পূর্ব কলকাতা
সিগন্যাল-বিভ্রাট
নামেই নিয়ন্ত্রণ
সিগন্যাল লাল। মানিকতলার বাসিন্দা শ্যামসুন্দর রায় গাড়ি থামিয়ে দিলেন। দেখলেন, পাশ দিয়ে অন্যান্য গাড়ি বেরিয়ে যাচ্ছে। পিছনের একটি গাড়ি ক্রমাগত হর্ন দিয়ে চলেছে। কিন্তু সিগন্যাল না বদলানোয় তিনি নড়লেন না। শেষে এক স্থানীয় বাসিন্দা শ্যামসুন্দরবাবুকে জানান, এখানে সিগন্যাল লালই থাকে। ঘটনাস্থল বিধাননগরের জিডি আইল্যান্ড। শুধু শ্যামসুন্দরবাবুই নন, বিধাননগরে বহিরাগতদের অনেকেই এই সমস্যা পড়েন।
স্থানীয় বাসিন্দা এবং নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, এক একটি আইল্যান্ডে এক এক রকম ব্যবস্থা। কোথাও সিগন্যাল সারা দিন লাল হয়ে থাকে। কোথাও অন্য রং।
অধিকাংশ সময়ে ট্রাফিককর্মীর দেখা পাওয়া যায় না। ফলে বিভ্রাট বাড়ে। কেউ কেউ দাঁড়িয়ে পড়েন। ছোটখাটো দুর্ঘটনাও ঘটছে।
কমিশনারেটের আওতায় যাওয়ার পরে বিধাননগরের ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছে পুলিশ প্রশাসন। যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে ইতিমধ্যেই নামানো হয়েছে গ্রিন পুলিশ। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এটুকুই কি যথেষ্ট?
করুণাময়ী মোড়, ময়ূখ ভবনের মোড়, সিটি সেন্টার মোড়ে গেলে আবার অন্য সমস্যা। যেমন, উল্টোডাঙার বাসিন্দা গৌতম দাস বলেন, “করুণাময়ী মোড়ে রাস্তা পারাপার করা বিপজ্জনক। গ্রিন পুলিশ থাকলেও চালকেরা তাঁদের বিশেষ আমল দিচ্ছেন না। মোড়ের চার দিকে অটো ও রিকশাস্ট্যান্ড। ফুটপাথ দখল করে চলে নানা দোকান।”
স্থানীয় বাসিন্দা অমলেন্দু সরকার বলেন, “গ্রিন পুলিশের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। অনেক সময় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে যানজট হয়ে যায়।” অন্য দিকে, বিধাননগর কলেজ মোড় এবং করুণাময়ী মোড় থেকে ই এম বাইপাস পর্যন্ত ব্রডওয়েতে ট্রাফিককর্মীর অভাবে সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ। পাশাপাশি, বেপরোয়া যান চলাচলেও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে স্থানীয় বাসিন্দা ও নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ।
পুলিশ সূত্রে খবর, সমস্যার অন্যতম কারণ ট্রাফিককর্মীর অভাব। গ্রিন পুলিশ নামিয়েও সমস্যা মিটছে না। বাসিন্দাদের দাবি, বিধাননগরে গাড়ি চলাচলের সংখ্যা গত কয়েক বছরে অনেক বেড়েছে। কিন্তু রাস্তা চওড়া না হওয়ায়, ট্রাফিককর্মীর অভাবে এবং সিগন্যাল ব্যবস্থার জন্য সমস্যা কাটছে না।
বাসিন্দাদের সংগঠন সল্টলেক ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “সিগন্যাল বিভ্রাটের মূল কারণ পর্যাপ্ত ট্রাফিককর্মীর অভাব। পাশাপাশি চালকদেরও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। নতুন কমিশনারেট হওয়ার পরে ট্রাফিক ব্যবস্থায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আশা করি সমস্যা কাটবে।”
বিধাননগরের ট্রাফিকের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি পুলিশ কমিশনার ভরতলাল মিনা বলেন, “সমস্যাগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ট্রাফিককর্মীর অভাব আছে। পর্যায়ক্রমে কর্মীর সংখ্যা বাড়ানো হবে। ইতিমধ্যেই কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে। সিগন্যাল-সমস্যা সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল। বিধাননগরের ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ে সার্বিক পরিকল্পনা করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে তা কার্যকরী হবে। কিছু দিনের মধ্যে সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আসবে।”

অলঙ্করণ: অনুপ রায়




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.