|
|
|
|
|
মাটির মানুষ |
ধাতু আর কাঠের জাদুকর ক্ষীরোদবরণ
অশোককুমার কুণ্ডু • নবদ্বীপ |
|
নবদ্বীপের বাদুড়তলা লেনের ক্ষীরোদবরণ দেবনাথের পিতলের ‘বিদ্যুৎকন্যা’ মূর্তি বসেছে গুজরাতের এনটিপি-র দফতরে। শিল্পীরই তৈরি বঙ্কিমচন্দ্রের মূর্তি বসিয়েছে নৈহাটি পুরসভা। এ ছাড়া আরও নানা জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছে শিল্পীর হাতের কাজ।
নবদ্বীপে বাদুড়তলায় রাস্তার ধারের দোকানটিতে বাটালি, কাঠ কাটার শব্দের বিরাম নেই। বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা অর্ডার অনুযায়ী পিlল আর কাঠের মূর্তি গড়ে চলেছেন শিল্পী। কাজের ফাঁকে জানালেন, “আমরা কাঠ ও ধাতু, দু’ধরনেরই মূর্তি করে থাকি। দেবদেবী থেকে শুরু করে অন্য ধরনের যিনি যেমনটা চান।” বোঝা গেল বাজারের চাহিদা নিয়ে তেমন ভাবিত নন শিল্পী।
নিজস্ব চিত্র |
পুথিগত বিদ্যা বলতে ক্লাস এইটের পরে আর সামনে এগোনো হয়নি। কারণটা চিরাচরিত আরও পাঁচটা দরিদ্র পরিবারের কাহিনীর মতোই, টাকার অভাব। প্রায় ১০০ বছর আগে বাংলাদেশের ফরিদপুরের কোন দারদিয়া গ্রাম ছেড়ে চলে এসেছিলেন পূর্বপুরুষেরা। নিজের অতীত ঘাঁটতে গিয়ে শিল্পী জানালেন, “আমার জন্ম বাংলাদেশে। শুধু মনে পড়ে, জ্যাঠামশাই গণেশচন্দ্র দেবনাথ শাঁখার কাজ আর পিতল, কাঠ দিয়ে মূর্তি গড়তেন। সব শিক্ষা তাঁর কাছেই। নিখুঁত শিল্পী, মনের মতো না হলে ছাড়তেন না। আপনভোলা মানুষটি ঘুরে বেড়াতে ভালবাসতেন।”
প্রথাগত শিল্পশিক্ষার পথ বেয়ে কোনও আর্ট কলেজের পাঠ পাননি ক্ষীরোদবরণ। তবে তা নিয়ে অবশ্য কোনও খেদ নেই শিল্পীর। নিজের মনের কাছ থেকে যতক্ষণ না নিখুঁত হওয়ার সাড়া পাচ্ছেন ততক্ষণ চলতে থাকে কাজ। যদিও সমস্ত শিল্পীর মতো ক্ষীরোদবরণও জানিয়েছেন, মনের মতো মূর্তি এখনও গড়ে উঠতে পারেননি। নবদ্বীপের বকুলতলা হাইস্কুলের পাট চুকিয়ে কাজ করতে করতেই ধাতুবিদ্যা, তার গলনাঙ্ক, ঢালাইয়ের জ্ঞান যা যে কোনও প্রাতিষ্ঠানিক শিল্পীকে অবাক করে দেবে। নিজের কাজের জ্ঞান পরম্পরা মেনে তুলে দিয়েছেন পুত্রের হাতে। বর্তমানে শঙ্করপ্রসাদ দেবনাথও নবদ্বীপের একজন পরিচিত শিল্পী।
সারাজীবনের কাজের জন্য সম্মান পেয়েছেন অনেক। রাজ্য সরকারের সম্মান পেয়েছেন। ধাতু ও দারুশিল্পীর সম্মান জানিয়েছে নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদ। তবে শিল্পের পরম্পরার পাশাপাশি পেয়েছেন জ্যাঠামশায়ের বাউন্ডুলের চরিত্রও। “বছরে একবার ‘বাউন্ডুলে’ হয়ে যাই। একাই এদিক ওদিক চলে যাই। চলে যাই পাহাড়ে, কোনও তীর্থক্ষেত্রে। ঘরে ফিরি বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তির ছবি মনে গেঁথে। যা চেষ্টা করি ধাতু, কাঠে ফুটিয়ে তুলতে।” কথা শেষ করে ফের কাজে ডুব দিলেন ক্ষীরোদবরণ। |
|
|
|
|
|