রামপুরহাট পুরসভা
বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পে নির্মিত বাড়ি বিক্রির অভিযোগ
স্তি উন্নয়ন প্রকল্পে গৃহহীনদের জন্য নির্মিত বাড়ি ভেঙে উঁচু বাড়ি তৈরি হচ্ছে। পুরো ঘটনাটিই খোদ তৃণমূল পরিচালিত রামপুরহাট পুরসভার পুরপ্রধানের ওয়ার্ডেই হচ্ছে। অথচ বস্তি উন্নয়নের যে প্রকল্পে ওই বাড়িটি তৈরি হয়েছিল সেই প্রকল্পের কাজও এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। এই অবস্থায় সরকারি প্রকল্পে নির্মিত বাড়ি পুরসভার অনুমোদন কী করে কেউ বিক্রি করে দিতে পারে এই নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে।
রামপুরহাট পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের ধুলাডাঙা রোড সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা স্মৃতিরেখা দেবাংশী ওই বাড়িটির মালিক। ২০০৭ সালে রামপুরহাট পুরসভা এলাকায় বস্তি উন্নয়নমূলক প্রকল্পে দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী মোট ৬০৩টি পরিবারকে গৃহ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় আনা হয়। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, প্রকল্পের আওতাধীন উপভোক্তার নিজস্ব বাস্তু ভিটে থাকতে হবে। নির্বাচিত উপভোক্তাকে গৃহ নির্মাণের জন্য ১৬,০০০ টাকা পুরসভাকে অগ্রিম জমাও দিতে হয়। এক লক্ষ টাকার এই প্রকল্পের বাকি ৮৪,০০০ টাকা সরকারি অনুদান হিসেবে উপভোক্তাকে বাড়ি নির্মাণের জন্য দেওয়া হয়। সেই মত ২০১০ সালে স্মৃতিরেখা দেবাংশীর গৃহ নির্মাণ শুরু হয়। ২০১১ সালে তার কাজ শেষ হয়। প্রকল্পে নির্মিত সেই বাড়িটিকেই প্রোমোটারকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। সেই জায়গায় পাঁচতলা বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে স্মৃতিরেখাদেবীর ছেলে সুভাশিস দেবাংশীর দাবি, “মা অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য পশ্চিমবঙ্গের বাইরে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। আমাদের সেই আর্থিক সঙ্গতি না থাকার জন্য বাড়িটি বিক্রি করতে হয়েছে।” তাঁর আরও দাবি, “পুরসভার কাছে বাড়ি বিক্রি করার জন্য আবেদন করা হয়েছিল। তার ভিত্তিতেই আমরা পুরসভাকে ওই প্রকল্প বাবদ পাওয়া ৮৪,০০০ টাকা ফেরতও দিয়েছি। যা হয়েছে পুরসভার অনুমতিতেই হয়েছে।”
এই ভাবে সরকারি প্রকল্পে নির্মিত বাড়ি কী প্রোমোটারকে বিক্রি করে দেওয়া যায়? এ ক্ষেত্রে স্মৃতিরেখাদেবীর ছেলের যুক্তি, “পুরসভা যখন বাড়ি তৈরি করে দিয়েছিল তখন বাড়ি বিক্রি করতে পারব কী পারব না, সে ব্যাপারে কিছু জানায়নি। বিক্রি করার জন্য আবেদন করলে পুরসভা আমাদের কোনও আপত্তির কথাও জানাননি।” ওই বাড়ির নতুন ‘মালিক’দের পক্ষে সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, রবিউল আলম বলেন, “গরীব মানুষের চিকিৎসার কথা ভেবে আমরা এগিয়ে এসেছিলাম। সেই মত পরামর্শ দিই, পুরসভার কাছে টাকা জমা দিয়ে বাকি টাকা চিকিৎসা বাবদ খরচ করতে।”
বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পে নির্মিত বাড়ি বিক্রি করে ভেঙে দিয়ে বাড়ি তৈরি করা যায় কী না সে প্রশ্নে পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান, বর্তমানে ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা জেলা কংগ্রেসের সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি বলেন, “বর্তমান পুরসভা পুর আইনের কোনও তোয়াক্কা করছে না। এদের কাজকর্মে আমি হতাশ।” অন্য দিকে, রামপুরহাট পুরসভার আরেক প্রাক্তন পুরপ্রধান শুদ্ধোধন বন্দ্যোপাধায় বলেন, “মানবিকতার দিক দিয়ে পুরসভা কোনও অন্যায় করেনি।” কিন্তু মানবিকতার দোহাই দিয়ে কী ঘুঘুর চক্রে ঢিল মারা হচ্ছে না? প্রশ্ন উঠছে এর ফলে তো অনেকেই এর অন্যায় সুযোগ নেবেন। এই প্রকল্পের আওতায় যে ৬০৩টি বাড়ি তৈরির কথা তার মালিকরা যদি এ ভাবে বাড়ি বিক্রি করতে শুরু করেন তা হলে সরকারি প্রকল্পের যাথার্থ কোথায় থাকবে! স্থানীয় বাসিন্দাদের আশঙ্কা এর ফলে কিছু প্রোমোটারের পকেট গরম হবে। তা ছাড়া কোন মাপদণ্ডে পুরসভা বিচার করবে কোনটি মানবিক ক্ষেত্র আর কোনটি নয়? যে ক্ষেত্রটি নিয়ে এই যাবতীয় প্রশ্ন উঠছে সে ক্ষেত্রে পুরসভার মানবিক ভাবে পাশে দাঁড়ানোর কি এটিই একমাত্র বিকল্প ছিল? অন্য কোনও ভাবে কি ওই দুঃস্থ পরিবারটির পাশে দাঁড়ানো যেত না? বিভিন্ন মহলে ওঠা এই প্রশ্নগুলির কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি রামপুরহাট পুরসভা।
অভিযুক্ত পুরপ্রধান নির্মল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পে নির্মিত বাড়ির মালিক পুরসভার কাছে একটি আবেদন করেছিলেন। সেই আবেদনের ভিত্তিতে ওই বাড়ি তৈরি বাবদ সরকারের দেওয়া ৮৪,০০০ টাকা ফেরত নিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ঠিক হয়েছে ওই ওয়ার্ডেরই অন্য একজন গরীব মানুষকে ওই বিশেষ প্রকল্পের আওতায় এনে বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে।” এর ফলে কী আইনভঙ্গ করা হল না? উত্তরে নির্মলবাবু বলেন, “আগের মালিক যখন বাড়ি তৈরির সরকারি টাকা ফেরতই দিয়েছেন তখন তাঁর বাড়ি ভাঙার জন্য ধরে নেওয়া যেতে পারে পুরসভার অনুমোদন রয়েছে।” কিন্তু অভিযোগ উঠছে যে, বর্তমান পুরসভার এই বিশেষ ‘অনুমোদন’ আদতে পরোক্ষে বেআইনি প্রোমোটারি ব্যবস্থাকেই মদত দেবে।
যাঁর আমলে ওই পরিবারের নাম প্রকল্পটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সেই প্রাক্তন কাউন্সিলর ফরওয়ার্ড ব্লকের অনন্ত মণ্ডলের অভিযোগ, “একজন প্রকৃত উপভোক্তা হিসেবে ওই বাড়ি নির্মাণ হয়েছিল। একই জায়গায় পুরপ্রধান ওই বাড়ি তৈরির নকশা অনুমোদন করতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে নিশ্চয় পুরপ্রধানের কোনও কায়েমী স্বার্থ জড়িয়ে আছে।” পুরসভার বিরোধী দল নেতা সিপিএমের সঞ্জীব মল্লিকের দাবি, “গৃহহীনদের নির্মাণ হওয়া বাড়ি ভাঙা যায় কি না সে ব্যাপারে পুরপ্রধানকে আইনি বিষয়টি জানার পর পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছিল।”
এ দিকে ঘটনার কথা শুনে জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, “বিষয়টি বিশদে খোঁজ নিয়ে দেখব। এ ব্যাপারে মহকুমাশাসককে খোঁজ নিতেও বলব।” মহকুমাশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মহম্মদ ইব্রাহিম বলেন, “বিষয়টির কথা শুনেছি। পুরপ্রধানের কাছে বিস্তারিত জেনে ব্যবস্থা নেব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.