পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফলাফলে তাঁদের দল যে ‘বির্পযস্ত’ নয়, পরিসংখ্যান-বিশ্লেষণ দিয়ে তা রাজ্যের নেতা-কর্মীদের বোঝাতে চান প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব।
কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী নিজে ওই ফলাফল নিয়ে যথেষ্ট ‘উদ্বিগ্ন’। দলের ‘সাংগঠনিক দুর্বলতা’ এবং প্রার্থী বাছাইতেও গোলমাল ছিল বলে তিনি স্বীকার করেছেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের সাংগঠনিক এই সমস্ত ‘দুর্বলতা’র কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য জানাচ্ছেন, গোয়া ছাড়া বাকি চার রাজ্যে দলের আসন ও শতাংশের হিসাবে ভোট বেড়েছে। তা যত সামান্যই হোক না কেন।
বস্তুত, একধাপ এগিয়ে প্রদীপবাবু ঠিক করেছেন, পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্কালে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের ‘মনোবল’ ধরে রাখতে পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফল পর্যালোচনা ও পরিসংখ্যান দিয়ে জেলা কংগ্রেস সভাপতি, দলীয় বিধায়ক ও সাংসদদের চিঠি দেবেন। তাঁর কথায়, “পঞ্চায়েত ভোটের আগে কর্মীদের চাঙ্গা রাখার লক্ষ্যেই পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফলের বিশ্লেষণ তুলে ধরতে চাই।” সংসদের অধিবেশনের জন্য প্রদীপবাবু এখন দিল্লিতে। ফিরেই তিনি ওই চিঠি পাঠাবেন। সেই সঙ্গে আগামী রবিবার প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটির সভাতেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।
মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বা মধ্য কলকাতা জেলা কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ঘোষও মনে করেন, কংগ্রেস কর্মীদের ‘হতাশ’ হওয়ার মতো ফল পাঁচ রাজ্যে হয়নি। বরং তাঁদের বক্তব্য, সর্বভারতীয় রাজনীতিতে ‘প্রধান শত্রু’ বিজেপি-র চেয়ে কংগ্রেস ভাল ফল করেছে।
খানিকটা ‘ব্যতিক্রম’ অবশ্য রায়গঞ্জের সাংসদ দীপা দাশমুন্সি। তাঁর কথায়, “নিঃসন্দেহে কংগ্রেসের আসন, ভোট বেড়েছে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে আমরা আরও ভাল করতে পারতাম যদি বুথ স্তরে আমাদের ভোট মেশিনারি সচল থাকত। সেটা সর্বক্ষেত্রেই ঠিক মতো কাজ করলে ভাল ফল হয়। এটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।” এক ধাপ এগিয়ে কংগ্রেস নেতা ও বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায় বলেন, “খারাপের মধ্যে ভালটা খোঁজার চেষ্টা ভাল। কিন্তু মানুষের মন ঘোরানোর কাজটা কিন্তু কঠিন। পঞ্জাবে প্রত্যাশা থাকা সত্ত্বেও কংগ্রেস যে ক্ষমতায় আসতে পারল না। গোয়ায় যে ক্ষমতা হাত ছাড়া হয়েছে তা মানুষের মনে আছে। এই প্রেক্ষাপটে আমাদের কাজ করতে হবে। এটা মনে রাখা দরকার।”
প্রদীপবাবু অবশ্য বলেন, “আমি কংগ্রেসকর্মী ও নেতাদের চিঠি দিয়ে বলব, চিন্তার কিছু নেই। আমরা হারানোর জায়গায় নেই। এগিয়ে যাওয়ার পথেই রয়েছি।”
প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক মায়া ঘোষ ওই পরিসংখ্যান তৈরি করেছেন। অন্যান্য দল কত আসন ও শতাংশের হিসাবে কত ভোট পেয়েছে, তা-ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। প্রদীপবাবু বলেন, “আমরা দেখেছি, উত্তরপ্রদেশে আমাদের আসন বেড়েছে। গতবার পেয়েছিলাম ২২টি। এ বার পেয়েছি ২৮টি। ভোটও বেড়েছে ৬ শতাংশ।” পাশাপাশি, উত্তরপ্রদেশে বিজেপি-র চারটি আসন এবং প্রায় দু’শতাংশ ভোট কমেছে। যে তথ্য উল্লেখ করে কংগ্রেস নেতা ও রাজ্যের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়াও বলেছেন, “উত্তরপ্রদেশে আমরা ক্ষমতায় আসব, এটা আমরা কখনও বলিনি। কিন্তু মায়াবতী সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কংগ্রেসও লড়াই করেছে। তা-ও উল্লেখযোগ্য।”
কংগ্রেস ‘উল্লেখযোগ্য’ সাফল্য পেয়েছে উত্তরাখণ্ড ও মণিপুরে। উত্তরাখণ্ডে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও বিজেপি-কে পিছনে ফেলে সরকার গড়েছে তারা। প্রদেশ কংগ্রেসের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০০৭-এ সেখানে কংগ্রেস পেয়েছিল ২৯.৫৯ শতাংশ ভোট এবং আসন পেয়েছিল ২১টি। এবার ভোট বেড়ে হয়েছে ৩৩.৮ শতাংশ এবং আসন বেড়ে হয়েছে ৩২টি। সেখানে বিজেপি-র আসন ৩৪টি থেকে তিনটি কমে হয়েছে ৩১টি। তবে বিজেপির ভোট গতবারের তুলনায় এক শতাংশ বেড়েছে। মণিপুরে ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেসই। কিন্তু পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার পরেও তাদের আসন বেড়েছে ১২টি। কংগ্রেস ভোট পেয়েছে ৪২.০৪ শতাংশ। এ বার অবশ্য তৃণমূল মণিপুরে সাতটি আসন পেয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেসের বিশ্লেষণে তৃণমূল পেয়েছে ১৭ শতাংশ ভোট। প্রদীপবাবুর ব্যাখ্যায়, “মণিপুরে গতবার অন্যান্য দল পেয়েছিল ৩০টি আসন। এবার সেই তাদের ভোট ও আসন দুই’ই কমেছে। এ বার তারা ছ’টি আসন পেয়েছে। বাকি ২৬টি আসনের একাংশ যেমন তৃণমূলের ঝুলিতে গিয়েছে, তেমন আমাদের দিকেও এসেছে।”
পঞ্জাবেও গতবারের তুলনায় কংগ্রেসের আসন বেড়েছে দু’টি। তবে শতাংশের হিসাবে ভোট একই আছে। গতবারের মতোই এবারও কংগ্রেস পেয়েছে প্রায় ৪১ শতাংশ ভোট। তুলনায় বিজেপি ও অকালি দলের ভোট কমেছে। গোয়ায় কংগ্রেস ক্ষমতা হারিয়েছে। আসন এবং ভোটও কমেছে। গতবারের ১৬টি আসন কমে হয়েছে ন’টি। কিন্তু সব মিলিয়ে দলের ‘সাফল্য’র পাল্লাই ভারি বলে কংগ্রেস নেতাদের দাবি। |