|
|
|
|
|
|
উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া, ব্যারাকপুর |
আগরপাড়া স্টেশন |
‘আদর্শ’ অব্যবস্থা |
জয়তী রাহা |
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা। আগরপাড়া স্টেশনের চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম। ডাউন কল্যাণী লোকাল থেকে নামতেই মুখ থুবড়ে পড়লেন আগরপাড়ার বাসিন্দা বৃদ্ধ গৌরীশঙ্কর লাহিড়ী। কারণ, প্ল্যাটফর্মে কার্যত আলো নেই।
বেলা সাড়ে ১১টা। চার নম্বর প্ল্যাটফর্মের কলে শিশুদের স্নান ও জল নেওয়ার কাজ চলছে। ট্রেন থামতেই জনস্রোত নেমে এল। শুরু হল ধাক্কাধাক্কি। অভিযোগ, এমনই নানা ধরনের সমস্যায় জেরবার হচ্ছে আগরপাড়া স্টেশনের যাত্রী পরিষেবা।
২০০৯-’১০-এ ‘আদর্শ স্টেশন’-এর তালিকায় নাম ছিল আগরপাড়ার। সেই অনুযায়ী কাজও শুরু হয়। রেল সূত্রে খবর, আগরপাড়া স্টেশন সাজাতে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা খরচও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু নিত্যযাত্রী ও বাসিন্দাদের অভিযোগ, যাত্রী পরিষেবার কার্যত কোনও উন্নতি হয়নি। ট্রেন সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার জন্য কোনও অনুসন্ধান কাউন্টার নেই। ভরসা বলতে টিকিট বুকিং ক্লার্ক। সেখানেও অনেক সময়ে সহযোগিতা মেলে না। সমস্যা রয়েছে শৌচাগার নিয়েও। তা ছাড়া চার নম্বর প্ল্যাটফর্মের টিকিট কাউন্টারটি অধিকাংশ সময়েই বন্ধ থাকে।
|
|
যদিও পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সমীর গোস্বামী বলেন, “আদর্শ স্টেশনের উপযোগী ন্যূনতম যাত্রী পরিষেবা গড়ে তোলার জন্য কাজ শুরু হয়েছে। মেঝে ও দেওয়ালে গ্রানাইটের কাজ অনেকটাই হয়েছে। ছাউনির কাজও বেশ কিছুটা হয়েছে। তবে সব কাজ এখনও শেষ হয়নি। শেষ হলে তবেই সুফল পাবেন যাত্রীরা।”
স্টেশনে ওভারব্রিজ আছে। কিন্তু অধিকাংশ যাত্রীই তা ব্যবহার করেন না। কেন? উত্তরে নিত্যযাত্রী শ্রাবন্তী বসুর দাবি, “ওভারব্রিজের ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ হয় না।” যদিও রেল সূত্রে খবর, এ জন্য এক শ্রেণির যাত্রীর সচেতনতার অভাবই দায়ী। নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, আগরপাড়া স্টেশনের চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম ঘেঁষে দীর্ঘ দিন বেশ কিছু উদ্বাস্তু পরিবার বসবাস করছেন। তাঁরা কাপড় কাচা, রান্না এবং স্নানের জন্য প্ল্যাটফর্মের কল ব্যবহার করেন। রেলিং জুড়ে কাপড় শুকোনো হয়।
প্ল্যাটফর্মে বসার জায়গায় তোষক, বালিশ রোদে দেওয়া থাকে। অনেকে প্ল্যাটফর্মে বাচ্চাদের স্নানও করান। এ রকমই এক বাসিন্দা ইলিয়াস মণ্ডলের বক্তব্য: “প্রায় ৩৫ বছর ধরে এখানে বাস করছি। স্টেশনের এই কল আর সেন বাজারের কলই গোটা বস্তির ভরসা।” |
|
রেলওয়ে প্যাসেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশনের আগরপাড়া অঞ্চলের সেক্রেটারি অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় বলেন, “শুধু ওই পরিবারগুলিই নয়, রেলের অবহেলাও এ জন্য দায়ী। পাঁচ মাস চার নম্বর প্ল্যাটফর্মে কোনও আলো নেই। এই নিয়ে অনেক বার অভিযোগ জানিয়েও কিছু হয়নি। তা ছাড়া প্ল্যাটফর্মে দখলদারি ক্রমেই বাড়ছে। অথচ রেলের কোনও হেলদোল নেই।” দখলদারি প্রসঙ্গে সমীরবাবু বলেন, “রাজ্য সরকারের অধীন জিআরপি আইনশৃঙ্খলার দিকটি দেখে। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন আরপিএফ মূলত রেলের সম্পত্তি রক্ষা করে। উদ্বাস্তু নিয়ন্ত্রণ নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা না থাকায় সমস্যা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং রাজ্য সরকারের সাহায্য না পেলে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।”
পানিহাটি পুরসভার উপ-পুরপ্রধান আরএসপি-র পঙ্কজ দাস বলেন, “আগরপাড়া স্টেশনের যাত্রীদের তরফে মাঝেমধ্যেই এই নিয়ে অভিযোগ আসে। শুধু উদ্বাস্তু সমস্যাই নয়, রেলের পরিষেবায় নানা গলদ রয়েছে।” যদিও পুরপ্রধান সিপিএমের চারণ চক্রবর্তীর কথায়: “রেলের থেকে কোনও প্রস্তাব এলে ভেবে দেখা হবে।” |
|
|
|
|
|