ডাক্তার বাড়ন্ত, নিরুদ্দেশে চিকিৎসা |
সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের অবসর কোনও আকস্মিক ঘটনা নয়। সেই শূন্যস্থানে নতুন চিকিৎসক নিয়োগ করাই নিয়ম। কিন্তু চিকিৎসক অবসর নেওয়ার পর সেই পদে নতুন কোনও চিকিৎসক নিয়োগ না করায় কার্যত বন্ধ হতে বসেছে উত্তর হাওড়ার টি এল জয়সোয়ালের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল। বালি ও উত্তর হাওড়ার একমাত্র সরকারি হাসপাতালের এই অব্যবস্থা কার্যত প্রমাণ করে দিচ্ছে চিকিৎসা পরিষেবার হাল ফেরাতে রাজ্য সরকারের পরিকল্পনা কার্যকরী হয়নি।
|
হাওড়া জেলা হাসপাতালের পরে হাওড়া শহরাঞ্চলে, বিশেষ করে বালি ও উত্তর হাওড়ার সাধারণ মানুষের ভরসা হল টি এল জয়সোয়াল হাসপাতাল। তাই ২৬০ শয্যার ওই হাসপাতালটিতে রোগীর চাপ সব সময়েই বেশি থাকে। হাসপাতালটিতে জরুরি বিভাগের পাশাপাশি রয়েছে মেডিসিন বিভাগ, শল্য বিভাগ, অর্থোপেডিক বিভাগ-সহ দাঁত, কান, গলা এবং প্রসূতি বিভাগ।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, এখানে আগে থেকেই চিকিৎসকের সংখ্যা কম ছিল। তার উপর কোনও চিকিৎসক অবসর নিলে সেই জায়গায় আর নতুন করে চিকিৎসক নিয়োগ হচ্ছে না। কয়েক বছর আগেও চিকিৎসকের সংখ্যা ছিল ৪২। বর্তমানে ওই হাসপাতালে চিকিৎসকের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ২২ জনে। ফলে হাসপাতাল চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল সুপারকেও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নিয়মিত রোগী দেখতে হচ্ছে। একই চিকিৎসককে অনেক সময় দিনের ও রাতের ডিউটি করতে হচ্ছে। চিকিৎসকরা অসুস্থ হয়ে পড়লে বা ছুটি নিলে সেদিনকার মতো শিকেয় উঠছে চিকিৎসা পরিষেবা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আরও অভিযোগ, পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, চিকিৎসক না থাকায় গত বছর থেকে বন্ধ গিয়েছে নাক-কান-গলা (ইএনটি) বিভাগ ও দন্ত চিকিৎসার বিভাগ। বন্ধের মুখে অস্থি বিভাগ। চিকিৎসকের অভাবে বহির্বিভাগ প্রায়ই বন্ধ থাকে। জেনারেল মেডিসিনে চিকিৎসক আছেন দু’জন। এক জন চলতি মাসেই অবসর নেবেন, আর এক চিকিৎসক নিজেই অসুস্থ। কিছু দিন আগে তিনি হাসপাতালেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর পর বন্ধ হয়ে যায় ওই বিভাগের রোগী পরিষেবা। ফলে প্রতি দিন এই বিভাগে রোগীরা এসে ফিরে যান। প্রায় একই অবস্থা শল্য বিভাগের। ওই বিভাগে চিকিৎসক মাত্র এক জন। |
হাসপাতালের সুপার অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “হাসপাতালের বর্তমান অবস্থা জানিয়ে স্বাস্থ্যভবনে একাধিক চিঠি দিয়েছি। জেলা স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আশঙ্কা করছি, এ ভাবে চললে হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যাবে।” স্থানীয় কংগ্রেস নেতা বিমল দত্তের কথায়: “চিকিৎসক না থাকায় ওই হাসপাতালে গোলমাল নিত্যদিনের ঘটনা। এখন হাত-পা ভেঙে গেলে বা সাধারণ রোগের চিকিৎসা করাতেও রোগীদের অন্য হাসপাতালে ছুটতে হচ্ছে।”
হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বাতী দত্ত বলেন, “চিকিৎসকেরা অবসর নেওয়ার পরে ওই শূন্যপদে লোক না নেওয়ায় প্রতিটি হাসপাতালেই একই সমস্যা হয়েছে। রাজ্য সরকার যখন চিকিৎসক নিয়োগ করবে তখনই শূন্যপদ পূরণ করা হবে। তবে এর মধ্যে অন্য হাসপাতাল থেকে কোনও চিকিৎসককে টি এল জয়সোয়ালে পাঠানো যায় কি না দেখা হচ্ছে।” |