দালালচক্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ মন্ত্রীর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নবদ্বীপ ও করিমপুর |
নেই এর তালিকাটা নেহাত কম নয়। পাশাপাশি চিকিৎসা পরিষেবা নিয়েও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। তবে জেলা সদর হাসপাতালের এমন পরিস্থিতির জন্য কার্যত বিগত বামফ্রন্ট সরকারকেই ফের একহাত নিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য-প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। সেই সঙ্গে গত ৩৪ বছরে বামফ্রন্ট সরকারের ‘প্রশ্রয়ে’ বেড়ে ওঠা দালালচক্রকেও কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন তিনি। শুক্রবার দুপুরে কৃষ্ণনগর জেলা সদর হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে চন্দ্রিমাদেবী বলেন, ‘‘গত ৩৪ বছর ধরে বামফ্রন্ট সরকার রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবাকে একেবারে শেষ করে দিয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি সেই বেহাল দশা দূর করতে। আর এখানে পরিষেবার যা যা ঘাটতি দেখছেন, তার অন্যতম মূল কারণ দালালচক্র।’’
সম্প্রতি ঝাড়গ্রাম হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে চন্দ্রিমাদেবী মন্তব্য করেছিলেন, ঈশ্বরের পরেই চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও নার্সদের স্থান। যতই প্রতিবন্ধকতা থাকুক না কেন, তার মধ্যেই সাধ্য মতো পরিষেবা দিতে হবে। এদিন কৃষ্ণনগর জেলা সদর হাসপাতালে এসেও চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের তিনি ফের মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘স্বাস্থ্য পরিষেবা আর পাঁচটা সাধারণ পরিষেবার মতো নয়। এটা অত্যন্ত জরুরি পরিষেবা। তাই কিছু সমস্যা থাকলেও তার মধ্যেই সাধ্য মতো পরিষেবা দিতে হবে।’’ |
কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালে রোগীর আত্মীয়রা ঘিরে ধরলেন মন্ত্রীকে। নিজস্ব চিত্র |
এই দিন চন্দ্রিমাদেবী প্রথমে হাসপাতালের সুপারের ঘরে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকের পরেই হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগ পরিদর্শন করে বেরোনোর সময় মন্ত্রীকে ঘিরে ধরে নানা অভিযোগ জানাতে শুরু করেন রোগীর বাড়ির লোকজন। তাঁদের অভিযোগ, হাসপাতালের বেশ কিছু নার্স অকারণে রোগীর বাড়ির লোকজনকে আয়া রাখতে বাধ্য করান। তাদের অভিযোগ মন দিয়ে শুনে চন্দ্রিমাদেবী বলেন, ‘‘এরপরে এমন ঘটনা ঘটলে হাসপাতালের সুপারকে অভিযোগ জানাবেন। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ চন্দ্রিমাদেবী জানান, ‘‘গত ৩৪ বছরে এই দালালচক্রের রমরমা চলছে। এই দালালচক্রকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এই বিষয়ে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দীর্ঘদিন ধরে বামফ্রন্ট সরকার কোনও নিয়োগ করেনি। এই ৩৪টা বছরে ওরা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাটাকেই শেষ করে দিয়ে গিয়েছে। তবে যে ভাবেই হোক, আমরা সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনব। পিপিপি মডেলে প্রতিটি হাসপাতালে প্যাথোলজি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কাজ শুরু করেছে রাজ্য সরকার। এদিন স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। গোটা বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হবে’’ পাশাপাশি তিনি স্বাস্থ্যকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন,‘‘ বাড়িতে বসে সরকারের টাকা নেবেন অথচ কাজ করবেন না এমনটা চলবে না। মনে রাখবেন, সাধারণ মানুষকে আরও ভালো স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে আমরা বদ্ধপরিকর।’’
রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি তথা মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, ‘‘হাসপাতালে যাতে আরও কিছু শয্যা ও চিকিৎসক বাড়ানো যায় সে বিষয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। রোগীদের যাতে আরও ভালো পরিষেবা দেওয়া যায় সে বিষয়েও চেষ্টা করা হচ্ছে।’’ রোগী কল্যাণ সমিতির প্রাক্তন সভাপতি তথা নদিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সিপিএমের মেঘলাল সেখ বলেন, ‘‘সব কিছুতেই বামফ্রন্ট সরকারকে দায়ী করা আর কথায় কথায় ৩৪ বছরের উদাহরণ দেওয়া ওঁদের একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ওরাই তো এখন ক্ষমতায় আছেন। শুধু মুখে সব কিছু বদলে দেব পাল্টে দেব না বলে কাজ করে দেখাক না। ওটাই তো সবাই চায়। কিন্তু কাজ যে কতটুকু হচ্ছে, সে তো সবাই দেখছেন। বুঝতেও পারছেন। কথায় কথায় অহেতুক আগের সরকারকে দোষ দিয়ে কোনও লাভ নেই।’’
|