রাজ্যে দ্বিতীয় ও জেলায় সর্বাধিক সন্তান প্রসব করানোয় আসানসোল মহকুমার বরাকর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে পুরস্কৃত করেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। সম্প্রতি এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ও কর্মীদের হাতে শংসাপত্র-সহ একটি স্মারক ও এক লক্ষ টাকা পুরস্কার তুলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। এই উল্লেখযোগ্য সাফল্যের জন্য জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক থেকে মহকুমা প্রশাসনের কর্তা ও জন প্রতিনিধিদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মীরা।
বর্ধমান জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসীম দাস মালাকার জানান, গত বছর এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রায় ১৪০০ জন প্রসূতির সন্তান প্রসব করানো হয়েছে। জেলার অনেক ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রই এই সংখ্যার ধারেকাছে যেতে পারেনি। গোটা রাজ্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নিরিখে বরাকর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে বলে অসীমবাবু জানিয়েছেন। এখানেই শেষ নয়, এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে বহির্বিভাগে বছরে প্রায় ৬৬ হাজার রোগীর স্বাস্থ্যপরীক্ষা হয়। জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা জানিয়েছেন, এই কেন্দ্রটি কুলটি পুরসভার অন্তর্গত একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র হলেও এখানে পুরুলিয়া এবং পার্শ্ববর্তী রাজ্য ঝাড়খণ্ড থেকে প্রতি দিন বহু রোগী চিকিৎসা করাতে যান। |
এ দিকে প্রশ্ন উঠেছে, উন্নত পরিষেবা দেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেলেও প্রতি দিন পরিকাঠামোগত সমস্যায় ভুগছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। কেন্দ্রটির মুখ্য চিকিৎসক অনির্বাণ রায় বলেন, “এখানে রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রসূতিদের সংখ্যাও বাড়ছে। চিকিৎসা করতে আমাদের কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু পরিকাঠামোগত উন্নতি হলে আরও ভাল পরিষেবা দিতে পারতাম।” চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অভিযোগ কতটা সত্যি তা স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ঘুরেই বোঝা গিয়েছে। জরাজীর্ণ একটি ভবন, পানীয় জলের অভাব রয়েছে। হাসপাতালটি নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য পর্যাপ্ত সাফাইকর্মী নেই। বষার্য় ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মী নেই। স্বাস্থ্যকর্মীরও অভাব রয়েছে। সম্প্রতি জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও কুলটি পুরসভার উদ্যোগে ভবনটির সামান্য সংস্কার করা হচ্ছে। পানীয় জল আনার ব্যবস্থা হচ্ছে। কিন্তু চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আবাসনগুলির কোনও সংস্কার করা হচ্ছে না। আবাসিকদের প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ পেরিয়ে পানীয় জল বয়ে আনতে হয়। আবাসনগুলির অবস্থা এতটাই জরাজীর্ণ, যে কোনও দিন তা ভেঙে পড়তে পারে। এত কষ্ট স্বীকার করেও চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকমীদের অনলস প্রচেষ্টার জন্যই সেরার সম্মান জুটেছে বলে দাবি মুখ্য চিকিৎসকের।
বরাকর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এই সমস্যাগুলির কথা জানেন জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসীম দাস মালাকার। তিনি বলেন, “আমি জানি কর্মীদের দূর থেকে জল বয়ে এনে চিকিৎসা করতে হয়। তবুও গত পাঁচ বছর ধরে ওরা এই ধারাবাহিকতা রেখে আসছেন। আমরা এই সমস্যাগুলি সমাধানের উদ্যোগ করেছি।”
স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির সাফল্য মহকুমার সম্মান বাড়িয়েছে বলে দাবি করেছেন মহকুমাশাসক (আসানসোল) তথা মহকুমা রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান সন্দীপ দত্ত। তিনি বলেন, “অনেক দিন থেকেই সমস্যাগুলি জানি। কিছু সমস্যার সমাধানও করেছি। আরও কিছু কাজ বাকি রয়েছে। তাও করে দেওয়া হবে।” সম্প্রতি কুলটির পুরপ্রধান তথা বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসক ও কর্মীদের অভিনন্দন জানিয়ে গিয়েছেন। তিনি কথা দিয়েছেন, আগামী অর্থ বাজেটে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির সমস্যা নিরসনে ব্যবস্থা নেবেন। সাফল্যে খুশি সবাই। সীমিত ক্ষমতা ও পরিকাঠামোর মধ্যে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রচেষ্টাকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন। উন্নয়ন করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন সব মহলের কর্তারা। এখন দেখার শেষ পর্যন্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির অবস্থা কী দাঁড়ায়। |