কান্দিতে কুপিয়ে খুন কংগ্রেস নেতা
দিনেদুপুরে গ্রামের রাস্তায় তাড়া করে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে খুন করা হল এক যুবককে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর নাম ইমামুল হক (৪০)। ইমামুল কান্দির কংগ্রেসের মহালন্দি অঞ্চল কমিটির সভাপতি। সোমবার ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। স্থানীয় বিধায়ক কংগ্রেসের অপূর্ব সরকারের দাবি, “ইমামুল এলাকার জনপ্রিয় কংগ্রেস নেতা ছিলেন। তাঁকে ঘিরে ওই এলাকায় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা পোক্ত হচ্ছিল। সে কারণেই সিপিএমের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাঁকে পরিকল্পিত ভাবে কুপিয়ে খুন করেছে।” তবে সিপিএমের কান্দি জোনাল কমিটির সম্পাদক কাজল
মৃত ইমামুল হক।
চক্রবর্তীর বক্তব্য, “এই খুনের সঙ্গে আমরা কোনও ভাবেই জড়িত নই। অকারণে আমাদের নাম জড়িয়ে কংগ্রেস সস্তা রাজনীতি করতে চাইছে। কংগ্রেসের অন্তর্দ্বন্দ্বের ফলেই ওই যুবক খুন হয়েছেন।” মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “এই খুনের ঘটনায় রাজনীতি জড়িত নয় বলেই আমাদের ধারণা। যারা খুন করেছে, তাদের চিহ্নিত করা গিয়েছে। প্রত্যেকেই এলাকার কুখ্যাত দুষ্কৃতী। তবে সকলেই পলাতক। তাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।”
ইমামুল এক ঠিকাদারের অধীনে মহালন্দিতে জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতরে অস্থায়ী কর্মী। তিনি পাম্প চালানোর কাজ করেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই দিন দুপুর পৌনে দু’টো নাগাদ ইমামুল সেই পাম্প চালাতে গিয়েছিলেন। মহালন্দিতে এই দিন দুপুরে ওই পাম্প ঘর থেকে সামান্য দূরে একটি জলসার আয়োজন করা হয়েছিল। গ্রামের মানুষ সেখানেই ছিলেন। বাকি গ্রাম ছিল সুনসান। ইমামুল একাই ছিলেন পাম্পের ঘরে। আচমকাই তাঁকে ঘিরে ধরেন কয়েকজন সশস্ত্র যুবক। ইমামুল পালাতে চেষ্টা করেন। মহালন্দির পাড়ার মধ্যে দিয়ে ছুটতে থাকেন তিনি। কিন্তু সামান্য দূর যাওয়ার পরেই একটি বাড়ির কাদা লেপা উঠোনে পড়ে যান তিনি। সেখানেই কাঁচা কাদায় তাঁর পা আটকে যায়। সেই অবস্থাতেই তাঁকে ঘিরে ধরে ওই যুবকেরা একের পর এক কোপ মারতে থাকে। ইমামুলের গলার নলি কেটে দেওয়া হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় সেখানেই পড়ে থাকেন তিনি। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।
শোকার্ত পরিবার। ঘটনার তদন্তে পুলিশ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ইমামুল খুবই জনপ্রিয় ছিলেন, বহু লোকের উপকার করেছেন তিনি। সম্প্রতি এক ব্যক্তির দেড় লক্ষাধিক টাকা হারিয়ে যাওয়া নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। ইমামুলের দাদা লুৎফর শেখ বলেন, “অন্য কোনও সমস্যার সমাধানের জন্য ভাই যেমন এগিয়ে যেত, তেমন ওই টাকা হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাতেও সে জড়িয়ে পড়েছিল। তাতেই তার শত্রু তৈরি হয়।” সিপিএম নেতা কাজলবাবু বলেন, “ওই টাকার সমস্যার সমাধান করাকে কেন্দ্র করে কংগ্রেসের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যেই অন্দর্দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল। মাস দু’য়েক আগে ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রামে বোমাবাজিও হয়েছিল। পুলিশও সব কথা জানে।” এসপি হুমায়ুন কবীর বলেন, “ওই টাকা নিয়ে সমস্যাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় থানায় অভিযোগ করা হয়েছিল। তারপরে এলাকার শান্তি বজায় রাখতে দু’পক্ষকে ডেকে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হয়। দু’পক্ষই কথা দিয়েছিল, শান্তি বজায় রাখা হবে। কিন্তু তারপরেও কেন এই ঘটনা ঘটল, তা আমরা খতিয়ে দেখছি।”
তবে কংগ্রেস নেতাদের দাবি, ইমামুলকে চক্রান্ত করেই খুন করা হয়েছে। অপূর্ববাবু বলেন, “ইমামুলের নেতৃত্বে এলাকায় উন্নয়নের কাজে জোয়ার এসেছিল। সে কারণেই তাঁকে খুন করা হল।” পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ইমামুলের দু’টি বিবাহ। প্রথম স্ত্রী তাহামিতা বিবি বলেন, “আমার স্বামী কিছু দিন ধরেই আতঙ্কে ভুগছিলেন। বারবার বলতেন, আমি কোনওদিন খুন হয়ে যাব। কারা তাঁকে খুন করতে পারে, সে কথাও আমাকে বলে গিয়েছিলেন। সে কথা যে সত্যি হবে, তা আমি ভাবতেও পারিনি। তবে সব কথাই আমি পুলিশকে বলেছি। দোষীদের শাস্তি হলে আমার শান্তি হবে।” ইমামুলের দুই ছেলে এক মেয়ে। সবাই নাবালক। তাঁর মৃত্যুতে গোটা গ্রামই শোকাচ্ছন্ন। এলাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। জেলা পুলিশের কর্তারা গিয়ে তদন্ত শুরু করেছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.