কোন্দল তুঙ্গে
প্রাক্তন মন্ত্রী সরলকে ‘বহিষ্কারের’ সুপারিশ দলে
রাজ্যের নানা প্রান্তে শাসক তৃণমূলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব যখন নিত্য শিরোনামে, সেই সময়েই অন্তর্দ্বন্দ্ব তুঙ্গে পৌঁছল বিরোধী বামফ্রন্টের শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকে! যার জেরে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সরল দেবকে সরাসরি দল থেকে ‘বহিষ্কার’ করার সুপারিশ করছেন তাঁর জেলা উত্তর ২৪ পরগনার ফ ব নেতৃত্ব! সরলবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ লাগাতার দল-বিরোধী কাজ এবং ‘শত্রুপক্ষের সঙ্গে হাত মেলানো’র।
ফ ব সূত্রের খবর, দলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলী ‘সর্বসম্মত ভাবে’ প্রস্তাব নিয়েছে, সরলবাবুকে ‘বহিষ্কার’ করা হোক। বারাসতে সোমবার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে উপস্থিত ন’জনের কেউই সরলবাবুর পক্ষে দাঁড়াননি। এক সদস্যের মৃত্যুর পরে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যসংখ্যা এখন ১১। তার মধ্যে স্বয়ং সরলবাবু এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এক নেতা (যিনি মধ্যমগ্রামে গত বিধানসভা নির্বাচনে দলের প্রার্থী ছিলেন) ইদানীং দলের বৈঠকে আসছেন না। সোমবারও তাঁরা ছিলেন না। স্বভাবতই সরলবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগের বিরোধিতা করার কেউ সেখানে ছিলেন না। বরং, ওই জেলারই আর এক প্রাক্তন মন্ত্রী মোর্তাজা হোসেন সরলবাবুর কিছু কাজকর্মের বিরুদ্ধে বৈঠকে সরব হয়েছেন বলে দলীয় সূত্রের খবর।
সরল দেব
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সভাপতি সরলবাবু ফ ব-র কেন্দ্রীয় ও রাজ্য কমিটির সদস্য। একই সঙ্গে তিনি দলের শ্রমিক সংগঠন টিইউসিসি-র রাজ্য সভাপতিও। টিভি চ্যানেলের আলোচনাতেও তিনি নিয়মিত মুখ। জেলার সুপারিশ হাতে এসে পৌঁছলে ফ ব-র রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, সরলবাবুর মতো প্রবীণ নেতার বিরুদ্ধে তিনি ‘কড়া’ হবেন, নাকি জেলার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বলবেন।
ফ ব-র উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক তথা প্রাক্তন বিধায়ক হরিপদ বিশ্বাস অবশ্য দলের সুপারিশের বিষয়ে প্রকাশ্যে বিশেষ কিছু বলতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, “সরলবাবু দীর্ঘ দিন বৈঠকে আসেন না। কিছু সমস্যা হচ্ছে। তবে উনি কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য কমিটির সদস্য। আমরা কোনও সুপারিশ পাঠালে রাজ্য স্তরে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
সরলবাবুও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেও বিশেষ কিছু বলতে চাননি। সরলবাবুর বক্তব্য, “মতপার্থক্য আছে বলে কিছু দিন বৈঠকে যাচ্ছি না। তবে জেলা বামফ্রন্টের কর্মসূচিতে যাচ্ছি। রাজারহাটের মিছিলেও গিয়েছি। বাকি আর কিছু বলব না। যা বলার, অশোকবাবু বলতে পারবেন।”
এর আগে ৮টি জেলায় বিশেষ সম্মেলন ডেকেও দলেই আপত্তির জেরে পিছিয়ে আসতে হয়েছিল ফ ব-র রাজ্য নেতৃত্বকে। তার মধ্যে অন্যতম জেলা উত্তর ২৪ পরগনায় বৈঠক করতে গিয়ে ‘অপ্রীতিকর’ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছিল রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জয়ন্ত রায়কে। জানুয়রি মাসে সেই ঘটনার পর থেকেই জেলার আর কোনও বৈঠকে যাননি সরলবাবু। তাঁর বিরুদ্ধে জেলা সম্পাদকণ্ডলীর সদস্যদের অভিযোগ, দলের প্রয়াত প্রবাদপ্রতিম নেতা চিত্ত বসু থেকে শুরু করে অশোক চক্রবর্তী, অমর গঙ্গোপাধ্যায়, নীহার বসু, দুুলাল মুখোপাধ্যায় পর্যন্ত একাধিক নেতার সঙ্গে তাঁর ‘অসহযোগিতা’র রেকর্ড দীর্ঘ দিনের। সাত বারের বিধায়ক এবং দু’বারের মন্ত্রী সরলবাবু যখনই ক্ষমতার বাইরে থেকেছেন, তখনই দলের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছেন। জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতেই ‘গুরুতর’ অভিযোগ উঠেছে, গত বিধানসভা ভোটে হাড়োয়া, হাবড়া ও বারাসত কেন্দ্রে বাম প্রার্থীদের হারানোর জন্য তিনি তৃণমূলের সঙ্গে ‘গোপনে আঁতাঁত’ করেছিলেন। ক্ষমতা পরিবর্তনের পরেও হাওড়া জেলা থেকে নির্বাচিত তৃণমূলের দুই মন্ত্রীর সঙ্গে তিনি দলের ‘অনুমোদন’ ছাড়াই বৈঠক করেছেন। জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “দলের মধ্যে পারস্পরিক বিরোধ থাকতেই পারে। তার জন্য আন্তঃপার্টি সংগ্রামও চলতে পারে। কিন্তু দলীয় বিবাদে এ ভাবে তৃণমূলকে জড়িয়ে ফেলা দুর্ভাগ্যজনক।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.