সরকারি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগে মামলা রুজুর প্রায় ২ বছরের মাথায় উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য পীযূষকান্তি সাহা ও রেজিস্ট্রার দিলীপ সরকার সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট পেশ করল পুলিশ। সোমবার শিলিগুড়ি অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারকের আদালতে ওই চার্জশিট দাখিল করেন বর্তমান তদন্তকারী অফিসার তথা শিলিগুড়ির ডিএসপি প্রদীপ পাল। পুলিশ সূত্রের খবর, চার্জশিটে পীযূষবাবু, দিলীপবাবু ছাড়াও বেসরকারি সংস্থার ৪ জনের নাম রয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব মামলার শুনানি শুরু হবে বলে আসা করছে পুলিশ। দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার আনন্দ কুমার বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রাক্তন উপাচার্য পীযূষকান্তি সাহা ও রেজিস্ট্রার দিলীপ সরকারের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ নয়ছয়, বিশ্বাসভঙ্গ ও দুর্নীতি দমন আইনে অভিযোগ দায়ের করেন। সেই মতো মামলা রুজু হয়। তদন্তের পরে সব দিক খতিয়ে দেখে নিয়ম মেনে ৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করা হয়েছে।” বস্তুত, চার্জশিট পেশ নিয়ে দীর্ঘ সময় লাগছে কেন তা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই প্রশ্ন উঠছিল। সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি জানতে পারেন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তাঁর সচিবালয় থেকে চার্জশিট পেশে কেন টালবাহানার অভিযোগ উঠছে তা নিয়ে খোঁজখবর শুরু হয়। তার পরেই দ্রুত পট পরিবর্তন হয়। আইনমন্ত্রীর দফতর থেকে চার্জশিট পেশে বাধা নেই বলে অভিমত জানানো হয়। কয়েকদিনের মাথায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কর্মসমিতির বৈঠকে রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশের অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। প্রাক্তন উপাচার্যের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশের অনুমোদনের বিষয়টি আচার্য তথা রাজ্যপালের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্তও নেয় কর্মসমিতি। এরই মধ্যে দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের উল্লেখ করে চার্জশিট পেশের প্রক্রিয়া ত্বরাণ্বিত করার নির্দেশ দেন। সরকারি পদাধিকারীদের বিরুদ্ধে মামলা রুজুর ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমোদন চেয়েও তা চার মাসের মধ্যে না-মিললে তদন্তকারী অফিসার উপযুক্ত ধারা প্রয়োগ করতে পারবেন বলে সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, চার্জশিটের সঙ্গে যে নথিপত্র জমা হয়েছে তাতে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রতিলিপিও সংযোজিত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, ২০০৮ সালে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপা সহ নানা খাতে আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে সন্দেহে ২ দফায় তদন্ত হয়। ওই দুটি তদন্তের রিপোর্টে আশঙ্কা করা হয়, প্রায় দেড় কোটি টাকার হিসেবে গরমিল রয়েছে। পরের বছর দুটি রিপোর্ট খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে এক সদস্যের কমিটি। ওই ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশের কাছে এফআইআরের পক্ষে মত দেন তৎকালীন অ্যাডভোকেট জেনারেল বলাই রায়। কিন্তু, তৎকালীন কর্মসমিতি এফআইআরের পক্ষে মত দেয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে ২০১০ সালের মার্চ মাসে এফআইআর করেন উপাচার্য অরুণাভ বসু মজুমদার। তার পরেই আগাম জামিন পান প্রাক্তন পরীক্ষা নিয়ামক তথা রেজিস্ট্রার দিলীপবাবু। ২০১১ সালের জুন মাসে প্রাক্তন পরীক্ষা নিয়ামক তথা রেজিস্ট্রার, প্রাক্তন উপাচার্যের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি চান তৎকালীন তদন্তকারী অফিসার তথা ডিএসপি সীতারাম সিংহ। বিশেষ ক্ষমতাবলে উপাচার্য চার্জশিট পেশের প্রয়োজনীয় দিলেও তা আদালতে গ্রাহ্য হবে না বলে জানায় পুলিশ। এর পরেই চার্জশিট পেশের অনমুতির জন্য আচার্যের কাছে ও উচ্চ শিক্ষা দফতরের দ্বারস্থ হন উপাচার্য। চলতি ফেব্রুয়ারিতে শিলিগুড়িতে গিয়ে বিষয়টি জানতে পেরে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। |