ঠান্ডা ফুটবলের পরে কোচের গরম বিস্ফোরণ
উত্তর কোরিয়া-৪ (জন, রি কোয়াং, পাক, রি মিয়ং)
ভারত-০
মন গরম গরম কথা বলার ‘দুর্নাম’ তো এত দিন শুধু কলকাতার কোচদেরই একচেটিয়া ছিল!
• ফুটবলারদের কোনও দায়িত্ববোধ ছিল না। • জাতীয় দলের হয়ে খেলতে এসে ক্লাবের সঙ্গে কথা বলে গেছে! • পরের মরসুমের জন্য পা বাঁচিয়ে খেলেছে! • খেলতে গিয়ে চোট যাতে না পায়, সেটাই ভেবে গিয়েছে! • দলে কোনও লিডার ছিল না। কেউ টিমকে তাতানোর চেষ্টা করেনি। • মন আর শরীর মাঠে ছিল না। ক্লাবের কন্ট্র্যাক্ট নিয়ে ভেবে গেছে। • টিমের কোনও অ্যাটিটিউড বলতে গেলে ছিল না। • আমার দেখা জাতীয় দলে সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্স এটাই।
ঠান্ডা মেজাজের স্যাভিও মিদেইরা চার গোলে হেরে ফিরে এ সব কথা বলছিলেন আর বিশ্বাস হচ্ছিল না! কথা কোথায়? এ তো এক-একটা বোমা! ঠোঁটকাটা অমল দত্ত, নইমুদ্দিন, সুব্রত ভট্টাচার্য, সুভাষ ভৌমিকরাও এত বিস্ফোরক অভিযোগ তোলেননি ফুটবলারদের বিরুদ্ধে! জাতীয় দলেও না, ক্লাব দলেও না। উত্তর কোরিয়া ম্যাচটার শেষ দিকেই উত্তুরে ঝড় এসে লণ্ডভণ্ড করে দিল মাঠের হোর্ডিং। ভারতীয় শিবিরে আরও বড় ঝড়।
উত্তর কোরিয়া খেললেই যত রাজ্যের ঠান্ডা হাজির হয়! বিশ্বকাপে ব্রাজিল-কোরিয়া ম্যাচই হোক, বা চ্যালেঞ্জ কাপে ভারত-কোরিয়া। ম্যাচটায় ভারত জমে গেল। গোটা ম্যাচে বিপক্ষ গোলে একটা মাত্র শট। ঠান্ডার দিনে ঠান্ডা ফুটবলের পরে গা গরম করাল কোচের বিস্ফোরণ। সম্প্রতি ভারতীয় ফুটবলে কোচদের সাংবাদিক সম্মেলন মানে ছিল, গোল গোল কিছু কথাবার্তা। না লিখলেও কিছু এসে যেত না। যন্ত্রণাবিদ্ধ স্যাভিও পাল্টে দিলেন ছবিটা। ক্ষোভ উগরে।
এমনিতে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে ভারতকে দেখে পুরনো প্রবাদের সেই তিন বাঁদরের গল্প মনে পড়ছিল। ওই তিনটে লাইন দিয়েই শেষ করা যেত ম্যাচ রিপোর্ট। খারাপ কথা বলব না। খারাপ জিনিস দেখব না। খারাপ কথা শুনব না। তিন মিনিটের মধ্যে গোলকিপার শুভাশিস রায়চৌধুরীর দাঁড়িয়ে গোল হজম করা দিয়ে শুরু হয়েছিল দিন। ‘আত্মসমর্পণ’ সিনেমার চিত্রনাট্যে আর কোনও মোড় নেয়নি। তা হলে কী দরকার, খারাপ কথা বলে? খারাপ কথা লিখে?
কাঠমান্ডুর বিদেশি পর্যটকদের প্রিয় জায়গা থামেলের দোকানে দোকানে নানা রকম পুতুল ঝোলে। ভারতীয় ফুটবলারদের মনে হচ্ছিল ও রকম নির্বাক পুতুল। ঝিমোচ্ছেন। খেলতে হয় বলে খেলা। চেঁচামেচি করে অন্যদের তাতানোর ধারাটাই ভুলে গেছেন। কোনও মতে নব্বই মিনিট কাটিয়ে দিতে পারলেই হল! বিশ্বকাপে ব্রাজিলের ক্রমপর্যায় ছিল ১, উত্তর কোরিয়ার ১০৫। স্কোর লাইন ছিল ২-১। এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপে উত্তর কোরিয়ার (১১১) সঙ্গে ভারতের (১৫৮) ক্রমপর্যায়ের ফারাক অনেক কম। স্কোরলাইন দাঁড়াল ৪-০। ভাগ্য ভাল, কোরিয়ানরা এ দিন তিন জনের বেশি বিশ্বকাপারকে নামায়নি।
ক্ষিপ্ত কোচের অনেক কথাই ঠিক। কিন্তু তিনি কী করলেন? স্যাভিওর ফুটবল দেখে অঙ্কের সেই ছাত্রদের কথা মনে পড়বে। যারা একটা ফর্মুলাই জানে। এবং যাবতীয় অঙ্ক কষতে যায় সেই ফর্মুলায়। হাউটনেরও এই বদভ্যাস ছিল। ৪-৪-২ ছক তো ৪-৪-২ কখনওই পাল্টাতেন না। বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে এই কোরিয়ানরা ৫ ডিফেন্ডার নিয়ে ৫-৩-২ ছকে খেলেছিল। শক্তিশালী বিপক্ষকে জমি ছাড়তে না দেওয়ার ছক। সেটাও তো এ দিন ভাবা হল না। ওই যে হাউটন-ছাত্রদের একটাই সমীকরণ জানা ৪-৪-২।
মনে আছে, এই কোরিয়ানদের বিরুদ্ধে কোনও মতে জিতে জো’বার্গে ব্রাজিল কোচ দুঙ্গা বলেছিলেন, “ওরা পাসিং দারুণ করেছে। রক্ষণও অসাধারণ। যারা রক্ষণ জমাট রেখে টাফ খেলে, তাদের বিরুদ্ধে ভাল খেলা কঠিন।” স্যাভিও ও সব বাড়তি ডিফেন্ডারের তত্ত্বে যাননি। জনা সাতেক কোরিয়ান আছড়ে পড়ল ভারতীয় বক্সে। নবি, গৌরমাঙ্গিরাও ভুল করতে লাগলেন। সেই ভুল ছড়াতে লাগল পুরো বক্সে। যে টিমে সিনিয়রই নেই, সেখানে সমীর নায়েককে এই ম্যাচে বিশ্রাম দেওয়ার দরকার পড়ল! এর মধ্যে বড় চোট নিয়ে বেরিয়ে গেলেন সুনীল ছেত্রী, ভাসুম (সুব্রত-মর্গ্যানদের পাল্টা বোমার জন্য তৈরি থাকুন)। তখনও সমীরকে নামানো হল না। নামল কে? লেনি ও ফ্রান্সিস ফার্নান্ডেজ, সাবিথ। চেনেন নাকি?
পরিসংখ্যান সব সময় সত্যি বলে না ঠিকই, আবার বলেও। তিনটে ম্যাচে ভারতের গোলের সিটার তৈরি হয়েছে চারটি। তাজিকিস্তান ম্যাচে ৩, ফিলিপিন্স ম্যাচে ১, কোরিয়া ম্যাচে ০। শেষ পাঁচ ম্যাচে ভারতের স্কোরলাইনগুলো লিখলে ভাল মানুষ স্যাভিওর জমে থাকা রাগের বিস্ফোরণের কারণ টের পাওয়া যায়। ০-৫, ০-৩, ০-২, ০-২, ০-৪! আপনি কি পদত্যাগ করবেন? এমন চাঞ্চল্যকর বিস্ফোরণের পরে, এই ফুটবলারদের নিয়ে ভবিষ্যতে কী করে চলবেন? বার দুই একই প্রশ্ন করে দেখলাম, স্যাভিও পদত্যাগের কথা বললেন না। শুধু ঠান্ডা গলায় বললেন, “আমি দেশে ফিরেই ফেডারেশনকে সব রিপোর্ট দেব। আমার চুক্তি তো মে পর্যন্ত।” হয়তো টের পাচ্ছেন, ফেডারেশন তাঁকে আর রাখবে না। এটাই শেষ ম্যাচ হতে পারে। তাই ক্ষোভের বারুদে আগুন লেগে দাউদাউ কাঠমান্ডুতে। ভারতীয় ফুটবলে অশান্তির আগুন।
অবশ্য এত সব আর বলা কী জন্য? ওই বাঁদরদের গল্পেই তো রয়েছেখারাপ কথা বলব না!

ভারত: শুভাশিস, নবি, গৌরমাঙ্গি, রাজু, নির্মল, অ্যান্টনি, রোকাস, জুয়েল (লেনি), ভাসুম (ফ্রান্সিস), সুনীল (সাবিথ), সুশীল।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.