সকালে জোছনা, সন্ধ্যায় রামধনু
শিল্প-সাহিত্যে শীত ঋতুকে অনেক সময়ই মানুষ রূপে কল্পনা করা হয়। সেই চেহারাটা মোটামুটি একই ধাঁচের। খুনখুনে বুড়োমানুষ। ইয়া মোটা কম্বল জড়ানো। শীতপোশাক যা-ই হোক, সেটা রংচটা, মনখারাপ মতো দেখতে। আর ও দিকে বসন্ত হল ফুর্তিবাজ টিনএজার। রং ঝলমলে কেতাদুরস্ত সাজপোশাক। এই যে, বয়সটা কমতি মানেই রামধনু রঙের সাজগোজ, আর বাড়তির দিকে গেলেই ফিকে, বিবর্ণ বেশ তত্ত্বটি ওই কল্পনার দুনিয়াতেই বেশি মানায়। বাস্তবজীবনে ওটিকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে আঁকড়ে না ধরাই ভাল। বরং মাঝেমধ্যে বিপরীতমুখে গেলেও মন্দ হয় না।
যেমন ধরুন আমাদের নব্য বঙ্গ, মানে বংদের কথা। চেককাটা, বরফি আঁকা নানা রঙের টপ, কয়েকটা ছেঁড়া-ফাটা জিনস, দোলের রঙে চোবানো কয়েকটা কাপড়ের কনভার্স জুতো, পিঠে নেওয়ার ঢাউস ব্যাগ। এটাই ওদের ফ্যাশনের সারাংশ। কম বয়সে নাকি এ সবই মানায়, ফাঙ্কি লুক। এই লাল, নীল, সবুজের মেলায় ধাঁধা খেয়ে যান শিক্ষককুল। অনেকেই আড়ালে স্বীকার করেন, সব ক’টাকে তো একই রকম দেখতে লাগে। এক জনকে অন্য জনের থেকে আলাদা করে চেনা বেশ মুশকিল। বাড়ির লোক কী করেন তাই নিয়ে এঁরা যথেষ্ট চিন্তিত।
যাঁরা মন দিয়ে ‘রকস্টার’ হওয়ার, নিদেনপক্ষে ও রকম সাজার চেষ্টা করছেন, তাঁদের এতে রাগ-দুঃখের কারণ নেই কিন্তু। কম বয়স মানেই মার পিচকারি নয়। কম বয়সের আরও অনেক মানে এবং সুবিধা আছে। যেমন, পার্লার প্রসাধন জাতীয় ঝক্কি ছাড়াই টানটান, উজ্জ্বল ত্বক। এমনি এমনিই। তবে, পোশাক মাত্রাতিরিক্ত রঙিন হলে, মানুষের নজর তো সে দিকেই আগে যায়। তখন এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য চাপা পড়ে যায়। তাই যারা অল্প বয়সেই বেশ শানানো বুদ্ধি ধরে, তারা একটু স্নিগ্ধরঙা পোশাক বেছে নেয়। মোনোক্রোম ক্যানভাসের কারিকুরি দেখায়। অর্থাৎ পোশাকে একই রঙের নানা আভা রাখে। যেমন কালো, ধূসর, আবছায়া রং। এতে সমস্ত আলোটা গিয়ে পড়ে রূপে। বেশ পরি পরি, দেবদূত ধরনের দেখতে লাগে। দেখবেন, রূপকথা বা ফ্যান্টাসি জগতে সব কিছু কেমন মোলায়েম রঙের, সাদা, ক্রিম, অফ হোয়াইট এই সব। যশ চোপড়াদের সিনেমাতেও তাই হয়। সাদা শিফন, রুপোলি গয়না, সুন্দর দেখতে ছেলেমেয়ে।
বৈচিত্র্য থাকুক বরং কাট-এ, পোশাকের নকশায়। ডেনিম ইত্যাদি একটু বেশি বয়সের জন্যই বরং তোলা থাক। ওটাও সব্বাই পরে তো, তার থেকে মেয়েরা একটু হালকা-রঙা ড্রেস, স্কার্ট টপ ইত্যাদি পরুন। কম বয়সের আর এক সুবিধা হল, গড়নটাও ছিপছিপে থাকে। তাই ছোট ঝুলের, আঁটোসাঁটো পোশাক পরলে বেশ দেখায়। সেই রকম পোশাকেই ক্রিম-কালো, আকাশি-সাদা, এই ধরনের নম্র, চোখ জুড়ানো কম্বিনেশন বেশি বেশি পরুন। খয়েরি বা ছাই রঙের টপ, বেজ রঙের জেগিংস দিয়ে পরুন। দেখবেন, তথাকথিত একটা ‘ডাল’ কালারও কেমন পার্টিওয়্যার হয়ে উঠেছে। এ সব শুনতে বোরিং, উপদেশ উপদেশ লাগতে পারে। তবে, এমা ওয়টসন, সোনম কপূর, বা কয়েক বছর আগের পেনেলপ ক্রুজকে মনে করলে
বুঝবেন, গোটাটাই আসলে আন্তর্জাতিক হয়ে ওঠার পরামর্শ। মোম রঙের ছিমছাম কাটের পোশাক পরেন ওঁরা। ভিক্টোরীয় আমলের অভিজাত নন্দিনীরা যেমনধারা পরতেন। এমন সাজকেই আজ হাই ফ্যাশন বলা হয়ে থাকে।
আর একটা খুচরো বুদ্ধি দিই। চুলে রং, স্ট্রিকস, এ সবও ভবিষ্যতের জন্য তুলে রাখা ভাল। ঝলমলে কালো চুলটা তো সারা জীবন থাকবে না, তখন মনের আনন্দে সান-কিসড ব্রাউন, সোনালি, বেগুনি ইত্যাদি রং লাগিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করা যাবে।
‘চিন্টুজি’ ফিল্মে
ঋষি কপূর
এ বার বড়বেলার পালা। বড়বেলা মানে কিন্তু বুড়োবেলা নয়। হতে পারে আপনি পঞ্চাশ, কিন্তু ভালই জানেন ও তো সংখ্যা, বয়স তো মনে। খাঁটি কথা। এই ইচ্ছেশক্তিটা থাকলেই অর্ধেকটা জিতে গেছেন। বয়সটা পাঁচ-দশ, ক্ষেত্রবিশেষে পনেরো-কুড়িও কম লাগতে পারে। এ দিকে, এত দিনে আপনি পরিণতমনস্ক, খুব ভাল করে জানেন কেমন পোশাকে, কোন রঙের আপনাকে সেরা লাগে। আর রং মানেই তো জবড়জং নয়। কমলা, ইট, লাল, মেরুন, চেরি রঙের ক্লাসিক ড্রেস নিমেষে বয়সটা অনেক কমিয়ে দেয়। রং এখন সাত রঙে আটকে নেই। প্রত্যেকটারই আলাদা আলাদা কত যে রূপ। সবার নামও জানা নেই। ফ্লুরোসেন্ট পার্পল, স্ট্রবেরি পিঙ্ক, ময়ূরকণ্ঠী, সমুদ্র-সবুজ, এ ভাবে চিনে নিতে হয় তাদের। তবে, সময় এগোলে ত্বক একটু নিষ্প্রভ হয়, ভাঁজ পড়ে। সে সবের নানা দাওয়াই আছে ঠিক কথা। তেমনই এই সব উজ্জ্বলরঙা পোশাকেও মেরামত সম্ভব। কারণ ওই রঙের ছটায় বয়সের জীর্ণতা অনেকটাই ঢাকা পড়ে যায়। তায় বহিরঙ্গের রং ঠিক পৌঁছে যায় অন্তঃকরণে, রঙিন সাজলেই মনটাও খুশি ঝিলমিল করে ওঠে। রামধনু রং লেয়ারিং করলে, প্রিন্টেড স্কার্ফ বা চেকারস কোট, ডোরাকাটা টপ পরলে কম বয়সের থেকেও অনেক জেল্লাদার দেখায়। এ বিষয়টা তো অমিতাভ বচ্চন প্রতি দিনই প্রমাণ করে দেখিয়েই চলেছেন। তা হলে আর ইতস্তত কেন?
বয়স অনুযায়ী না, পোশাক বাছুন আপনার নিজের খেয়াল মতো, শখ মিটিয়ে। তেইশ, তেতাল্লিশ না তেষট্টি, সেটা বিবেচ্য নয়। দেখছেন তো, রিচার্ড গের, সলমন বা জনি ডেপ এখনও কুড়ি-পঁচিশদের স্বপ্ন। বয়সের সঙ্গে জৌলুস বেড়েছে ওঁদের, রঙিন হয়েছেন আরও। এখনও অফুরন্ত তারুণ্য। দেখে অবাক লাগে না? কেমন অন্য গ্রহের, রহস্যময় মতো লাগে। ব্যাখ্যার বাইরে! কী আকর্ষক! মনে মনে সেটাই তো চায় সক্কলে। সময়কে হারিয়ে, সুন্দর ও তরুণ থাকতে। তার জন্য, একটাই প্রশ্নের উত্তর জানতে হয়। আপনার ইচ্ছের রংটা কী?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.