মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদে মঙ্গলবারও বাজেট পাশ করানো গেল না। তবে, বামফ্রন্ট পরিচালিত ওই জেলা পরিষদে বাজেট পাশ এ দিনও থমকে গেল নিছকই কংগ্রেসের বিরোধীতায়, এমনটা আর বলা যাচ্ছে না। কারণ, জেলা কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এ দিন স্পষ্টই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, উন্নয়নের প্রশ্নে বাজেট-বিরোধীতা আর নয়।
২০১০-১১ সালের আর্থিক বছরের বাজেট পাশের দিন স্থির হয়েছিল গত বছরের ২৩ জুলাই। কিন্তু সে সময়ে বাজেট পাশের তীব্র বিরোধিতা করে কংগ্রেস সদস্যরা। সভায় হাজির থেকেও সই করেননি তাঁরা। ফলে কোরাম না হওয়ায় তখনও বাজেট পাশ করা সম্ভব হয়নি।
তবে, জেলা কংগ্রেস যে বাজেট পাশে আর বিরোধীতা করবে না তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে নওদার কংগ্রেস বিধায়ক আবু তাহের খানের কথায়। তিনি বলেন, “বাজেট পাশ না হওয়ায় প্রায় এক বছর ধরে জেলার উন্নয়ন থমকে রয়েছে। আটকে গিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প। আমরা উন্নয়ন বিরোধী নই। তাই বাজেট পাশে কবে সম্মতি জানাবে কংগ্রেস তা দ্রুত জানিয়ে দেওয়া হবে।” |
এ ব্যাপারে জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা স্থানীয় সাংসদ অধীর চৌধুরীর যে মত রয়েছে তা সোমবারই জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। বস্তুত সে প্রশ্নেই জেলা পরিষদের অন্যতম সদস্য, প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি সিদ্দিকা বেগম, দলের বিরোধী দল নেতা বানী ইসরাইল-সহ বেশ কয়েক জন সদস্যের সঙ্গে বিরোধ বেধেছিল জেলা কংগ্রেসের। অধীর অনুগামীরা সিপিএমের সঙ্গে আঁতাত করে বাজেট পাশ করানোর চেষ্টা করছেন, এই দাবিতে সোমবারই দল ছেড়েছেন বাণী। দলত্যাগীদের ইচ্ছুক তালিকায় রয়েছেন সিদ্দিকাও। অধীর তথা কংগ্রেস সদস্যদের সংখ্যগরিষ্ঠের সম্মতি সত্ত্বেও মঙ্গলবার বাজেট পাশ করানো গেল না কেন? এ দিন সভায় বামফ্রন্টের ৪৮ জন এবং কংগ্রেসের ৩৭ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু সভায় হাজির থাকলেও কংগ্রেস সদস্যরা সই করেননি। সভায় কোরাম-এর জন্য প্রয়োজন ছিল নূন্যতম ৫৫ জনের সাক্ষর। তা না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত সবা ভেস্তে যায়। কংগ্রেসের তরফে জানানো হয়েছে, দলীয় সদস্যরা উপস্থিত হয়েও এ দিন সই করতে পারেননি বিরোধী দলনেতা দলত্যাগ করায়। তবে নতুন বিরোধী দল নেতা দ্রুত নির্বাচন করেই বাজেট পাশ করানোর ব্যাপারে সভা ডাকতে বলা হবে বলে জেলা কংগ্রেসের পক্ষে জানানো হয়েছে।
যা শুনে, সদ্য দলত্যাগী বাণী ইসরাইল বলেন, “বাজেট পাশ করানোর ক্ষেত্রে সিপিএম এবং কংগ্রেসের মধ্যে যে গোপন বোঝাপড়া তৈরি হয়েছিল এ থেকেই তা প্রমাণিত। বামপ্রন্টের কাছে সামান্য সৌজন্যও পাইনি আমরা। তাই ঠিক করা হয়েছিল বাজেট পাশের বিরোধীতা করা হবে। কিন্তু অধীরবাবুরা সিপিএমের সঙ্গে আঁতাত করে বাজেট পাশের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। আমরা সরে যেতেই তাই বাজেট পাশ করানোর তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল।”
এ দিন সভা শেষে জেলাসভাধিপতি পূর্ণিমা দাস অবশ্য বলেন, “দলীয় সদস্যদের এলাকা উন্নয়নের বিষয় নিয়ে সভায় কংগ্রেসের কোনও সদস্য মন্তব্য করেননি। সভা শেষে তাঁরা কি বলছেন আমার জানার কথা নয়। তাঁরা বিরোধী দলনেতা মনোনীত করে বাজেট পাশের দিনক্ষণ আমাদের জানিয়ে দেবেন বলেছেন। আমরা অপেক্ষায় রয়েছি।” |