বিকল্প হিসেবে বাওকুল চাষে লাভের মুখ দেখেছেন অনেকে
ধান বিক্রি করতে না পেরে, সবজির উপযুক্ত দাম না পেয়ে বহু চাষি আথির্ক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এই অবস্থায় বাওকুল চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন উত্তর ২৪ পরগনার বেশ কিছু চাষি। জেলার মধ্যে বসিরহাট, দেগঙ্গা, হাবরা-১ ব্লকে কিছু চাষি এই চাষ শুরু করেছিলেন। ভাল লাভ হওয়ায় বাওকুল চাষ এখন বনগাঁ, বাগদা, গাইঘাটা, স্বরূপনগর, বাদুড়িয়া ব্লকেও ছড়িয়ে পড়েছে। জেলা হর্টিকালচার দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে চলতি মরসুমে প্রায় ১০০ হেক্টর জমিতে বাওকুল চাষ হয়েছে। এই মুহূর্তে জেলার প্রায় ৭০০ চাষি এই চাষের সঙ্গে যুক্ত।
বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী কৌশিক ব্রহ্মচারী বলেন, “বাওকুল চাষ অত্যন্ত লাভজনক। যে সব জমি উঁচু, রুক্ষ প্রকৃতির। সে ভাবে ধান, পাট চাষের উপযোগী নয়। জলের অভাব রয়েছে এমন জমিতে চাষিরা এই চাষ করতে পারেন।”
চাষ হয়েছে বাওকুল। ছবি: পার্থসারথী নন্দী।
জেলা উদ্যানপালন দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হাবরা-১ ব্লকের মারাকপুর গ্রামের বাসিন্দা কার্তিক দাস কয়েক বছর আগেও নিয়মিত ধান ও সবজি চাষ করতেন। কিন্তু সে ভাবে লাভ হচ্ছিল না। এই অবস্থায় বছর চারেক আগে তিনি ধান, পাট চাষ বন্ধ করে বাওকুল চাষ করতে শুরু করেন। কিন্তু হঠাৎই বাওকুল চাষ কেন? কার্তিকবাবু বললেন, “ধান, পাট, সবজি চাষ করে সেভাবে লাভ করতে পারছিলাম না। তা ছাড়া ওই চাষ শুরু করার আগে দীর্ঘদিন ধরে কুল চাষ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করছিলাম। শেষ পর্যন্ত বছর চারেক আগে থেকে বাওকুল চাষ শুরু করি। বাংলাদেশের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এই কুলের চারা আনিয়েছিলাম।”
এর পর থেকে শুধুই সাফল্যের কাহিনী কাতির্কবাবুর। জেলা উদ্যানপালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত থাইল্যান্ড, তাইওয়ানে এই কুলের চাষ হয়। বাংলাদেশ হয়ে তা এ রাজ্যে প্রবেশ করেছে। কার্তিকবাবু জানান, চার বছর আগে তিনি বাওকুল গাছের চারা লাগিয়েছিলেন। চারা লাগানোর ন’মাস পর থেকে তিনি ফলন পেতে শুরু করেন। প্রতি বছর শীতের মরসুমে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যর্ন্ত। মূলত উঁচু জমিতে বাওকুলের চারা লাগাতে হয়। নীচু জমিতে ওই চাষ সম্ভব নয়। এক বিঘা জমিতে ১০০ থেকে ১২০টি চারা লাগানো যায়। শ্রমিক লাগে। সারের প্রয়োজন। কুল গাছে রোগপোকার আক্রমণের সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই সেদিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। জেলা উদ্যানপালন দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, মার্চ মাসে গাছের ডালপালা ছেঁটে দেওয়া প্রয়োজন। ওই ডালপালা আবার জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা যায়। নতুন চারা লাগানোর সময় ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ। ন’মাস পরে গাছ ফলন দিতে শুরু করে। কার্তিকবাবুর কথায়, “প্রতি বছর জমি এক বিঘা জমি থেকে ৪০ কুইন্টাল কুল বিক্রি করি। কেজি প্রতি ১৫ টাকা থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত দামে এ বার বাজারে বিক্রি হয়েছে।” কার্তিকবাবু নিজে বাজারে ফসল নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা এসে তাঁর কাছ থেকেও কুল কিনে নিয়ে যান। এক একটি কুলের ওজন হয় ৮০ থেকে ৯০ গ্রাম পর্যন্ত। প্রথম বছর চাষের খরচ বেশি হলেও পরবর্তী বছরগুলিতে বিঘাপ্রতি খরচ ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত কমে যায়। কারণ একবার গাছ বসালে বছর তিনেক ধরে তা ফল দেয়। এক একটি চারার বর্তমান বাজার মূল্য ৩০ থেকে ৩৫ টাকা।
কার্তিকবাবুর কথায়, “উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পরে কিছুদিন ভূষিমালের ব্যবসা করি। পরবর্তী সময়ে কৃষি আধিকারিক ও চাষিবন্ধুদের সঙ্গে পরামর্শ করে চাষের কাজ শুরু করি। কিন্তু তাতে লাভ হচ্ছিল না। শেষে কুল চাষ নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করি। এখন মূলত বাওকুল চাষ করেই লাভের মুখ দেখেছি।”
শুধু কার্তিকবাবুই নন। উত্তর ২৪ পরগনার বহু জায়গাতেই বাওকুল চাষ জনপ্রিয় হয়েছে। হাবরার কুমড়ো গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা নুরুল সাহাজি বলেন, “বছর চারেক ধরে দু’বিঘা জমিতে বাওকুল চাষ করছি। প্রতি বছর বিঘাপ্রতি ৬০ কুইন্টাল করে কুল পেয়েছি। আগে ধান চাষ করতাম। কিন্তু এতে ধানের চেয়ে লাভ অনেক বেশি। তা ছাড়া বৃষ্টি, ঝড়ে ধানের মতো এটা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা নেই। খাটনিও কম। এ বছর আরও ৫ বিঘা জমিতে বাওকুল চাষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
জেলার উদ্যানপালন আধিকারিক দীপক ষড়ঙ্গি বলেন, “এই ধরনের কুল সাধারণ মানুষ মূলত কাঁচা খেতেই পছন্দ করেন। একবার চাষ করলে পাঁচ থেকে সাত বছর পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।” তিনি আরও জানান, এই চাষে চাষিদের উৎসাহ দিতে উদ্যানপালন দফতরের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যে সব চাষির ন্যূনতম ১৫ কাঠা জমি রয়েছে এবং যাঁরা কুল চাষে আগ্রহী তাঁদের ৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। ২০ হেক্টর জমিতে ওই সাহায্য দেওয়া হবে। তিনি বলেন, “উনি কুল চাষের ক্ষেত্রে একজন প্রগতিশীল চাষি। যে সব চাষি বাওকুল চাষ করে সফল হয়েছেন তাঁদের মধ্যে কার্তিকবাবু অন্যতম। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে বিভিন্ন কর্মশালায় কার্তিকবাবুকে নিয়ে গিয়ে তাঁর সাফল্য তুলে ধরে চাষিদের এই চাষে উৎসাহিত করা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.