জিটিএ-র প্রথম নির্বাচন পুরনো এলাকাতেই, ধন্দে রয়েছে মোর্চা
‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ) আইন বিধিবদ্ধ করতে বিজ্ঞপ্তি জারির প্রক্রিয়া শুরু করেছে রাজ্য সরকার। মুখ্যসচিব সমর ঘোষ জানান, আজ, বুধবার ‘জিটিএ’ আইন বলবৎ হওয়ার বিজ্ঞপ্তি জারি হবে। তার পরেই দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিল (ডিজিএইচসি) এলাকায় নির্বাচনের প্রাথমিক কাজ শুরু হবে। তবে নতুন আইন অনুসারে জিটিএ-র প্রথম নির্বাচন হবে পুরনো ‘ডিজিএইচসি’ এলাকাতেই।
সরকারি এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে ‘ধন্দে’ পড়েছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। কারণ, মোর্চা নেতৃত্বের একাংশ মনে করছেন, ‘জিটিএ’ গড়ার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হলে পাহাড়ে উন্নয়নের কাজে গতি আসবে। আবার তরাই-ডুয়ার্সের একটি মৌজাও অন্তর্ভুক্ত না করে ‘জিটিএ’-এলাকায় নির্বাচন হলে পাহাড়ে বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে পড়ার আশঙ্কাও করছেন মোর্চার কিছু শীর্ষ নেতা। মোর্চার ‘অস্বস্তি’ বাড়ানোর উপাদান আরও আছে। ‘জিটিএ’-র আওতায় তরাই-ডুয়ার্সের ‘এক ইঞ্চি জমি’ও যেতে দেওয়া হবে না বলে ফের জানিয়ে দিয়েছে আদিবাসী বিকাশ পরিষদ।
মুখ্যসচিব মঙ্গলবার মহাকরণে স্বরাষ্ট্র সচিব জ্ঞানদত্ত গৌতম, রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পান্ডে, ডিজিএইচসি-র প্রশাসক অনিল বর্মা প্রমুখকে নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানে জিটিএ-র বিধিবদ্ধ বিজ্ঞপ্তি জারির পরে দ্রুত নির্বাচন করার বিষয়টি কী ভাবে করা হবে, তার রূপরেখা তৈরি হয়। বৈঠকের পরে মুখ্য সচিব বলেন, “বিজ্ঞপ্তি জারি করার পরে নির্বাচন করানোর প্রাথমিক কাজ আরম্ভ হবে। শুরু হবে নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্বিন্যাস প্রক্রিয়া। তার পরে হবে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা। পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে দু’মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়।”
‘জিটিএ’ গঠনের জন্য যে নির্বাচন হবে তার পরিচালনার দায়িত্ব অবশ্য রাজ্য সরকারের হাতেই থাকছে। মুখ্য সচিব জানান, ওই নির্বাচন পরিচালনা করার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। তিনি বলেন, “কেন্দ্র বা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের নির্দিষ্ট দায়িত্ব রয়েছে। দেশের সাধারণ নির্বাচন, পুরসভা, পঞ্চায়েত ভোটের বাইরে এই নির্বাচন হতে চলেছে। ফলে, রাজ্য সরকার এর জন্য যে বিধি-নিয়ম তৈরি করবে, তার ভিত্তিতে দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক এই নির্বাচন পরিচালনা করবেন।” সেই সঙ্গে এলাকা পুনর্বিন্যাসের কাজও রাজ্যই শুরু করবে বলে তিনি জানান।
‘জিটিএ’ নিয়ে এই মুহূর্তে মোর্চা নেতৃত্ব অবশ্য ‘ধন্দে’। দার্জিলিংয়ের পাহাড় ছাড়াও, তরাই এবং ডুয়ার্সের ৯৬টি মৌজা ‘জিটিএ’-এলাকায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি রয়েছে মোর্চার। তবে ‘জিটিএ’-চুক্তিতে তরাই-ডুয়ার্সের বাড়তি এলাকা অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এ ব্যাপারে দুই এলাকার আমজনতার বক্তব্য, বিশেষজ্ঞদের মতামত জানতে রাজ্য সরকার প্রাক্তন বিচারপতি শ্যামল সেনকে নিয়ে একটি কমিটি গড়েছে। সম্প্রতি সেই কমিটির মেয়াদ আরও ছ’মাস বাড়ানো হয়েছে।
মোর্চা নেতাদের এক পক্ষ চাইছেন, আপাতত ‘জিটিএ’-এলাকায় নির্বাচন করে পাহাড়ের জন্য বাড়তি অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থা করা হোক। জোর দেওয়া হোক উন্নয়নে, যাতে স্থানীয় বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থান তাড়াতাড়ি হয়। অন্য পক্ষ চাইছেন, শ্যামল সেন কমিটির রিপোর্ট পেশ না হওয়া পর্যন্ত ‘জিটিএ’ গঠনের জন্য রাজ্যের উপরে চাপ সৃষ্টি করা হোক। মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের কয়েকজন জানান, কী রণকৌশল নেওয়া হবে তা ঠিক করতে শীঘ্রই দলের সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ বৈঠকে বসবেন। মোর্চার প্রচার সচিব তথা বিধায়ক হরকাবাহাদুর ছেত্রী এ দিন বলেন, “গোড়া থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলা হয়েছে, তরাই ও ডুয়ার্সের এলাকা ‘জিটিএ’-এর অন্তর্ভুক্ত করা না হলে, নির্বাচনে যেতে সমস্যা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার একতরফা নির্বাচন ঘোষণা করলে ফের পাহাড়ে অশান্তি হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।”
ঘটনা হল, শ্যামল সেন কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের পর থেকেই ‘উষ্মা’ বাড়ছে মোর্চা নেতৃত্বের। মোর্চা সূত্রের খবর, ঘনিষ্ঠ মহলে দলের অনেক শীর্ষ নেতাই তরাই-ডুয়ার্সের কোনও মৌজা আদৌ ‘জিটিএ’-তে পাওয়া যাবে কি না, সে ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তার উপরে এ দিন রাজ্য সরকার পুরনো ‘ডিজিএইচসি’ এলাকাতেই জিটিএ-র প্রথম নির্বাচন হওয়ার কথা জানিয়ে দেওয়ায় ‘অস্বস্তি’ বেড়েছে মোর্চা নেতৃত্বের একাংশের। যদিও মুখ্যসচিব এ দিন বলেন, “কমিটির রিপোর্টের সঙ্গে এই নির্বাচনের সম্পর্ক নেই।”
পক্ষান্তরে ‘জিটিএ’র আওতায় তরাই-ডুয়ার্সের জমি ছাড়তে নারাজ আদিবাসী বিকাশ পরিষদ। সংগঠনের রাজ্য সভাপতি বীরসা তিরকি এ দিন বলেন, “আমরা জিটিএ-চুক্তির বিরোধিতা করছি। কেননা, যে এলাকা নিয়ে প্রাথমিক ভাবে জিটিএ চুক্তি হয়েছে সেখানে অন্তত ১৮টি মৌজায় আদিবাসীরা অনুপাতে মোট জনসংখ্যার অর্ধেক। তাই জিটিএ-তে তরাই-ডুয়ার্স অন্তর্ভুক্তির ভাবনাও অবান্তর।” তাঁর সংযোজন, “উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা বলে আমরা চুপচাপ রয়েছি। পরীক্ষা শেষ হলে জিটিএ-বিরোধিতায় আমাদের জনসমর্থন দেখিয়ে দেব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.