|
|
|
|
ছত্রধর-শশধরকে চিনতেন প্রবীরও |
স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় • কোতুলপুর |
দেবব্রত দাস • খাতড়া |
মহাকরণের পোডিয়ামে সুচিত্রা মাহাতোকে নিয়ে শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন, তখন এক পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বছর ঊনচল্লিশের যুবকটি।
মাওবাদী নেত্রী সুচিত্রা নিজের আত্মসমর্পণ নিয়ে দু’চার কথা বলার পরেই মাইক্রোফোনের সামনে চলে এলেন ওই যুবক। প্রবীর গড়াই। সুচিত্রার দ্বিতীয় স্বামী। বর্তমানে বাঁকুড়ার কোতুলপুর থানার রানারহাট গ্রামে বালি খাদানের ব্যবসায় যুক্ত। ওই গ্রামেই তাঁর বাড়ি। স্থানীয় সূত্রের খবর, বালির ব্যবসার পাশাপাশি পৈতৃক চাষবাস সামলান প্রবীর।
পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, সুচিত্রার সঙ্গে প্রবীরের পরিচয় লালগড়ে। সুচিত্রা তাঁর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী। জনসাধারণ কমিটির নেতা ছত্রধর মাহাতো ও তাঁর ভাই, নিহত মাওবাদী নেতা শশধর মাহাতোর (সুচিত্রার প্রথম স্বামী) সঙ্গেও পরিচয় ছিল প্রবীরের। ২০০৮-’০৯ সালে লালগড় আন্দোলনে তিনি জড়িয়ে যান। ওই অঞ্চলে রাষ্ট্রদ্রোহের একাধিক মামলায় প্রবীর অভিযুক্ত। ২০১০-এর মাঝামাঝি বাঁকুড়া জেলা সংশোধনাগারে কমিটির জেলবন্দি কয়েক জনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন প্রবীর। ৯ মাস হাজতবাস করে রানারহাটে ফিরে নামেন বালি-ব্যবসায়। বৃহস্পতিবার, দোলের দিন সকালেও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ ওই যুবককে গ্রামে দেখা গিয়েছে বলে গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি।
লালগড়ের বড়ধানশোলা গ্রামের বাসিন্দা সুচিত্রা। সেখানকারই মেয়ে পূর্ণিমার সঙ্গে বছর পনেরো আগে প্রবীরের বিয়ে হয়। তাঁদের ছেলে এখন কামারপুকুরের একটি স্কুলে পড়ে। কয়েক মাস আগে সাপের ছোবলে পূর্ণিমার মৃত্যু হয়। চলতি বছর ২৫ ফেব্রুয়ারি তিনি সুচিত্রাকে বিয়ে করেন বলে শুক্রবার মহাকরণে দাবি করেছেন প্রবীর।
এসইউসি প্রভাবিত কৃষক ও খেতমজুর সংগঠনের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক দিলীপ কুণ্ডু বলেন, “প্রবীর এক সময় আমাদের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে তিনি জনগণের কমিটির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন।” আবার একটা সময়ে সক্রিয় ভাবে সিপিএমও করেছেন প্রবীর। তৃণমূলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে বছর তিন-চারেক আগে। বিধানসভা ভোটের পর থেকে তা আরও বাড়ে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। অভিযোগ, সম্প্রতি বালির ব্যবসা সংক্রান্ত গণ্ডগোলের জেরে প্রবীর এক সিপিএম সমর্থককে গ্রাম ছাড়াও করেন। তিনি থানায় অভিযোগ করায় প্রবীর তৃণমূলের ব্লক সভাপতি নিমাই ঘোষকে সঙ্গে নিয়ে মঙ্গলবার কোতুলপুর থানায় পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করেন।
এ দিন পুরুলিয়ায় বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রও দাবি করেন, “প্রবীর গড়াই কোতুলপুর এলাকায় তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ। বালির সিন্ডিকেট ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। গত ৬ মার্চ সিন্ডিকেটের হয়ে কোতুলপুর থানায় তিনি বৈঠকও করেন।” যদিও নিমাইবাবুর বক্তব্য, “প্রবীর আমাদের দলের সমর্থক নন। থানায় ওই বৈঠকে আমি ছিলামও না।”
নিমাইবাবু এ কথা বললেও প্রবীরের কাকা রাম গড়াই নিজেদের পরিবারকে তৃণমূল সমর্থক হিসাবেই জানিয়েছেন। তবে সুচিত্রার সঙ্গে প্রবীরের বিয়ের খবর তাঁরা জানা নেই বলে রামবাবুর দাবি। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, পড়াশোনা ছাড়ার পরে প্রবীর গরুর হাতুড়ে চিকিৎসা করতেন। পরে কলকাতায় গিয়ে দাদাদের বইয়ের ব্যবসায় কাজ করেছেন। তবে প্রবীরের কাকার দাবি, “ওর সঙ্গে মাওবাদী বা জনগণের কমিটির কোনও সম্পর্ক ছিল না। আমরা তৃণমূলের কর্মী বলে সিপিএমের ষড়যন্ত্রে পুলিশ মিথ্যা অপবাদ দিয়ে প্রবীরকে জেল খাটায়।” |
|
|
|
|
|