দু’দশকেরও বেশি কারাবাস হয়ে গিয়েছে নোয়াপাড়ার পালবাড়ি হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি রণবীর বসুর। তাঁর বয়স এখন ৬৫। রাজ্যের নতুন সরকার মুক্তি দিচ্ছে তাঁকে। একই সঙ্গে মুক্তি পাচ্ছেন অন্যান্য মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত আরও ৩৯ জন বন্দি।
পালবাড়ির মেয়ে সুদীপার সঙ্গে তাঁর অঙ্ক ও বিজ্ঞানের শিক্ষক রণবীর বসুর বিশেষ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। কিন্তু সুদীপার পরিবার সেই সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি। তাই ১৯৯১ সালের ২৯ মার্চ সুদীপার বাবা, মা, ঠাকুরদা ও ঠাকুরমাকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলা হয়। সেই মামলায় রণবীর মাস্টারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত। দীর্ঘ কারাবাসেও তিনি শিক্ষকতা ছাড়েননি। প্রেসিডেন্সি জেলে থাকাকালে সেখানকার অন্য বন্দিদের পড়াতেন। |
এখন আছেন লালগোলা মুক্ত কারাগারে। সেখানে অন্যান্য আসামি এবং বাইরের ছাত্রদের পড়িয়ে মাসে তিনি কয়েক হাজার টাকা রোজগার করেন বলে কারা দফতর সূত্রের খবর।
মঙ্গলবার মহাকরণে রণবীর-সহ ৪০ জন বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “সরকারে আসার আগে আমরা বলেছিলাম, যাঁরা দীর্ঘদিন জেলে আছেন, তাঁদের মুক্তির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।” ৩০ জন রাজনৈতিক বন্দিকে ইতিমধ্যে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। সরকার নিয়োজিত বন্দি মুক্তি কমিটি ৫২ জন রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার সুপারিশ করেছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ওই ৫২ জনের মধ্যে দু’জনের মুক্তির ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের আপত্তি আছে। ৩০ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি ২০ জন বন্দির বিরুদ্ধে আদালতে যে-সব মামলা আছে, সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন যে-সব আসামিকে মুক্তি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন, তাঁদের কেউ অবশ্য রাজনৈতিক বন্দি নন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “নানান মামলায় ওই ৪০ জন দীর্ঘদিন জেলে আছেন। আগে কে কী করেছেন, না-করেছেন, সেটা এখন আর গুরুত্বপূর্ণ নয়। ওঁরা যাতে এ বার ভাল থাকেন, শান্তিপূর্ণ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেন, সেই জন্যই মুক্তি দেওয়া হচ্ছে।” ওই ৪০ জনের মধ্যে সর্বজ্যেষ্ঠ বন্দি মুর্শিদাবাদের সহদেব ঝা (৭৪)। |
বন্দি মুক্তি নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকের পথে মমতা। মঙ্গলবার মহাকরণে। ছবি: সুমন বল্লভ। |
আর সর্বকনিষ্ঠ হুগলির রাজেন্দ্র রবিদাস (৪১)। বিভিন্ন দিক যাচাই করে পর্যায়ক্রমে আরও কিছু বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
বন্দি মুক্তির সরকারি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন ‘ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ জুরিডিক্যাল সায়েন্সেস’ বা এনইউজেএস-এর লিগাল এড সোসাইটির অধিকর্তা অনির্বাণ চক্রবর্তী। সেই সঙ্গেই তিনি বলেন, “বেশ কয়েক হাজার বন্দির বিচার চলছে বছরের পর বছর। এই ধরনের বিচারাধীন বন্দিদেরও মুক্তি দিতে বলছে জাতীয় মানবাধিকার মিশন, সুপ্রিম কোর্ট, কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রক। বিষয়টি বিবেচনার জন্য বহু বার নানা জায়গায় আবেদন-নিবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এ রাজ্যে সেই প্রক্রিয়া এখনও শুরুই হয়নি।” এ ব্যাপারে উদ্যোগী হতে মুখ্যমন্ত্রীকে আবেদন জানান অনির্বাণবাবু। তবে এ রাজ্যে বিচারাধীন বন্দিদের মুক্তির ব্যাপারে ইতিমধ্যে বেসরকারি স্তরে উদ্যোগী হয়েছে ‘কমনওয়েলথ হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভ’। ওই সংগঠনের প্রতিনিধি মধুরিমা ধানুকা জানান, রাজ্যে প্রায় ১৭ হাজার বন্দি আছেন, যাঁদের বিরুদ্ধে কোনও অপরাধ প্রমাণিত হয়নি। |