তাঁর রাজনৈতিক পুনরুত্থানে অন্যতম উৎক্ষেপণ-বিন্দু নন্দীগ্রাম। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর দশ মাসেও এক বারও অবশ্য নন্দীগ্রামের মাটি ছোঁননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী জানুয়ারি মাসে সৈকত উৎসব উপলক্ষে তিন দিন পূর্ব মেদিনীপুরে থেকেও নন্দীগ্রামে আসেননি। ফেব্রুয়ারিতে রেলের অনুষ্ঠানে বাজকুলে এলেও নন্দীগ্রাম তাঁর দেখা পায়নি। এ নিয়ে অভিমান রয়েছে নন্দীগ্রামের আনাচে-কানাচে। মুখ্যমন্ত্রীর নিজের দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেই।
আজ, সেই ১৪ মার্চই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নন্দীগ্রামে টেনে আনছে। আজ, জমি-রক্ষা আন্দোলনের শহিদ-স্মরণ অনুষ্ঠান। ২০০৭-এর ১৪ মার্চের সেই গুলি চালনায় ১৪ জন নিহত হয়েছিলেন। পরের বছর থেকেই ভূমি-উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির ব্যানারে শুরু হয় শহিদ-স্মরণের অনুষ্ঠান। অবশ্য তৃণমূল নেত্রী কোনও বারই ১৪ মার্চের শহিদ-স্মরণে নন্দীগ্রামে আসেননি। এ বারই প্রথম। এ দিন বিকেলে নন্দীগ্রাম কলেজ-মাঠের সভায় উপস্থিত থাকবেন তিনি। সকালে অবশ্য সোনাচূড়া ও গোকুলনগরে বরাবরের মতোই স্মরণসভা হবে। সোনাচূড়া থেকেই শুরু জমি-রক্ষার লড়াই। সেখানে কেন আসবেন না ‘দিদি’এমন প্রশ্নও ভাসছে বাতাসে। |
অভিমানের সঙ্গেই আজকের নন্দীগ্রাম মমতার জন্য অপেক্ষায় কিছু অস্বস্তি নিয়েও। প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও ক্ষমতায় এসে নন্দীগ্রামের জমি-রক্ষা আন্দোলনের কর্মীদের উপর থেকে মামলা প্রত্যাহার এখনও করেনি সরকার। নিগ্রহে অভিযুক্ত পুলিশকর্মী-আধিকারিকদের শাস্তির ব্যাপারেও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি রাজ্য সরকার। সেই ২০০৭-এর নভেম্বর থেকেই বন্দি-জীবন কাটাচ্ছেন সোনাচূড়ার রাধেশ্যাম গিরি, গৌরহরি মণ্ডল, প্রকাশ মুনিয়ান। বন্দিমুক্তির আশ্বাসও রক্ষা করা হয়নি।
সেই সঙ্গে বিরোধীহীন নন্দীগ্রামে ‘শাসক’ তৃণমূলের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগই জমেছে। দুর্নীতি, অনিয়ম, অহমিকা, ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের অভিযোগ এবং সর্বোপরি অন্তর্বিরোধে জড়িয়ে দল। সম্প্রতি কালীচরণপুরের শিক্ষাকেন্দ্রে সহায়িকা নিয়োগে কোর্টের নির্দেশে অনিয়ম ঠেকাতে বিডিও উদ্যোগী হওয়ায় তাঁকে রীতিমতো ঘেরাও করে রেখেছিলেন শাসকদলের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। গোকুলনগরের কেশবপুরে রাস্তার কাজে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে দলেরই মহিলা পঞ্চায়েত সদস্যকে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ স্বদেশ দাসের বিরুদ্ধে। জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শেখ সুফিয়ান নিজে নন্দীগ্রামে রাস্তার কাজে দুর্নীতির তদন্ত চেয়েছেন!
অস্বস্তি কাটাতে নেত্রী কী বার্তা দেনসে দিকেও আজ লক্ষ্য থাকবে নন্দীগ্রামের তৃণমূল কর্মীদের। |