সকালে আড়াইশো মিলিলিটার দুধ, দশ গ্রাম চিনি, পঞ্চাশ গ্রাম রুটি। সঙ্গে একটা ডিম, একটা কলা।
দুপুরে চারশো গ্রাম ভাত, একশো গ্রাম ডাল (জল সমেত), দেড়শো গ্রামের বেশি তরকারি (সবুজ সব্জি-আলু মিশিয়ে)। সঙ্গে পঞ্চাশ গ্রাম মাছ অথবা দু’টুকরো মুরগির মাংস (তারও ওজন হবে ৫০ গ্রাম)।
বিকেলে চা-বিস্কুট।
রাতে নিরামিষ। শুধু সপ্তাহে এক দিন ডিম।
রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলোয় এই হল গিয়ে রোগীপিছু সারা দিনের পথ্য-তালিকা। যার জন্য সরকার দাম ধরেছে মাত্র ৩৭ টাকা!
মঙ্গলবার সরকারি আইনজীবীর মুখে এই তথ্য শুনে কলকাতা হাইকোর্ট তো অবাক! বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত সরকারি কৌঁসুলির কাছে জানতে চান, দেশের কোথায় এই দরে এত খাবার পাওয়া যায়? সরবরাহকারীরা কী ভাবে এত সস্তায় রোগীদের জন্য এ হেন মান ও পরিমাণের পথ্য জোগাচ্ছেন, তারও ব্যাখ্যা চান বিচারপতি।
সরকারি কৌঁসুলির কাছে অবশ্য ব্যাখ্যা ছিল না। ক্ষুব্ধ হাইকোর্ট শেষে রাজ্যের স্বাস্থ্য-সচিবের কাছে বিস্তরিত রিপোর্ট চেয়েছেন। রোগীদের পথ্য বাবদ রাজ্যের বাজেট বরাদ্দ কত, কারা তা সরবরাহ করেন, সরবরাহ করা সেই খাবারের মান ও ওজন ঠিক থাকে কি না, প্রক্রিয়াটিতে কী ভাবে নজরদারি চালায় সরকার ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে সচিবকে ১৬ মার্চের আগে হাইকোর্টে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। কারণ, ১৬ মার্চ মামলার পরবর্তী শুনানি ধার্য করেছেন বিচারপতি করগুপ্ত।
মামলাটির আবেদনকারীর নাম আব্দুর রেজ্জাক। তিনি লুম্বিনি পার্ক মানসিক হাসপাতাল-সহ কয়েকটি সরকারি হাসপাতালে রান্না করা খাবার সরবরাহ করেন।
২০০২ থেকে করে আসছেন। হাইকোর্টের কাছে তাঁর বক্তব্য: ২০০৯-এ রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, হাসপাতালে রোগীপিছু দৈনিক পথ্যের দর ৩৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৩ টাকা করা হবে। কিন্তু সেই সরকারি সিদ্ধান্তটি এখনও কার্যকর হয়নি।
রেজ্জাকের দাবি: সাকুল্যে ৩৭ টাকায় মান-ওজন বজায় রেখে তালিকা অনুযায়ী খাবার সরবরাহ করা তাঁর পক্ষে তো নয়ই, কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। “অথচ সকলে চোখ বুজে রয়েছেন। আখেরে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরাই।” অভিযোগ করেছেন রেজ্জাক।
আবেদনকারীর আইনজীবীর কাছে হাসপাতালের খাদ্য-তালিকা চেয়েছিলেন বিচারপতি। দেখা যায়, প্রাতরাশ থেকে নৈশাহার সবই তার অন্তর্ভুক্ত। তবে শুধু প্রাতরাশ ও দুপুরের খাবারের মান, ওজন আর দামের খতিয়ান দেখে বিচারপতি এমনই বিস্মিত হয়ে যান যে, তিনি বিকেল-রাতের দিকে এগোননি। বরং জানতে চান, রাজ্য সরকারের পথ্য-বাজেট কত? জিজ্ঞাসা করেন, এত সুলভে এমন খাবার অন্য কোথায় পাওয়া যায়?
কোনও উত্তরই দিতে পারেননি সরকারি কৌঁসুলি। |