স্বপ্ন ছিল কলকাতার সুপার ডিভিশন ক্লাবে খেলার। সে স্বপ্নপূরণ হয়নি। কিন্তু নিজের স্বপ্ন অন্যের মাধ্যমে পূরণ করার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছেন লাভপুরের বাবুপাড়ার দেবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতার মাঠ মাত করার মতো উপযুক্ত ফুটবলার গড়ার কাজে ব্যস্ত তিনি।
এলাকার ফুটবলারদের কাছে ‘ছোটনদা’ হিসেবেই পরিচিত দেবপ্রসাদবাবুর ছোট্ট সংসারে রয়েছেন বাবা-মা, স্ত্রী এবং ৮ বছরের মেয়ে। দশ বছর বয়সেই স্থানীয় যাদবলাল হাইস্কুল মাঠে ফুটবলের পিছনে ছুটতে শুরু করলেও পাকাপাকি ভাবে খেলা শুরু করেন ব্রাইট স্টার ক্লাবে। জেলা দলের হয়ে জুনিয়র ও সাব-জুনিয়র বিভাগে দীর্ঘদিন অধিনায়কত্ব করেছেন। জেলা পুলিশের হয়েও খেলেছেন দু’বছর। ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত উত্তর চব্বিশ পরগনার শ্যামনগর তরুণ সঙ্ঘ, নারায়ণপুর ইউনাইটেড ক্লাব, সুবারবার্ন টালিগঞ্জ অগ্রগামী, ওয়ারি অ্যাথলেটিক ক্লাব, কলকাতা পুলিশ-সহ বিভিন্ন দলের হয়ে মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, মহামেডান ক্লাবের বিরুদ্ধে খেলেছেন বিভিন্ন সময়ে। ১৯৯৮ সালে কলকাতা ‘এ’ ডিভিশনের খেলায় ‘বেস্ট স্কোরার’ও নির্বাচিত হয়েছেন। |
স্বপ্ন দেখেছিলেন কলকাতা সুপার ডিভিশন ক্লাবে খেলার। তাই খেলার সুবাদেই কলকাতা পুলিশ, কাঁকিনাড়া টিআই সি-সহ বিভিন্ন জায়গায় চাকরির সুযোগ হেলায় সরিয়ে দিয়েছেন। ১৯৯৪ সালে বেঙ্গল দলে সুযোগও মিলেছিল। কিন্তু বাধ সাধল হাঁটুর চোট। পূরণ হল না নিজের দেখা স্বপ্ন। তাই নিজের স্বপ্ন অন্যের মাধ্যমে সফল করতে বছর দশেক ধরে কয়েক জন শুভানুধ্যায়ীর সহায়তায় বিনা পারিশ্রমিকে ফুটবলার তৈরির প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। শুধু প্রশিক্ষণই নয়, খুদে ফুটবলারদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামেরও যোগান দিচ্ছেন নিজের টাকা খরচ করে।
স্থানীয় ঠাকুরপাড়ার নাসির শেখের কথায়, “এলাকার ফুটবল খেলা প্রায় উঠেই গিয়েছিল। ছোটনদার উৎসাহে আমরা প্রশিক্ষণ নিয়ে জেলার বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় এলাকার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাচ্ছি।” আলমারিতে ভর্তি শংসাপত্র, মেডেল, কাপ। বর্তমানে ঠিকাদারি করে সংসার চালাতে হয় তাঁকে। কিন্তু তাতে কোন হতাশা নেই, নেই আক্ষেপও। বরং আবেগ আপ্লুত গলায় বলেন, “স্বপ্ন ছিল বড় দলে খেলব। ছোট থেকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও পরিবেশের অভাবে তা সফল হয়নি। কিন্তু আমার হাতে গড়া ছেলেরা একদিন কলকাতার মাঠ মাতিয়ে দেবে সেই স্বপ্ন দেখি।” |