কর্মীদের গণতান্ত্রিক পথে আন্দোলন করার অধিকার কি হারিয়ে যাচ্ছে? এই প্রশ্ন তুলে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিলেন তাঁরই দলের সরকারি কর্মচারী সংগঠন। এমনকী দীর্ঘদিন তৃণমূল করার পরেও তাঁরাই ‘ব্রাত্য’ হয়ে যাচ্ছেন বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংগঠনের নেতৃত্ব।
‘স্টেট গভর্নমেন্ট তৃণমূল এমপ্লয়িজ ফেডারেশন’-এর বীরভূম জেলা সভাপতি বিদ্যুৎ মুখোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীকে ‘ফ্যাক্স’ মারফত এই চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে তিনি অভিযোগ করেছেন, শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর ‘নির্দেশে’ পূর্ত দফতরের বীরভূম সদরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার প্রদীপ মণ্ডল বুধবার তাঁদের সংগঠনের স্মারকলিপি নিতে অস্বীকার করেন। শ্রমমন্ত্রীর এ ব্যাপারে ‘নির্দেশ’ দেওয়ার এক্তিয়ার রয়েছে কি না, মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে। শ্রমমন্ত্রী অবশ্য বৃহস্পতিবার বলেছেন, “ওখান থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। আমি বলেছিলাম, কোনও সংগঠন উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করলে তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন না। এই নিয়ম সব সরকারি দফতরের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।”
বিদ্যুৎবাবুদের দাবি, পূর্ত দফতরের ওই আধিকারিকের সঙ্গে সৌজন্যমূলক দেখা করার সময় চেয়ে ২৩ ফেব্রুয়ারি সংগঠনের তরফে চিঠি দেওয়া হয়। পর দিন ফের চিঠি দিয়ে স্মারকলিপি দেওয়ার সময় চাওয়া হয়। পরে ফোন করা হলে প্রদীপবাবু ১৪ ফেব্রুয়ারি তাঁদের অফিসে ডাকেন। বিদ্যুৎবাবুর অভিযোগ, “আমরা অফিসে ঢুকতেই এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার জানিয়ে দেন, শ্রমমন্ত্রী স্মারকলিপি নিতে নিষেধ করেছেন। আমরা আর কথা না বাড়িয়ে বেরিয়ে আসি। মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে জানতে চেয়েছি, গণতান্ত্রিক পথে কর্মচারীদের আন্দোলন করার অধিকার কি হারিয়ে গেল? কোনও আধিকারিক স্মারকলিপি নেবেন কি না, তা দেখাও কি শ্রমমন্ত্রীর এক্তিয়ারে পড়ে?”
এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার এ দিন বলেন, “বুধবার যে সব কর্মী এসেছিলেন, তাঁদের আচরণ ছিল আপত্তিকর। ওঁরা আদৌ তৃণমূলের সদস্য নন। শ্রমমন্ত্রীকে আমি ফোন করলে উনি ওঁদের স্মারকলিপি নিতে নিষেধ করেন।” আবার শ্রমমন্ত্রীর বক্তব্য, “ওই সংগঠন আসল না নকল জানি না। কাজের ক্ষেত্রে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ বরদাস্ত করা হবে না।” বিদ্যুৎবাবু বলেন, “আমাদের সংগঠন বৈধ। প্রদীপবাবুর অফিসে ঢুকতেই তিনি শ্রমমন্ত্রীর নিষেধাজ্ঞার কথা শোনান। আমাদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণ তিনি দেখলেন কখন?” বিদ্যুৎবাবুর আরও ক্ষোভ, “আসলে পূর্ত বিভাগে হরেক দুর্নীতি ও অনিয়মের তদন্তের দাবি জানাতেই ওই আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করতে চাওয়া হয়েছিল। এখন মনে হচ্ছে, দলে আমরাই যেন ব্রাত্য হয়ে যাচ্ছি। বামফ্রন্ট আমলেও এ রকম ছিল না!” |