‘শিশু হস্তান্তর’ আটকাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ
হাসপাতাল চত্বরেই চার মাসের এক কন্যা সন্তানকে অন্যের হাতে তুলে দিচ্ছিলেন তার বাবা। খবর পেয়ে তড়িঘড়ি শিশু হস্তান্তর আটকালেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার সকালে ঘটনাটি ঘটে রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতালে। হাসপাতাল সুপার হিমাদ্রি হালদার বলেন, “প্রথমে বিষয়টি জানা ছিল না। পরে খবর পেয়ে শিশুটিকে তার বাবার কাছেই রেখে দেওয়া হয়। হাসপাতাল চত্বরে এ ধরনের ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। শিশুটিকে নিজের কাছে রাখবেন বলে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন তার বাবা।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নলহাটি থানার আমাইপুর গ্রামের বাসিন্দা দেলেরা দেলফুন বিবি ২২ বছরের এক বধূকে সোমবার সন্ধ্যায় রামপুরহাট হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। রাতে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, পারিবারিক অশান্তির কারণে ওই বধূ কীটনাশক খেয়েছিলেন। ওই বধূর বাবা মুরারই থানার করমজী গ্রামের বাসিন্দা সামসুল হক বলেন, “আড়াই বছর আগে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলাম।” তাঁর অভিযোগ, “জামাই ও শ্বশুরবাড়ির অন্য সদস্যরা মেয়ের উপরে অত্যাচার করত। সম্প্রতি তাদের কন্যা সন্তান হয়। সোমবার দুপুরেও মেয়েকে মারধর করেছিল জামাই। ওই রাতে খরর পাই মেয়ে অসুস্থ। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরে এসে দেখি মেয়ে আর বেঁচে নেই।” ওই বধূর স্বামী আতিউর খাবির শেখ মারধরের কথা স্বীকার করে নিয়ে বলেন, “দুপুরে রান্না করা নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল। চড় মেরেছিলাম। বিকেলে বাড়ি ফিরে দেখি সে অসুস্থ। টাকা জোগাড় করে সন্ধ্যায় হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানেই স্ত্রীর মৃত্যু হয়।”
ছবি: সব্যসাচী ইসলাম।
আতিউর জানান, দেলেরা ছিলেন তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী। তিন ছেলেমেয়েকে রেখে আগের স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে পালিয়ে যান। ভাঙাচোরা লোহা-টিনের কারবারী ও দিনমজুর আতিউর বলেন, “স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে চার মাসের শিশুকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পাশের গ্রামের কাশিমনগরের বাসিন্দা মানোয়ারা বিবির কাছে রেখেছিলাম। সারারাত মেয়েকে ওরা যত্নে রেখেছিল।” তাঁর দাবি, “পরে ওই মহিলা মেয়েকে তাঁর কাছে রাখতে চান। তাঁদের বলি, আমি একা মেয়েকে তাঁদের হাতে তুলে দিতে পারব না। মঙ্গলবার সকালে শ্বশুর ও অন্য আত্মীয়দের উপস্থিতিতে সাদা কাগজে উভয় পক্ষের টিপ সই করে মেয়েকে নিজের ইচ্ছানুসারে কাশিমনগরের বাসিন্দা রুহুল আমিনের হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।” তিনি বলেন, “প্রথম পক্ষের তিন ছেলেমেয়ে আছে। তারা স্থানীয় স্কুলে পড়ে। দ্বিতীয় স্ত্রী মারা যাওয়ায়, চার মাসের শিশুকে পালন করবে কে? এই ভেবে এবং মেয়ের ভালোর জন্য অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার কথা ভাবি।” দেলেরা বিবির বাবা সামসুল হক বলেন, “মেয়ে তো চলে গেল। চার মাসের শিশুকে ওরা লালনপালন করবে বলে নিয়েছে। এতে ছোট্ট মেয়ের ভাল হবে, সেই জন্য হস্তান্তরে মত দিয়েছিলাম।”
অন্য দিকে, কাশিমনগর গ্রামের বাসিন্দা পেশায় জুতোর দোকানের মালিক রুহুল আমিন বলেন, “মা মানোয়ারা বিবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁকে দেখতে এসে পাশের গ্রামের পরিচিত আতিউরের এই অবস্থা দেখে তার মেয়েকে লালনপালন করতে রাজি হয়ে যাই। আমার পাঁচ বছরের ছেলে আছে। স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেই শিশুটিকে নিতে চেয়েছিলাম। বাধা দেওয়ায় নিতে পারিনি। তবে আইনগত ভাবে ওই শিশুকে আমি নিতে রাজি।” ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হরেকৃষ্ণ পাল বলেন, “এ ভাবে কেউ নিজের সন্তানকে অন্যের হাতে দিতে পারেন না। এর জন্য আইনগত পদ্ধতি আছে। সেই পদ্ধতি মেনে সন্তান দত্তক নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে খোঁজ নেব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.