থানার ভিতরে পুলিশ অফিসারদের সামনেই লাইটার দিয়ে গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টার অভিযোগে বিএসএফের এক জওয়ানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে মালদহের ইংরেজবাজার থানায় ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ জানান, ওই বিএসএফ জওয়ানের নাম বিজন চক্রবর্তী। তিনি জম্মু-কাশ্মীরে কর্মরত। সম্প্রতি তাঁর বোন রূপা দেবী বধূ নির্যাতনের অভিযোগ জানাতে ইংরেজবাজার থানায় গেলে পুলিশ কর্মীরা ফিরিয়ে দেন বলে ওই জওয়ানের অভিযোগ। ওই দিন মাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি এই ব্যাপারে খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন। গায়ে আগুন লাগতেই পুলিশ কর্মীরা ঝাপিয়ে পড়ে আগুন নিভিয়ে দেন। ওই জওয়ানকে গ্রেফতারও করা হয়। শুক্রবার তাঁকে মালদহ আদাতে হাজির করানো হলে বিচারক জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেন। জেলার পুলিশ সুপার জয়ন্ত পালের সন্দেহ, বিএসএফের ওই জওয়ান মানসিক ভাবে অসুস্থ। পুলিশ সুপার বলেন, “থানার ভিতরে গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করার অভিযোগে ওই জওয়ানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমাদের ধারণা ওই জওয়ান মানসিকভাবে অসুস্থ। নইলে কেউ থানায় গিয়ে পুলিশের সামনে গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করতে যায়!” পুলিশ সুপার জানান, ওই জওয়ান বধূ নির্যাতনের মামলায় অভিযুক্ত। বেশ কিছুদিন জেল খাটার পরে সম্প্রতি তিনি জামিনে মুক্তি পান। পুরাতন মালদহের মঙ্গলবাড়ি এলাকার ঘোষপাড়ার বাসিন্দা বিজনবাবুর সঙ্গে ছয় বছর আগে ইংরেজবাজার থানার বাঁশবাড়ি এলাকার মিঠু দেবীর বিয়ে হয়। মিঠু দেবীর দাদা দেবাশিসের সঙ্গে বিজনবাবুর বোন রূপা দেবীর বিয়ে হয়। বিয়ের ৬ বছর পরেও মিঠু দেবীর সন্তান না হওয়ায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গোলমাল লেগেই রয়েছে। দেড় বছর আগে স্ত্রী মিঠু দেবীর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ বিজনবাবুকে গ্রেফতার করে। সে সময়ে বিজনবাবু দেড় মাস জেলে ছিলেন। পরে গ্রামে সালিশি সভায় সুস্থ জীবনযাপনের আশ্বাস দিলে মিঠু দেবী মামলা প্রত্যাহর করে নেন। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে তিনি জম্মু-কাশ্মীরে চলে গিয়েছিলেন। বিজনবাবুর পরিবারের অভিযোগ, মিঠু দেবীর সঙ্গে গোলমালের সূত্র ধরে শ্বশুরবাড়িতে রূপা দেবীর উপরেও নির্যাতন চলছে। দেবাশিসবাবুর অত্যাচারে রূপা দেবী বাবার বাড়িতে চলে এসেছেন বলে বিজনবাবুর অভিযোগ। রূপা দেবী নির্যাতনের অভিযোগ জানাতে গেলে ইংরেজবাজার থানা ওই অভিযোগ গ্রহণ করেনি বলেও অভিযোগ তাঁর। ওই দিন বোন, মা অঞ্জলি দেবীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি ইংরেজবাজার থানায় গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি পুলিস অফিসারদের সঙ্গে তর্ক জুড়ে দেন, তাঁর বিরুদ্ধে মিঠু দেবীর অভিযোগ গ্রহণ করা হলে বোনের অভিযোগ কেন লিপিবদ্ধ করা হবে না। তার পরেই তিনি লাইটার দিয়ে গায়ে আগুন লাগানোর চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। তিনি বলেন, “পুলিশের উপর রাগেই আমি গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলাম।” বিজনবাবুর মা অভিযোগ করেন, “স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মেয়ে শ্বশুর বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে। মেয়ে থানা অভিযোগ জানাতে গিয়েছিল। পুলিশ মেয়ের অভিযোগ না নেওয়ায় আমার ছেলে মেয়েকে নিয়ে থানার পথে রওনা হলে আমিও পিছু নিই। পুলিশ মেয়ের অভিযোগ না নেওয়ায় আমার ছেলে গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার করার চেষ্টা করে।” |