আসন্ন রাজ্যসভা ভোটে একটি আসনে লড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আর্জি জানিয়েছে বিমল গুরুঙ্গের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। মঙ্গলবার দার্জিলিংয়ে মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিনয় তামাং সাংবাদিকদের জানান, ইতিমধ্যেই মমতার কাছে চিঠি পাঠিয়ে ওই অনুরোধ করা হয়েছে। তৃণমূলের তরফে অবশ্য এদিন এ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব ওই বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। ওঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে থাকলে তিনি বিষয়টি দেখবেন। এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।”
প্রসঙ্গত, সাধারণত প্রতি পদে যাদের সমালোচনা করে মোর্চা, সেই সিপিএমের মনোভাবকে এ ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে যুক্তি পেশ করেছে মোর্চা। বিনয় তামাংয়ের যুক্তি, “রাজ্যসভায় একটি আসনে বরাবর দার্জিলিংয়ের প্রতিনিধি থাকেন। বামেদের তরফে আগে সাঙ্গপাল লেপচা ছিলেন। এখন রয়েছেন সমন পাঠক। তাঁর মেয়াদ ফুরোচ্ছে। পাহাড়ের মানুষের কথা মাথায় রেখে বরাবরই দার্জিলিং থেকে রাজ্যসভায় একজনকে রাখা হয়েছে। বামেরা এবার কী করবেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার। কিন্তু আমরা চাই এ বার তৃণমূল আমাদের একজনকে রাজ্যসভায় যাওয়ার সুযোগ দিক। তাতে রাজ্যসভায় পাহাড়বাসীর দাবিদাওয়ার দিকগুলি তুলে ধরতে সুবিধা হবে।” বর্তমানে মোর্চার বিধায়ক সংখ্যা তিন। মোর্চা সমর্থিত নির্দল বিধায়ক রয়েছেন কালচিনিতে। ফলে মাত্র চার বিধায়ক নিয়ে মোর্চা হঠাৎ কেন রাজ্যসভার আসন পাওয়ার দাবিদার হল, সে প্রশ্নে জল্পনা শুরু হয়েছে রাজ্য-রাজনীতিতে। মোর্চার অন্দরের খবর, রাজ্যসভায় তিনটি আসন নিশ্চিত হলেও চতুর্থ আসনে কংগ্রেসকে সমর্থন না-করে তৃণমূল প্রার্থী দিতে চাইছে জেনেই মোর্চা নেতৃত্ব ওই সিদ্ধান্ত নেন। মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতা যা বলছেন, তার মর্মার্থ মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে ‘সহযোগিতা’ করতেই দর-কষাকষিতে না গিয়ে জিটিএ চুক্তি করা হয়েছে। পাহাড়ে আলাদা রাজ্যের দাবিতে আন্দোলনও হচ্ছে না। তরাই-ডুয়ার্সের কিছু এলাকার অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আওয়াজ তোলা হলেও তা ‘বাড়াবাড়ি’ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়নি। পাহাড়ে শান্তি থাকায় মুখ্যমন্ত্রীও স্বস্তিতে। এমতাবস্থায় একটি রাজ্যসভার আসন তাঁদের ‘পাওনা’। তাঁদের আর্জি মমতা একেবারে উড়িয়ে দিতে পারবেন না বলেই মোর্চার ওই নেতাদের ধারণা। দ্বিতীয়ত, মোর্চা সূত্রের খবর, তৃণমূল চতুর্থ প্রার্থীকে জেতাতে মোর্চার চার বিধায়কের উপর ভরসা করছে। মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা বিনয় তামাংয়ের কথায়, “ধরতে গেলে আমাদের চার বিধায়ক রয়েছেন। তা ছাড়া, মুখ্যমন্ত্রীর পাহাড়ের প্রতি মনোভাব দেখে বিপুল পাহাড়বাসীর প্রত্যাশার পারদ আকাশছোঁয়া। আমরা ওঁর কথা শুনছি। আশা করি উনিও আমাদের আর্জি উড়িয়ে দেবেন না।”
বিনয় তামাংয়ের কথায় স্পষ্ট, পাহাড়ে শান্তির ‘বিনিময়ে’ তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে রাজ্যসভার সাংসদ চাইছেন। মোর্চার এক নেতার কথায়, “সমস্ত বিষয় মাথায় রেখেই মোর্চার তরফে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ওই দাবি করা হয়েছে।” দেখার, মমতা মোর্চার আর্জি কী করে সামলান! |