ক্ষুদিরামের জন্মস্থান মোহবনিতে রয়ছে শহিদ ক্ষুদিরাম স্মৃতি পাঠাগার। কর্মী সংখ্যা মাত্রই ২। গ্রন্থাগারিক ও সাইকেল পিওন। দু’জন কর্মী থেকেও নেই! কেন? না পাশের গ্রাম শীর্ষাতেও একটি গ্রন্থাগার রয়েছে। সেখানে এক জন কর্মীও না থাকায় গ্রন্থাগারটি বন্ধ হয়ে পড়েছিল। টানা বন্ধ থাকলে এলাকায় ক্ষোভের সঞ্চার হতে পারে। তাই কাজ চালাতে সপ্তাহে চার দিন মোহবনির গ্রন্থাগার কর্মীকে শীর্ষা গ্রন্থাগার চালানোরও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে সমস্যায় পড়েছে দু’টি গ্রন্থাগারই।
গ্রামীণ গ্রন্থাগারের কর্মীদের ঝাড়ু দেওয়া থেকে শুরু করে সব কাজই সামলাতে হয়। তার উপরে কোনও গ্রন্থাগার সপ্তাহের অর্ধেক দিন বন্ধ তো কোথাও কর্মী নেই। কোথাও ৩ হাজার আবার কোথাও ৫-৭ হাজার বই রয়েছে। তার মধ্যে বিভিন্ন ক্লাসের পাঠ্যবইও রয়েছে। তবু সেগুলির পূর্ণ ব্যবহার হয় না। কারণ, বাড়িতে বই নিয়ে যেতে দেওয়া হয় না। কেন? |
শহিদ ক্ষুদিরাম গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক সোমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কেউ যদি বই নিয়ে গিয়ে আর ফেরৎ না দেয়, আমরা তো ফিরিয়েও আনতে পারব না। তাই বাধ্য হয়েই বাড়িতে বই নিয়ে যাওয়া বন্ধ করতে হয়েছে। আমাদের কর্মী নেই, অর্থ কম, বই চলে গেলে তো সমস্যা আরও বাড়বে।”
অন্য দিকে, অস্থায়ী বন্দোবস্তে শীর্ষা গ্রন্থাগারও ঠিকমতো চালানো যাচ্ছে না। খবরের কাগজ নেওয়া হয় না, বইও বাড়িতে নিয়ে যেতে দেওয়া হয় না। ফলে এই গ্রন্থাগারগুলিতে গড়ে ২-৩ জনের বেশি কেউ আসেনও না। কর্মী তপন রায়ের কথায়, “খবরের কাগজ কিনলে তার বিল কে মেটাবে? কমিটিরও তেমন অস্তিত্ব নেই। আমাকে অন্য গ্রন্থাগারে যাওয়ার জন্য কোনও খরচও দেওয়া হয় না।” দাঁতনের তররুই গ্রাম পঞ্চায়েতের কোর্টপাদা গ্রামীণ গ্রন্থাগারেরও অবস্থা সঙ্গিন। কর্মী শশাঙ্কশেখর শী-কেই সব দেখভাল করতে হয়। শশাঙ্কবাবু বলেন, “সরকারি অনুদান কম। সব সময়ের জন্য গ্রন্থাগারিক নেই। এই অবস্থায় গ্রন্থাগার চালানো খুবই কঠিন।” |
গ্রামীণ এলাকার গ্রামীণ গ্রন্থাগারেই শুধু এই সমস্যা নয়। শহর এলাকার গ্রামীণ গ্রন্থাগারের (রুরাল) অবস্থাও এমনটাই। এমনও গ্রন্থাগার রয়েছে যার নিজস্ব জমি পর্যন্ত নেই। এমনই এক গ্রন্থাগার ‘মেদিনীপুর স্পোর্টস লাইব্রেরি’। এই গ্রন্থাগারটি চলছে অরবিন্দ স্টেডিয়ামের একটি ছোট্ট ঘরে। যে ঘরের ছাদ বেয়ে জল পড়ে। কোনও রকমে উপরে ত্রিপল দিয়ে বই বাঁচাতে হয়। যে কোনও সময় ঘরটি ভেঙে পড়ারও আশঙ্কা রয়েছে। সেখানেও গ্রন্থাগারিক সপ্তাহে সব দিন আসেন না। ২-৩ দিন আসেন। কারণ, গ্রন্থাগারিককে আরও একটি গ্রন্থাগারের দায়িত্ব দেওয়া রয়েছে। এই গ্রন্থাগারের ভবন তৈরির জন্য ৬ লক্ষ টাকা সরকারি অনুদান পাওয়ার কথা অনেক দিন ধরেই। কিন্তু নিজস্ব জমি না থাকায় গ্রন্থাগারটি সেই টাকাও পাচ্ছে না। জেলায় আর একটিও স্পোর্টস লাইব্রেরি নেই। সে দিক থেকে এই স্পোর্টস লাইব্রেরিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অভিযোগ, তা সত্ত্বেও এত দিন এই গ্রন্থাগারের উন্নয়নে পদক্ষেপ করেনি সরকার। সম্প্রতি জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক জেলা প্রশাসনের কাছে জমির জন্য তদ্বির শুরু করেছেন। প্রশাসন বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে। জেলায় মোট গ্রন্থাগারের সংখ্যা ১৫৮টি। তার মধ্যে একটি জেলা গ্রন্থাগার, ১৫টি শহর গ্রন্থাগার, ১৪২টি গ্রামীণ গ্রন্থাগার। এই গ্রন্থাগারগুলিতে ৩৫৪ জন কর্মী থাকার কথা। তার মধ্যে ১২৩টি পদই শূন্য। চলতি বছরে আরও ২৭ জন কর্মী অবসর নেবেন। তার পর কী ভাবে চলবে জেলার গ্রন্থাগারগুলি? তা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছে গ্রন্থাগার দফতর। বিষয়টি সম্পর্কে গ্রন্থাগার মন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে বলে জেলা গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। কিন্তু বিগত দিনে গ্রন্থাগারের বিষয়ে সরকার যেমন উদাসীন ছিল, নতুন সরকারও কি তেমনই থাকবে? নাকি ইতিবাচক পদক্ষেপ করবে? উত্তর দেবে সময়।
|