|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ২... |
|
তখনও দেবেন্দ্রনাথ ‘মহর্ষি’ হননি |
‘বুঝতে পারি কেন শম্ভু মিত্রকে ইন্দিরা গান্ধী কর্তৃক অনুরুদ্ধ হয়ে আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের দৃশ্যরূপ রচনা করতে গিয়ে তাঁর পরামর্শ নিতে হয়; বা শরৎচন্দ্রের জীবন ও সাহিত্যের বিপ্লবী পাঠ প্রস্তুতিতে রাধারানী দেবীর দরকার হয় তাঁর সঙ্গে কথা বলবার; কেন বুদ্ধদেব বসু স্বীয় রচনাসংগ্রহের যুগ্মসম্পাদক হতে তাঁকে আহ্বান করেন এবং মৃত্যুর দিন সন্ধেয় অপেক্ষমাণ থাকেন তাঁর জন্যেই; আর কেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়কে গদ্য-পদ্য সংকলনের সব দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হয় তাঁর উপরেই।’ সুবীর রায়চৌধুরী’কে নিয়ে লিখেছেন অমিয় দেব, তাঁর মহিম রুদ্রের মৃত্যু ও অন্যান্য-য় (পত্রলেখা, ১৫০.০০) এ রকম আরও স্মৃতিলেখ মহিম রুদ্র দীপক মজুমদার নরেশ গুহ অম্লান দত্ত সুভাষ মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে, কিংবা আরও কোনও কোনও বিশিষ্টজনের মৃত্যু নিয়েও। রম্যের ধাঁচে লেখা তাঁর বাকি নিবন্ধগুলির বিষয় হয়ে উঠেছে আমাদের এই সময়ের বিপন্নতা। ‘সিমলা যখন একেবারে মানবশূন্য হইল, তখন অগত্যা আমাকে আজ সিমলা ছাড়িতে হইবে। যদিও গুর্খারা কোন অত্যাচার না করে, তথাপি খদ হইতে উঠিয়া পাহাড়ীরা সব লুঠ করিয়া লইতে পারে। তবে আজ বেহারা কোথায় পাওয়া যায়! সওয়ারী না পাইলেও সিমলা হইতে যে হাঁটিয়া পলাইতে হইবে, আমার এত ভয় হয় নাই।’ ১৮৫৭-র মে মাসে, সিপাহি বিদ্রোহের সেই উত্তাল সময়ে লিখছেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। তখনও তিনি ‘মহর্ষি’ নন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতাও নন। ১৮৩৫ থেকে ১৮৫৮ পর্যন্ত দেবেন্দ্রনাথের আত্মজীবনী প্রকাশিত হয় ১৮৯৮-এ, দেবেন্দ্রনাথের জীবনকালেই। সতীশচন্দ্র চক্রবর্তীর সম্পাদনায় পরে বইটি প্রকাশিত হয়। এ বার তার নতুন সংস্করণ হল জ্যোতির্ময় সেনের ভূমিকা ও প্রাসঙ্গিক তথ্যপঞ্জি-সহ, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী (অলকানন্দা পাবলিশার্স, ১৫০.০০)।
ঠাকুরবাড়ি মানে তো শুধু রবীন্দ্রনাথ নন। তবু রবীন্দ্রসার্ধশতবর্ষে ঠাকুর মানেই রবীন্দ্রনাথ। তারই মধ্যে একটু অন্য রকম বই পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ঠাকুরবাড়ি সংক্রান্ত (পুনশ্চ, ১৫০.০০)। জ্ঞানদানন্দিনী দেবী, সত্যপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়, অবনীন্দ্রনাথ, গগনেন্দ্রনাথ, প্রিয়নাথ সেন, মোহনলাল গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ ব্যক্তিত্বকে নিয়ে কয়েকটি লেখার সংকলন এ বই। তথ্যপূর্ণ, সুখপাঠ্য লেখা। তবে, কয়েকটি প্রাসঙ্গিক ছবি থাকলে ভাল হত। দরকার ছিল আকর গ্রন্থপঞ্জিরও।
সতী ও স্বতন্তরা (প্রতিভাস) তিন খণ্ডে বাংলা সাহিত্যে নারীকথনের নির্বাচিত সংকলন। নারীকথন মানে শুধু মহিলাদের লেখা নয়, বাংলা সাহিত্যে নারীত্বের নানা পরিচয়ের সন্ধান। চর্যাপদ থেকে লোকসাহিত্য, ছোটগল্প থেকে কবিতা, নাটক থেকে স্মৃতিকথা, উপন্যাস থেকে আত্মজীবনী খুঁজে বেড়িয়েছেন সম্পাদক শাহীন আখতার। সুসম্পাদিত এই সংকলনটিতে মেয়েবেলা থেকে পাতিব্রত্য, বিয়ে থেকে দেহোপজীবিকা নানা উপবিভাগে বিন্যস্ত হয়েছে লেখাগুলি। সূত্র, লেখক পরিচয় এবং নির্ঘণ্ট নিয়ে সংকলনটি গবেষণারও উপাদান হয়ে উঠেছে।
বাংলা সাহিত্যে বৃহন্নলাদের নিয়ে গবেষণা মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা সমাজ ও সাহিত্যে তৃতীয়সত্তা চিহ্ন (প্রতিভাস, ২৫০.০০)। নিছক পুথি-গত নয়, জীবনঘেঁষা গবেষণা।
বন্দিমুক্তি কমিটি প্রকাশ করেছে সুজাত ভদ্রের বই ভুয়ো সংঘর্ষে হত্যা (৫০.০০)। ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যে ভুয়ো সংঘর্ষে মৃত্যুর অসংখ্য অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখের পাশাপাশি বিশ্বের নানা দেশের প্রসঙ্গ টেনে আন্তর্জাতিক আইনের উল্লেখ করেছেন এই মানবাধিকার কর্মী।
উত্তরবঙ্গের বাইশটি আদিবাসী গোষ্ঠীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় নিয়ে প্রমোদ নাথের উত্তরবঙ্গের আদিবাসী পরিচয় (এন ই পাবলিশার্স, ১০০.০০)। শুধু বই পড়ে পুরনো তথ্যের কচকচি নয়, রীতিমতো ক্ষেত্রসমীক্ষা করেছেন লেখক। আছে বেশ কয়েকটি ছবিও।
প্রণব রায়ের সম্পাদনায় ‘সাহিত্যলোক’ থেকে অনেক দিন ধরেই খণ্ডে খণ্ডে প্রকাশিত হচ্ছে মেদিনীপুর/ইতিহাস ও সংস্কৃতির বিবর্তন। ৪র্থ খণ্ডটিতে আছে জমিদার বংশ, প্রাচীন স্থান, ব্যক্তি-ব্যক্তিত্ব, গ্রন্থ-পত্রপত্রিকা, ভাষা, আন্দোলন ইত্যাদি প্রসঙ্গ, আর ৫ম খণ্ডে পুরাকীর্তি (প্রথম ভাগ)। জেলা বিষয়ক বিপুল তথ্যভাণ্ডার সংকলিত হয়ে রইল এই সব খণ্ডে (দু’টিরই মূল্য ৪০০.০০ করে)। পুরাকীর্তি খণ্ডে আছে অনেক আলোকচিত্রও। আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চায় এই খণ্ডগুলির গুরুত্ব অনস্বীকার্য। |
|
|
|
|
|