জোড়া সেঞ্চুরিতে অপমানের জবাব, সম্মানকে স্বাগত
লেডিজ অ্যান্ড জেন্টেলমেন...দিস ইজ ইওর ক্যাপ্টেন স্পিকিং...
আমরা উপমহাদেশে ল্যান্ডিং করলাম...বাইরের তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি যা আমাদের জন্য একেবারে আদর্শ...আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে উপমহাদেশের উইকেট যেখানে বাউন্স আর পেস আমাদের কথা ভেবে তৈরি...বল হাঁটুর উপর না ওঠারই কথা...আপনাদের তাই উপদেশ দেব সিট-বেল্ট বেঁধেই রাখুন কারণ ভারতীয় ব্যাটিং এ বার উপমহাদেশের উইকেটে ব্যাট করবে!
মাহেলা জয়বর্ধনের শ্রীলঙ্কাকে ৫০ রানে হারিয়ে এশিয়া কাপ অভিযান শুরু করার রাতে সাংবাদিক সম্মেলনে আসেননি মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। এলেন নতুন সহ-অধিনায়ক এবং ম্যাচের সেরা বিরাট কোহলি। জয়ের সৌরভ ছড়ানো সাংবাদিক সম্মেলন-ঘরে বসে থাকতে থাকতে মনে হচ্ছিল, ভারত অধিনায়ক এলে এ ভাবেই তাঁর বক্তব্য শুরু করতে পারতেন। দিন কয়েক আগে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে যারা কমনওয়েলথ ব্যাঙ্ক ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকে ছিটকে দিয়েছিল ধোনির টিমকে, তারা এ দিন উড়ে গেল টিম ধোনির কাছেই। ত্রিদেশীয় সিরিজে গোটা টুর্নামেন্টে হয়েছিল মাত্র একটা ভারতীয় সেঞ্চুরি। হোবার্টে কোহলির দুর্ধর্ষ ১৩৩। এ দিন উপমহাদেশে প্রত্যাবর্তনে একই দিনে হল জোড়া সেঞ্চুরি।
দুই সেঞ্চুরি, দুই প্রতিক্রিয়া। মিরপুরে গম্ভীর, কোহলি। ছবি: এপি।
রাতের মিরপুরে বসে লঙ্কা-বিজয় দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, ধোনির টিমের মাথার উপর থেকে এখন সাময়িক মেঘ কেটে যাওয়ার কপাল বোধহয় খুলে গেল। আপাতত বিদেশের মাঠে রক্তাক্ত হতে হবে না। বরং তার জায়গায় থাকছে অতিপরিচিত দেশি স্ক্রিপ্ট। নিজেদের পাড়ায় এখন আবার আমরা শাসক।
সচিন তেন্ডুলকরের মাথার উপর থেকে শততম সেঞ্চুরির মেঘ যদিও সরল না। ১৯ বলে ৬ করে এ দিন ফুলটস বলে আউট হয়ে গেলেন। ম্যাচের কী করুণ ছবিই না হয়ে থাকল আউট হয়ে আম্পায়ারের কাছে তাঁর আকুতি। প্রথমে বোঝাই যায়নি কীসের জন্য সচিন আবেদন করছেন। কোমরের উপরে থাকা ফুলটস ছিল দাবি করে ‘নো’ বলের? না কি জয়বর্ধনে ক্যাচটা ঠিকঠাক নেননি বলে তাঁর মনে হয়েছে?
মাঠের আম্পায়াররা যখন ওয়াকিটকিতে কথা বলছেন টিভি আম্পায়ারের সঙ্গে, তখন জয়বর্ধনেকে গিয়ে কিছু একটা বললেনও সচিন। পরে জয়বর্ধনে জানিয়ে গেলেন, সচিন ক্যাচটা পরিষ্কার নেওয়া হয়েছে কি না সেটাই আম্পায়ারকে জিজ্ঞেস করেছিলেন। টিভি আম্পায়ারের রায়ে সচিনকে আউটই দেওয়া হয়। দিন কয়েক আগে অস্ট্রেলিয়ায় ব্রেট লি এবং তাঁকে নিয়ে রান আউটের বিতর্কিত ছবি আবার ভেসে উঠল। সে দিন হাত নেড়ে নেড়ে নিজের অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন সচিন। বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁর দৌড়নোর রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ে লি অন্যায় ভাবে রান আউট করে দেন। এ দিন সে রকম কোনও উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। সে দিন ছিল উত্তেজিত সচিনের প্যাভিলিয়ন যাত্রা। এ দিন দেখা গেল বিষণ্ণ সচিনের ড্রেসিংরুম যাত্রা। সেই ড্রেসিংরুম যেখানে তিনি গত এক বছরের উপর শততম সেঞ্চুরির গর্ব নিয়ে ফিরতে চাইছেন। সেই ড্রেসিংরুম যেখানে তীব্র হচ্ছে তারুণ্যের স্লোগান। সেই ড্রেসিংরুম যেখানে তাঁকে ঘিরে মতবিরোধ ঢুকে পড়েছে।
সচিনের আউট হওয়ার মতোই আর একটা গভীর মুহূর্ত এ দিন ধরা থাকল শের-ই-বাংলা মাঠে। যখন পরপর সেঞ্চুরিতে সম্মান আর অপমানের বিপরীতধর্মী প্রতিক্রিয়া আছড়ে পড়ল। বিরাট কোহলি এবং গৌতম গম্ভীর। দ্বিতীয় উইকেটের জুটিতে ২০৫ রান যোগ করে যাঁরা দলকে নিশ্চিন্ত স্কোরে পৌঁছে দিলেন। এক জন নতুন সহ-অধিনায়কের বরাত পেয়েছেন। অন্য জনের হাত থেকে সহ-অধিনায়কত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে। কোহলির সেলিব্রেশনের ভঙ্গি দেখে মনে হল, সদ্য পাওয়া ভাইস ক্যাপ্টেন্সিকে উৎসর্গ করলেন। শূন্যে লাফিয়ে উঠে মুষ্টিবদ্ধ হাত ছুড়ে দেওয়া। ড্রেসিংরুমের দিকে ব্যাট তোলা। গম্ভীরেরটা দেখে মনে হল, তাঁর থেকে সহ-অধিনায়কত্ব ছিনিয়ে নেওয়ার জবাব দিলেন। অনেক বেশি আক্রমণাত্মক প্রতিক্রিয়া এল তাঁর কাছ থেকে। ড্রেসিংরুমের দিকে খুব উত্তেজিত ভাবে ব্যাট দেখালেন। একাধিক বার। কাকে উদ্দেশ্য করে দেখালেন? অধিনায়ককে? যিনি কিনা তাঁকে অস্ট্রেলিয়ায় মন্থর ফিল্ডার আখ্যা দিয়েছিলেন? সব ম্যাচ খেলতে না দিয়ে রোটেশনে ফেলে দিয়েছিলেন? না কি জাতীয় নির্বাচকদের? যাঁরা সহ-অধিনায়কত্ব কেড়ে নিলেন? বলে রাখা দরকার, জাতীয় নির্বাচকেরা কেউ এখানে উপস্থিত নেই।
গম্ভীর ১১৮ বলে ১০০। কোহলি ১২০ বলে ১০৮। সঙ্গে দুর্দান্ত ফিল্ডিং এবং ক্যাচিং। ম্যাচের সেরার পুরস্কারও তিনি নিয়ে গেলেন। কিন্তু জোড়া সেঞ্চুরির পরেও তিনশোর গণ্ডি পেরোতো না, যদি না ধোনি নিজেকে ব্যাটিং অর্ডারে উপরে তুলে এনে মারকাটারি ইনিংস খেলে যেতেন। তিনি করলেন ২৬ বলে ৪৬। রায়না বোঝালেন তাঁর অস্ট্রেলীয় সফরের অভিশাপ এখানে থাকছে না। ১৭ বলে ৩০। ভারতীয় ক্রিকেটের রকমসকম মানলে অন্তত আগামী চারটে ম্যাচের লাইসেন্স পাকা। যদিও এ দিন শ্রীলঙ্কার সেরা বোলিং অস্ত্র লাসিথ মালিঙ্গাকে খেলতে হয়নি ভারতীয়দের। তিনি এ দিন খেলেননি।
জয়বর্ধনে এর পরেও এমন শুরু করেছিলেন যে, মনে হচ্ছিল এই ম্যাচও না পিছলে যায়। ভারতীয় বোলিং ব্রিসবেন, অ্যাডিলেডে ডোবাতো। উপমহাদেশের ব্যাটিং উইকেটে এ দিন জেতাল। কিন্তু ভারতীয় বোলিং তো। কবে নিজেদের ‘ফর্মে’ ফিরবে কেউ জানে না!

স্কোর

ভারত
গম্ভীর ক থরঙ্গা বো মাহরুফ ১০০
সচিন ক জয়বর্ধনে বো লাকমল ৬
কোহলি ক থিরিমন্নে বো মাহরুফ ১০৮
ধোনি ন.আ. ৪৬
রায়না ন.আ. ৩০
অতিরিক্ত ১৪, মোট (৫০ ওভারে) ৩০৪-৩।
পতন: ১৯, ২২৪, ২২৬।
বোলিং: কুলশেখরা ১০-০-৬৭-০, লাকমল ১০-১-৬৭-১, দিলশান ১০-০-৫৪-০,
প্রসন্ন ৯-০-৪৫-০, মাহরুফ১০-০-৫৭-২, কাপুগেদেরা ১-০-৭-০।

শ্রীলঙ্কা
জয়বর্ধনে ক ধোনি বো ইরফান ৭৮
দিলশান ক কোহলি বো ইরফান ৭
সঙ্গকারা ক জাডেজা বো অশ্বিন ৬৫
চণ্ডীমল বো অশ্বিন ১৩
থিরিমন্নে এলবিডব্লিউ অশ্বিন ২৯
কুলশেখরা বো বিনয় ১১
থরঙ্গা বো ইরফান ১৭
কাপুগেদেরা ক কোহলি বো বিনয় ০
মহারুফ ক রায়না বো বিনয় ১৮
প্রসন্ন ন.আ. ০

অতিরিক্ত ৮, মোট (৪৫.১ ওভারে) ২৫৪।
পতন: ৩১, ১২৪, ১৫২, ১৯৬, ১৯৮, ২১৬, ২৪১, ২৫৪।
বোলিং: ইরফান ৮.১-১-৩২-৪, প্রবীণ ৭-০-৪৭-০, বিনয় ৯-০-৫৫-৩, জাডেজা ৪-০-৩১-০,
রায়না ৫-০-৩৪-০, অশ্বিন ৯-০-৩৯-৩, রোহিত ৩-০-১৪-০।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.