত হওয়ার মুখে দাঁড়িয়েও নিজের অবস্থানে কিন্তু এখনও অনড় রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী।
যাত্রিভাড়া বাড়ানো নিয়ে দলনেত্রীর তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও যিনি আজ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, “যদি আমাকে আজকের দিনে বাজেট পেশ করতে হয়, তা হলে আমি ওই বাজেটই পেশ করব।” অর্থাৎ ভাড়া না বাড়ানো নিয়ে স্বয়ং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নীতিকেই ফের চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিলেন! এই নিয়ে দ্বিতীয় বার।
এর আগে দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মুখ খুলে তৃণমূল নেত্রীর বিরাগভাজন হয়েছিলেন দলের সাংসদ কবীর সুমন। এ বার তা করলেন দীনেশ। দলের নীতির বাইরে গিয়ে তো বটেই, বাজেটে ভাড়া না বাড়ানোর যে ‘চরম’ শর্ত দলনেত্রী রেখেছিলেন, তাকেও অগ্রাহ্য করেছেন দীনেশ। শুধু যাত্রিভাড়াই বাড়াননি, উল্টে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘দল নয়, দেশের স্বার্থে, রেল মন্ত্রকের স্বার্থে যা ভাল,’ তা-ই তিনি করেছেন।
কেন এই ‘আত্মঘাতী’ পদক্ষেপ? যার ফলে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের মেয়াদ প্রশ্নচিহ্নের মুখে? দীনেশের বক্তব্য, “পদ নয়। রেলের মঙ্গলের জন্য যা করার, আমি করেছি।” তবে এ কথাও ঠিক, শিল্পমহল থেকে রেল মন্ত্রকের শ্রমিক সংগঠন, পরিবার-শুভানুধ্যায়ী, আমজনতা, যোগগুরু সকলেই দরাজ শংসাপত্র দিয়েছেন দীনেশকে। সমাজের সর্বস্তর থেকে সমর্থন পেয়ে দৃশ্যতই অভিভূত দীনেশ আজ ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, রবীন্দ্রনাথের গান শোনা বা ট্র্যাফিক পয়েন্টে তা বাজালেই শুধু হয় না। তাঁর গানের অন্তর্নিহিত দর্শনটাকেও আত্মস্থ করতে হয়। দীনেশের কথায়, “প্রকৃত অর্থে ‘চিত্ত ভয় শূন্য’ হলে তবেই মাথা উঁচু করে সম্মান নিয়ে বাঁচা যায়।”
যদিও তৃণমূল সূত্র বলছে, দলীয় নীতি না মানায় আজ হোক বা কাল, রেলমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতেই হবে দীনেশকে। দল চাইছে, নিজে থেকেই ইস্তফা দিন দীনেশ। যদিও রেলমন্ত্রীর বক্তব্য, “দলনেত্রী বা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পেলে আমি রেলমন্ত্রী হিসেবে ইস্তফা দেব।” |
|
সংসদ থেকে বেরোনোর পথে রেলমন্ত্রী বৃহস্পতিবার। ছবি: রমাকান্ত কুশওয়াহা |
রেলমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ মহলে স্পষ্ট জানিয়েছেন, তিনি কোনও ভাবেই নিজে থেকে ইস্তফা দেবেন না। নিজের অবস্থানে অনড় থাকলেও একটা আক্ষেপ রয়েই যাচ্ছে দীনেশের। বাজেট নিয়ে দলনেত্রী সংবাদমাধ্যম-সহ সব স্তরে কথা বললেও তাঁর সঙ্গে কোনও যোগাযোগই করেননি!
রেলমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিলে তৃণমূলের একজন সাধারণ সাংসদ হিসেবে লোকসভায় রয়ে যাবেন দীনেশ। এখন দলীয় নেত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্যের পরে তৃণমূলে দীনেশের ভবিষ্যৎ কী, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। দল কোনও ভাবেই তাঁকে শহিদের মর্যাদা দিতে চাইছে না। তাই কবীর সুমনের ধাঁচেই দীনেশকেও এখনই বহিষ্কার করার রাস্তায় হাঁটতে চাইছে না তৃণমূল। দল মনে করছে, বহিষ্কার করলে দীনেশ নির্দল সাংসদ হিসেবে লোকসভায় রয়ে যাবেন। তৃণমূল শিবির সে সুযোগ দিতে নারাজ। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব তাই চাইছেন, নিজে থেকেই সাংসদ পদ থেকেও ইস্তাফা দিন দীনেশ। দলীয় নেতারা এ-ও মনে করছেন, দলের মধ্যে দীনেশ বা কবীর সুমনের এমন কোনও প্রভাব নেই যে, তাঁরা তৃণমূলের অন্য সাংসদের দল থেকে ভাঙিয়ে বের করে নিয়ে আসতে পারবেন। কেন না দলত্যাগ বিরোধী আইন অনুযায়ী, ১৯ সদস্যের তৃণমূল কংগ্রেসের থেকে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যকে এক সঙ্গে বেরিয়ে আসতে হবে। একমাত্র তা হলেই সংসদ পদ খোয়াতে হবে না এঁদের (আগে এক-তৃতীয়াংশ সাংসদ এক যোগে বেরিয়ে এলেই তাঁদের সাংসদ পদ রক্ষা পেত)। যদিও অনেকেই মানছেন, বাস্তবে এমনটা হওয়া অসম্ভব।
মন্ত্রিসভা থেকে দীনেশকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত বুধবার প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে জানিয়ে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন রাত পর্যন্ত অবশ্য নিজের পদ থেকে ইস্তফা দেননি রেলমন্ত্রী। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, দীনেশ গত কাল থেকে যে ভাবে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নেত্রীর বিরুদ্ধাচারণ করে যাচ্ছেন, তার উৎস কী? তাঁর ভবিষ্যত রণকৌশলই বা কী? |
প্রকৃত অর্থে ‘চিত্ত ভয় শূন্য’ হলে তবেই
মাথা উঁচু করে সম্মান নিয়ে বাঁচা যায়।
দীনেশ ত্রিবেদী |
|
সমাজবাদী পার্টি যাতে ইউপি সরকারে যোগদান করে, তার জন্য ইতিমধ্যেই সক্রিয় হয়েছে কংগ্রেসের একাংশ। মনমোহন-সনিয়া সপা-র সমর্থন পেয়ে গেলে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না অনেকে। সে ক্ষেত্রে রেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক সমাজবাদী পার্টিকে দিতে পারে কংগ্রেস। অনেকে এ-ও মনে করছেন, মুলায়ম সিংহকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক দিয়ে প্রায় দেড় দশক পরে রেল নিজেদের কব্জায় নিতে পারে কংগ্রেস। তা ছাড়া, কংগ্রেসের একটি বড় অংশ রেল বাজেটে ভাড়া বাড়ানোর পক্ষে। সূত্রের খবর, সে কারণে দীনেশকে রাজ্যসভা থেকে কংগ্রেসের টিকিটে জিতিয়ে আনার জন্যও সক্রিয় হয়েছে দলের একটি প্রভাবশালী অংশ। যদিও রাজ্যসভায় কংগ্রেসের যা পরিস্থিতি, তাতে কোন রাজ্য থেকে দীনেশকে জিতিয়ে আনা সম্ভব হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। আর একটি মহলের বক্তব্য, গুজরাতের কচ্ছ এলাকায় লোকসভার একটি আসনে উপ-নির্বাচন হওয়ার কথা। ব্যারাকপুর থেকে ইস্তফা দিয়ে তিনি কচ্ছ থেকে নির্বাচনে জিতে সংসদে ফিরে আসতে পারেন। তবে বিজেপি সূত্রের খবর, সেই আসনটি সংরক্ষিত। ফলে দীনেশের সেখানে নির্বাচনে লড়া নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
যাঁকে নিয়ে এত আলোচনা, সেই দীনেশ নিজে অবশ্য এ সব নিয়ে কোনও কথাই বলতে নারাজ। এখন তিনি কী করতে চান? দীনেশের জবাব, “পেশ হওয়া বাজেট পাস করানো।” কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক কেমন থাকবে, দল আদৌ কেন্দ্রে শরিক থাকবে কি না সেই জল না মেপে আগেভাগে নিজের ভবিষ্যত পরিকল্পনা খোলসা করতে চাননি দীনেশ। তবে অনেকেই আশা করছেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই রেল মন্ত্রক ও রেল বাজেট নিয়ে ধোঁয়াশা কেটে যাবে! |
দিনভর দীনেশ-কাণ্ড |
সকাল |
৯.০০
দিল্লিতে মুকুল রায়। বিমানবন্দর থেকে
সোজা সংসদে |
১০.৩০
সংসদ চত্বরে ধর্না তৃণমূল মন্ত্রী-সাংসদদের।
অনুপস্থিত দীনেশ |
১০.৫০
ধর্নার সামনে দিয়েই গেল দীনেশের গাড়ি। বললেন, রেলমন্ত্রীর কাজ
সারতে এসেছি |
১০.৫৫
সুষমাদের কাছে অবস্থান ব্যাখ্যা দীনেশের। ঘিরে ধরলেন কংগ্রেস সাংসদরাও |
১১.০০
লোকসভায় বাম-বিজেপির প্রশ্ন, রেলমন্ত্রী কি আছেন? বাজেটের কী গতি হল? |
১১.২০
সুদীপ জানালেন, প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি মমতার। |
১১.০৫
প্রণব জানালেন, মমতার চিঠি প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনাধীন। |
১২.৩০
সুদীপকে প্রণব জানালেন, এনসিটিসি ও রেলভাড়া
নিয়ে তৃণমূলের দাবি
মানবে সরকার। |
এর পরে দুপুরে
সরাসরি মমতাকে প্রধানমন্ত্রীর
আশ্বাস-ফোন |
|
|
|
|
|
|