|
|
|
|
প্রসঙ্গ কৃষিঋণ |
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় আতঙ্কিত ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ |
অর্ঘ্য ঘোষ • ময়ূরেশ্বর |
কৃষিঋণ শোধ করতে না পারলেও জমি বাজেয়াপ্ত করা যাবে না। সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন জেলার ব্যাঙ্ক কর্তারা। অনাদায়ী বা খেলাপি ঋণের ভারে অধিকাংশ ব্যাঙ্কে অচলাবস্থা দেখা দেবে বলে ব্যাঙ্ক কর্তাদের আশঙ্কা। তাঁদের যুক্তি, এমনিতে কৃষিঋণ মকুব হতে পারে এই ধারণা থেকে বছরের পর বছর ঋণ পরিশোধ না করার প্রবণতা থাকে কৃষকদের একাংশের মধ্যে। মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরে ওই প্রবণতা স্বভাবে পরিণত হবে বলে মনে করছেন জেলার অধিকাংশ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। খেলাপি ঋণের দায় থেকে বাঁচতে পরবর্তীকালে কৃষিঋণ দেওয়া থেকে হাত গুটিয়ে নেবে ব্যাঙ্কগুলি।
মূলত জমি বাঁধা রেখে বিভিন্ন চাষের জন্য ঋণ নিয়ে থাকেন চাষিরা। সময় মতো সেই ঋণ শোধ করতে না পারলে বাঁধা রাখা জমি নিলামে বিক্রি করার ক্ষমতা রাখে ঋণ দানকারী ওই সংস্থা। তবে অনেক সময় প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা অন্য কোনও কারণে ঋণ কিংবা সেই ঋণের সুদ মকুব করা হয়ে থাকে। কৃষিঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে জেলায় অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে থাকে কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক। কৃষিঋণের ৬০ শতাংশ ওই ব্যাঙ্ক থেকে দেওয়া হয় বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। বর্তমানে ওই ব্যাঙ্কের প্রদত্ত কৃষিঋণের পরিমাণ ১০৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪১ কোটি টাকা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যাঙ্কের এক কর্তা বলেন, “ঋণ আদায়ের জন্য ব্যাঙ্কের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী এফআইআর করার কথা বলেছেন। ওই ঘোষণার পরে অনেক ব্যাঙ্কের মৃত্যু ঘণ্টা বেজে গিয়েছে। কারণ ২০১০ সালে রামপুরহাটের নিশ্চিন্তপুরে অনাদায়ী ঋণের কারণে এক ব্যবসায়ীর বাড়ি নিলাম করা হয়। তার পরেই রামপুরহাট এলাকাতেই অন্য এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে শুধু মাত্র নোটিস পাঠিয়ে ৯১ লক্ষ টাকা পাওয়া গিয়েছে। নিলামের ক্ষমতা চলে গেলে আর কেউ সহজে ঋণ শোধ করবেন না।”
জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের চিফ এগজিকিউটিভ ম্যানেজার অজয় রাম বলেন, “ঋণ দান ও আদায়ের ক্ষেত্রে আমরা সরকারি নিয়ম মেনে কাজ করি। যখন যেমন নিয়ম হবে সেই মতো করব।” অন্য দিকে, জেলা লিড ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে জেলায় প্রদত্ত মোট কৃষিঋণের পরিমাণ ১৮০ কোটি টাকা। যার মধ্যে ৫৫ শতাংশ দীর্ঘদিন ধরে অনাদায়ী রয়েছে। জেলা লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার বগলা প্রসন্ন চক্রবর্তী বলেন, “আমি বাইরে আছি। তবে সংবাদমাধ্যমে ঘোষণার কথা শুনেছি। সরকারি কোনও নির্দেশ পাইনি।”
এ দিকে সমস্যায় পড়েছেন চাষিরাও। লাভপুরের ধনডাঙার বাসিন্দা বিবেকানন্দ মণ্ডল, ময়ূরেশ্বরের ঢেকার কার্তিকচন্দ্র মণ্ডলরা বলেন, “বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে চাষ করি। অনাদায়ের আশঙ্কায় ব্যাঙ্কগুলি ঋণ দেওয়া বন্ধ করে দিলে চড়া সুদে মহাজনদের কাছ থেকে ধার নিতে হবে।” সিপিএমের জেলা কৃষকসভার সম্পাদক আনন্দ ভট্টাচার্য বলেন, “সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণা চাষিদের মধ্যে ঋণ পরিশোধ না করার প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। ব্যাঙ্কও হাত গুটিয়ে নেবে। এর ফলে মহাজনি প্রথার শিকার হতে হবে চাষিদের।” |
|
|
|
|
|