আলু রক্ষা করতেই বোরো ধানে জল দেয়নি তিস্তা সেচ দফতর। মঙ্গলবার এমনই যুক্তি দেওয়া হয়েছে তিস্তা সেচ দফতরের পক্ষ থেকে। প্রতিশ্রুতি সত্বেও তিস্তা ক্যানালে পর্যাপ্ত জল না থাকায় জেলা জুড়ে প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে অভিযোগ। ক্যানালের তলানিতে পড়ে থাকা জল চাষের জমিতে না যাওয়ায় ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৩৬ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খোদ কৃষি দফতরের পাঠানো রিপোর্টেই একথা স্বীকার করা হয়েছে। মঙ্গলবার তিস্তা সেচ কর্তৃপক্ষের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, সদর ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় আলু চাষ হয়েছে। ক্যানালে বেশি পরিমাণ জল দিলে সেই জল আলুর জমিতে ঢুকে ফসলের ক্ষতি করে দেবে এই আশঙ্কা থেকেই নিয়ন্ত্রিত পরিমাণ জল দেওয়া হয়। যদিও সেচ দফতরের এই যুক্তিকে ‘অবান্তর’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে কৃষি দফতর। ক্যানালের জল নিয়ে রাজ্য সরকারের দুই দফতরের মধ্যে বিরোধও তুঙ্গে উঠেছে। এদিন তিস্তা সেচ দফতর জানিয়েছে, গত ১৬ জানুয়ারি এবং ৯-১০ ফেব্রুয়ারি ক্যানালে বেশি পরিমাণ জল ছাড়া হলে সদর ব্লকের বিভিন্ন এলাকার আলু চাষিরা আপত্তি জানান। আলু চাষিদের তরফে তিস্তা ক্যানাল কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। তার পরেই ক্যানালে নিয়ন্ত্রিত পরিমাণ জল ছাড়া শুরু হয় বলে সেচ দফতর জানিয়েছে। তবে, প্রতিশ্রুতি মতো বোরো ধান চাষের জন্য পর্যাপ্ত জল যে ক্যানালে নেই সে কথাও সেচ দফতরের বিবৃতিতেই স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। তিস্তা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষের নির্বাহী বাস্তুকার শ্যামল আদিত্য বলেন, “ক্যানালে জল ছাড়া হলে আলু চাষে মারাত্মক ক্ষতি হবে বলে চাষিরা জানান। তাই ফেব্রুয়ারি মাসের দু’দিন জল দেওয়ার পরে পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। অথচ কোনও কোনও মহল থেকে জল না থাকার অভিযোগ তুলে তিস্তা সেচ দফতরকে হেয় করা হচ্ছে।” জলপাইগুড়ির সহ কৃষি অধিকর্তা নবেন্দু বসাক বলেন, “নিজেদের গাফিলতি আড়াল করতেই আলুকে ঢাল হিসেবে বেছে নিয়েছে সেচ দফতর।” কৃষি দফতরের বক্তব্য, গত বছরের নভেম্বরের শুরুতে অর্থাৎ মরসুমের গোড়াতেই ক্যানালে জল দেওয়া হবে বলে সেচ দফতর জানায়। সেই মতো ক্যানাল এলাকার কৃষকদের আলু বা অন্যান্য শস্য চাষ না করে শুধুমাত্র বোরো চাষ করতে বলা হয়। সেচ দফতর ও কৃষি দফতরের যৌথ বৈঠকেই এই সিদ্ধান্ত হয়। সরকারি সিদ্ধান্ত না মেনে কোনও কৃষক আলু চাষ করলে কোন যুক্তিতে তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে বোরো চাষিদের সেচ দফতর বঞ্চিত করছে সে প্রশ্ন তুলেছে কৃষি দফতর। কৃষি দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, সদর ব্লকের মন্ডলঘাট, খড়িয়া, বোয়ালমারি, গড়ালবাড়ি এলাকায় ক্যানালের পাশে অন্তত ৬ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। সে তুলনায় ক্যানাল লাগোয়া জমিতে আলু চাষের পরিমাণ শ’পাঁচেক হেক্টরও ছাড়ায়নি। জলপাইগুড়ি জেলার কৃষি দফতরের শস্য রক্ষা আধিকারিক তপন সরকার বলেন, “হাতেগোনা কয়েকজন মাত্র ক্যানাল লাগোয়া এলাকায় আলু চাষ করেছেন। মুষ্টিমেয় কয়েকজনের জন্য হাজার হাজার কৃষককে জল দেওয়া হল না। সেচ দফতরের এমন যুক্তি অবান্তর।” জল নিয়ে দুই দফতরের বিরোধ এতটাই তুঙ্গে যে, আগামী বছর থেকে বোরো মরসুমের আগে তিস্তা সেচ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক না করার হুমকি দিয়েছেন কৃষি দফতরের কর্তারা। |