|
|
|
|
জঙ্গলমহলে আশ্বাসভঙ্গ |
‘বঞ্চনার শিকার’ ৮ যুব ক্রিকেটার |
কিংশুক গুপ্ত • ঝাড়গ্রাম |
প্রথমে আশ্বাস আর পরে তা বেমালুম ভুলে যাওয়ার সেই পুরনো গল্প। দেদার আলো, প্রচুর হাইপ তুলে শুরুর পরে অন্ধকারে মিলিয়ে যাওয়ার একই কিস্সা! ফের প্রতারিত সেই জঙ্গলমহল। জঙ্গলমহলের ৮ তরুণ ক্রিকেটার।
রাজ্যে পালাবদলের পর গত সেপ্টেম্বরে বঙ্গ ক্রিকেটের সর্বেসর্বা সিএবি (ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল) ঢাকঢোল পিটিয়ে জঙ্গলমহলের তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করেছিল ঝাড়গ্রামে। কথা ছিল, চূড়ান্ত ভাবে নির্বাচিত ক্রিকেটারদের কলকাতায় সিএবি-র লিগে বিভিন্ন ক্লাবে খেলার ব্যবস্থা করা হবে। ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র স্বয়ং নির্বাচিত ক্রিকেটারদের সংবর্ধনা দিয়েছিলেন। কথা দিয়েছিলেন কলকাতায় তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। সিএবি সাংবাদিক সম্মেলন করে ওই ক্রিকেটারদের কলকাতার ক্লাবের সঙ্গে ‘সংযুক্তি’র কথা ঘোষণা করেছিল।
সবই ‘কথা’ই থেকে গিয়েছে। বাস্তব হয়নি। সিএবি-র লিগ-পর্যায়ে ক্লাবে খেলার সুযোগ ও নিয়মিত অনুশীলন থেকে বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ করেছেন জঙ্গলমহলের ৮ তরুণ ক্রিকেটার। সুবিচারের আশায় ওই ৮ জন (ঝাড়গ্রামের সোমনাথ রুহিদাস, রঞ্জিত রানা, অরিজিৎ কুণ্ডু, গৌরব মিত্র, উজ্জ্বল সামন্ত, এস কে হাসান, রাজকিশোর দাস এবং পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের সঞ্জয় তন্তুবায়) একযোগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে লিখিত ‘আবেদনপত্র’ও পাঠিয়েছেন। তাঁদের দাবি, কলকাতায় নিখরচায় থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত করে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হলেও তা করা হয়নি। ব্যক্তিগত স্তরে ব্যবস্থা করে দু’জন (উজ্জ্বল ও সঞ্জয়) কলকাতায় থেকে অনুশীলন করলেও অন্য ৬ জনের সে সুযোগ হয়নি। সিএবি-র বক্তব্য, ওই আশ্বাস দিয়েছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী। সিএবি-র নিজের থেকে কিছু করার নেই। কোচ সুশীল শিকারিয়া অবশ্য স্বীকার করছেন, চলতি মরসুমে ওই তরুণদের খেলানো যায়নি।
সোমনাথ, রঞ্জিত, অরিজিৎদের বক্তব্য, তাঁরা ভালবেসে ক্রিকেট খেলেন। আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নেওয়ার সঙ্গতি নেই। গত বছর ৫-১১ সেপ্টেম্বর সিএবি-র উদ্যোগে অনুর্ধ্ব ১৮ তরুণদের জন্য ঝাড়গ্রামে প্রশিক্ষণ শিবিরের ব্যবস্থা হওয়ায় সেখানে যোগ দিয়েছিলেন। শিবিরে প্রায় সাড়ে চারশো তরুণকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বাছাই করা ৩০ জনকে অক্টোবরে ৭ দিনের জন্য কলকাতায় নিয়ে গিয়েও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। চূড়ান্ত ভাবে তাঁদের মধ্যে ৮ জনকে সিএবি-র লিগে বিভিন্ন ক্লাবে খেলানোর জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল। সিএবি-র তরফে সাংবাদিক বৈঠক করে জানানো হয়েছিল, কলকাতার ৮টি ক্লাবে ওই ৮ জনকে খেলানো হবে। ৮টি ক্লাবের কর্মকর্তারাও (ওয়াইএমসিএ, ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি, স্টারস্ স্পোটিং, ব্যাঁটরা ক্রিকেট ক্লাব, অরোরা অ্যাথলেটিক ক্লাব, ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট, গুরুদাস ইনস্টিটিউট ইত্যাদি) হাজির ছিলেন সেই সাংবাদিক বৈঠকে। কলকাতায় প্রশিক্ষণ চলাকালীনই আবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে রাজ্য ক্রীড়া দফতরের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ওই ৮ জন-সহ জঙ্গলমহলের ৩০ জন তরুণকেই সংবর্ধনা দেন ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র। মদনবাবু ওই দিন সাংবাদিকদের জানান, লিগ-পর্যায়ে খেলার জন্য চূড়াম্ত ভাবে নির্বাচিত ৮ জনের কলকাতায় থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত করা হবে। মন্ত্রীর ওই আশ্বাসের পরে সংশ্লিষ্ট ক্লাবগুলি আর ওই ৮ জনের থাকা-খাওয়া নিয়ে মাথা ঘামাতেই রাজি হয়নি। সোমনাথদের বক্তব্য, “আমরা ক্লাবগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। কিন্তু ক্লাব কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, অনুশীলনের সুযোগ দেওয়া হবে। কিন্তু থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থার জন্য সিএবি-র সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।” সোমনাথদের অভিযোগ, “সিএবি-কর্তৃপক্ষ কেবল আশ্বাস দিয়েই গিয়েছেন। চলতি মরসুমে অনুশীলন ও ক্লাবে খেলার আর সুযোগ মেলেনি।” |
|
|
|
|
|