সোমবার রাতে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছিলেন অস্ট্রেলিয়া চলে যাবেন। চোট সারাতে। চার সপ্তাহের জন্য। তা সত্ত্বেও ‘এক বার শেষ চেষ্টা করে দেখিই না’ ভেবেই খেয়েছিলেন কিছু ওষুধ। আর তাতেই ‘সুস্থ’।
আগের রাত পর্যন্ত ‘অনিশ্চিত’ ছিলেন যিনি, সেই টোলগে ওজবের কাঁধে চেপেই ৯ বছর পর আইএফএ শিল্ড ফাইনালে উঠল ইস্টবেঙ্গল। ২০০৩-এর পর আবার। মরসুমের প্রথম ট্রফি জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছেও ট্রেভর মর্গ্যানের মুখে অবশ্য হাসি নেই। “ট্রফি! ফেড কাপের কথা মনে নেই। সেখানেও ফাইনালে উঠেছিলাম!” সতর্ক লাল-হলুদের ব্রিটিশ কোচ।
বোতাফোগো না প্রয়াগ ইউনাইটেড মর্গ্যানের সঙ্গে কথা বলে মনে হল, ফাইনালের প্রতিপক্ষের চেয়েও তাঁর বেশি চিন্তা নিজেদের পারফরম্যান্সের ওঠা-নামা নিয়ে। হঠাৎ দুর্দান্ত থেকে হঠাৎ খারাপ এ মরসুমে ইস্টবেঙ্গলের এটাই যেন ভবিতব্য।
পৈলান অ্যারোজ আহামরি দল নয়। দলে কোনও বিদেশি নেই-এর চেয়েও যেটা বলার, এআইএফএফের টিমের গড় বয়স কুড়ির নীচে। অভিজ্ঞতাও কম। তাদের বিরুদ্ধে ইস্টবেঙ্গল প্রথমার্ধটা খেলল বেশ দাপিয়ে। টোলগে-পেন-রবিন-সঞ্জু চারমূর্তি ওই সময় যেন এক-একটা বোমা হয়ে হানা দিচ্ছিলেন বিপক্ষের বক্সে। ডাউন দ্য মিডল বা উইং ধরে পাস খেলে বিপক্ষের বক্সে পৌছে যাওয়া। কী অসাধারণ সমঝোতা! |
কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধটা? সব কিছুই ওলট-পালট। গোল নষ্টের প্রদর্শনী। বিপক্ষের বক্সের সামনে খেই হারিয়ে ফেলা। মিস পাস। উইং ভোঁতা। মাঝমাঠের দাদাগিরিও উধাও। দেখে মনে হবে, এ জন্যই টিমটা খেতাবের সামনে গিয়েও পা পিছলোয়।
টোলগের একমাত্র গোলটা লাল-হলুদে যখন বর্ণচ্ছটা, তখন। প্রথমার্ধের মাঝামাঝি পেনের পাস ধরে ছোট্ট একটা টোকা এবং আউটসাইড ডজ। কেটে গেলেন পৈলানের দুই ডিফেন্ডার। ডানদিক থেকে নেওয়া কোনাকুনি শটটা দ্বিতীয় পোস্টে লেগে ঢুকল। গোলটা মনে রাখার মতো হলেও ভারতে তাঁর সেরা পাঁচ গোলের মধ্যে এটাকে রাখতে নারাজ টোলগে। “গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে প্রয়োজনীয় গোল। তবে প্রথম পাঁচের মধ্যে রাখব না।”
বব হাউটনের পরামর্শে ইন্ডিয়ান অ্যারোজ তৈরি করেছিল ফেডারেশন। ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ তৈরিই লক্ষ্য। ইন্ডিয়ান বাদ দিয়ে অ্যারোজের আগে পৈলান যোগ হওয়ার পর টিমটার অধঃপতন হয়েছে। স্টেডিয়াম ছাড়ার সময় হাল সিটির প্রাক্তন ম্যানেজার মর্গ্যানও বললেন, “ওদের গত বারের দলটা অনেক ভাল ছিল।”
বুলপিন, সুখবিন্দর সিংহের বিদায়ের পর সুজিত চক্রবর্তী এখন অ্যারোজের দায়িত্বে। এখনও টিমটা গোছাতে পারেননি। যুব টিম। অনেক বদল হয়েছে। অভিজ্ঞতা কম থাকবে। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বেসিক স্কিলের ঘাটতি থাকবে কেন? কেনই বা বিপক্ষ বক্সে বারবার খেই হারাবেন অলউইন, অভিনব, হোলিচরণরা।” টিমটা কোন ফর্মেশনে খেলল তা নিয়েও ম্যাচের পর চূড়ান্ত ধোঁয়াশা। ৪-৫-১ না, ৪-৩-৩? নাকি ৪-৪-২? কোচ বললেন, “আসলে বিপক্ষকে দেখে নিজেদের বদলানোর অভিজ্ঞতাটা নেই বলেই সমস্যা হয়েছে।”
তিনি যে যুক্তিই খাড়া করুন, এ দিনের অ্যারোজ ভবিষ্যতে স্যাভিওর কাঠমান্ডুর টিমের চেয়ে ভাল হবে, এই আশা করা যাচ্ছে না।
ইস্টবেঙ্গল: গুরপ্রিত, সৈকত, ওপারা, গুরবিন্দর, সুবোধ, পাইতে (অ্যালভিটো), পেন, সঞ্জু (বলজিৎ), সুশান্ত (রবার্ট), রবিন, টোলগে। |