অভয় আছে, বন্ধ দরজা খোলার ইঙ্গিত নেই
চিন তেন্ডুলকরের মাঠের মধ্য থেকে প্রতীক্ষা। তাঁর হচ্ছে মাঠের বাইরে বসে প্রতীক্ষা।
সচিনের প্রতীক্ষা একশো সেঞ্চুরির। মনোজ তিওয়ারির প্রতীক্ষা জীবনের প্রথম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি পাওয়ার পরেও বিস্ময়কর ভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া ভারতীয় ওয়ান ডে দলের দরজা খোলার।
ঢাকা আসা ইস্তক দু’টো মুখ দেখতে দেখতে মনে হচ্ছে, দু’টোই ভীষণ যন্ত্রণার ছবি। ভেতরে ভেতরে রক্তাক্ত হওয়ার করুণ ছবি।
এক জন ক্রিকেটের কিংবদন্তি। অন্য জন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংসারে জায়গা করতে চাওয়া তরুণ। অথচ বয়স এবং নিজেদের ক্রিকেটীয় অবস্থানের বিশাল দূরত্ব ভুলে গিয়ে আজ দু’জনেই যন্ত্রণার একই বিন্দুতে নিক্ষিপ্ত। দু’জনের মধ্যে তফাত? সচিনের মতো মহীরুহ খেলব বললে তিনি খেলবেন। সমস্ত ট্র্যাফিক সিগন্যাল ওখানেই থেমে যাবে। মনোজের মুখ ফুটে ‘আমাকে এক বার খেলিয়েই দ্যাখো না’ বলার মতো জমিটাও পায়ের তলায় নেই।
সচিনকে নিয়ে সারা ক্রিকেটমহলের প্রতীক্ষা। কবে তাঁর শততম সেঞ্চুরি আসবে? দগ্ধ হতে হতে সেই প্রতীক্ষার অবসান তাঁকেই ঘটাতে হবে। মনোজের প্রতীক্ষার অবসান ঘটানোর চাবিকাঠি নিজের হাতে নেই। সেটা অধিনায়ক ধোনির হাতে। কোচ ডানকান ফ্লেচারের হাতে। সচিন জানেন, এটা পাল্টে যাওয়া ড্রেসিংরুম। এখানে শ্রদ্ধা আছে। প্রার্থনা আছে। কিন্তু আড়ালে-আবডালে তাঁকে ঘিরে প্রশ্নও আছে। মনোজ জানেন না, শেষ ম্যাচে সেঞ্চুরি করেও তিনি সুরেশ রায়না বা রোহিত শর্মাদের চেয়ে কোথায় পিছিয়ে পড়লেন!
হোটেলের সুইমিং পুলে মনোজ। ছবি: সুমিত ঘোষ।
ফিল্ডিং যেটা কিনা ধোনির টিমের নির্বাচনী মাপকাঠিতে খুব উপরের দিকে রয়েছে, তাতে মনোজ কারও থেকে পিছিয়ে নেই। মনোভাবে নেই। শরীরীভাষাতেও যে নেই, সেটা টিমের পরিচালন গোষ্ঠী থেকেই বলা হয়েছে। রানে? রায়না অস্ট্রেলিয়ায় ত্রিদেশীয় সিরিজে ৮ ম্যাচে করেছেন ১৮২ রান। গড় ২৬। রোহিত শর্মার পারফরম্যান্স আরও জঘন্য। ৫ ম্যাচে ৭৯ রান। গড় ১৫.৮০। মনোজ সেখানে প্রায় চার বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটজীবনে এখন পর্যন্ত খেলেছেন মাত্র ছ’টা ম্যাচ। তাতে তাঁর গড় ৩৩। শেষ ম্যাচে চেন্নাইয়ে ১০৪ নট আউট। বাকি পাঁচ ম্যাচের দু’টোতে ওয়েস্ট ইন্ডিজে অধিনায়ক রায়না তাঁকে খেলান ওপেনার হিসাবে।
ঢাকায় তাও তুলনামূলক ভাবে সামান্য উৎসাহব্যঞ্জক ঘটনা ঘটেছে। টিম ম্যানেজমেন্ট আলাদা করে কথা বলেছে তাঁর সঙ্গে। বলেছে, তোমাকে কবে সুযোগ দিতে পারব আমরা জানি না। তবে এটুকু নিশ্চিত করা হবে যে, যখনই সুযোগ দেওয়া হোক, উপযুক্ত এবং ন্যায্য সুযোগ দেওয়া হবে। যার মানে করলে দাঁড়ায়, একটা-দু’টো ম্যাচ খেলিয়ে ব্যর্থ হলে তাঁকে বাতিলের খাতায় ঠেলে দেওয়া হবে না। অতীতে যেটা ঘটেছে। কিন্তু সেই অপেক্ষার প্রহর কবে শেষ হবে সেটা কেউ জানে না। সবথেকে জরুরি তথ্য, এক্ষুনি উপমহাদেশের বাইরে সফর নেই ভারতের। কী হবে যদি এখানকার ব্যাটিং-স্বর্গে রায়না-রোহিতরা বড় রান করে দিতে থাকেন? তখন তো আরওই পিছিয়ে যাবে মনোজের দেশের জার্সি গায়ে নামা। তখন কি বলা যাবে তিনি ন্যায্য বিচার পেলেন? বলা যাবে টিম ম্যানেজমেন্ট উপযুক্ত সুযোগ দিল?
মনোজকে দেখে যদিও মনে হচ্ছে, তিনি এ সব ভাবনার বাইরে নিজেকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। অস্ট্রেলিয়া-উত্তর তাঁর ক্রিকেটদর্শন সুযোগ কবে আসবে তা নিয়ে ভেবো না। সুযোগের জন্য নিজেকে তৈরি রাখো। মনোভাবে কোনও নেতিবাচক উপাদান রেখো না। কাউকে দোষ দেওয়ার দরকার নেই। অভিযোগ-অনুযোগ করার দরকার নেই। মাথা নিচু করে নিজের কাজ করে যাও। নিজেকে সারাক্ষণ বলতে থাকো, হীরক-খনির এত কাছাকাছি এসে ব্যর্থ মনোরথ হয়ে আমি ফিরব না।
লড়াইয়ের সবথেকে বড় উদাহরণও হাতের সামনে আছে। ব্রিসবেনের অভিষেক ম্যাচে ২ করে ফেরার পর যিনি পরম স্নেহে হাত রেখেছিলেন মনোজের কাঁধে। বুঝিয়েছিলেন, জীবন এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না। মনোজের একটা সেঞ্চুরি। তাঁর নিরানব্বইটা। তার পরেও কী ভীষণ আক্রান্ত! অপেক্ষার রায় নিয়ে পড়ে থাকতে হচ্ছে তারুণ্যের হাওয়া ওঠা ড্রেসিংরুমে!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.