পূর্ব কলকাতা: লেকটাউন, বারাসাত
বারাসত হাসপাতাল
চিকিৎসা সুদূর
স্বাস্থ্য পরিষেবার হাল ফেরাতে রাজ্য জুড়ে তৈরি হয়েছে রোগীকল্যাণ সমিতি। কিন্তু খোদ বারাসত সদর হাসপাতালের রোগীকল্যাণের বাস্তব ছবিটা অন্য রকম।
হাসপাতালের কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, হাসপাতালে পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক নেই। চালকের অভাবে বন্ধ হয়ে পড়ে আছে হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা। প্রসূতির চিকিৎসায় এক শ্রেণির চিকিৎসক কেন্দ্রীয় সরকারের ন্যাশনাল রুরাল হেল্থ মিশনের নির্দেশিকা অমান্য করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এই নির্দেশিকা অনুযায়ী, দারিদ্রসীমার নীচের মানুষদের জন্য প্রসূতিকালীন চিকিৎসার সময়ে যাবতীয় ওষুধ সরবরাহ করবে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, অধিকাংশ সময়েই বিপিএল তালিকাভুক্ত প্রসূতিদেরও বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে বলা হয়। যদিও এই নির্দেশিকা অমান্য করার অভিযোগ প্রসঙ্গে হাসপাতালের সুপার পুষ্পেন্দু সেনগুপ্ত বলেন, “বিষয়টি তা নয়। ন্যাশনাল রুরাল হেল্থ মিশনের আওতাভুক্ত রোগীদের চিকিৎসার সময়ে হাসপাতালে ওষুধের সরবরাহ না থাকলে তা বাইরে থেকে কেনার জন্য আমরা ২০০০ টাকা পর্যন্ত অর্থ সাহায্য করে থাকি।”
বারাসত সদর হাসপাতালে বারাসত মহকুমা ছাড়াও বসিরহাট, বনগাঁ মহকুমার বাসিন্দারা চিকিৎসা করাতে আসেন। অভিযোগ, বারাসত হাসপাতালের সব থেকে বড় সমস্যা হল চিকিৎসক, নার্স, কর্মী এবং সাফাইকর্মীর অভাব। ভর্তি হওয়া রোগী ছাড়াও প্রতি দিন বহির্বিভাগে আসা অসংখ্য রোগী দেখতে হয় মাত্র চার জন চিকিৎসককে। এ ছাড়াও হাসপাতালে গ্রুপ ডি-র মোট দেড়শোটি পদের মধ্যে একশোটি এখনও ফাঁকা। অর্থাৎ, ৫০ জন কর্মী নিয়েই চলতে হচ্ছে বারাসত হাসপাতালকে। ফলে নিয়মিত পরিষ্কার হয় না শৌচাগারগুলিও।
প্রতি দিন প্রায় ১৫০ জন রোগী এখানে ভর্তি হতে আসেন। পরিস্থিতি জটিল হলে এখান থেকে রোগীদের কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। অথচ জেলার একমাত্র সদর হাসপাতালে একটিও সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স নেই। ফলে বাধ্য হয়েই রোগীদের শরণাপন্ন হতে হয় বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের উপর। হাসপাতালের ভিতরেই থাকে আট-দশটি অ্যাম্বুল্যান্স। অভিযোগ, বহু ক্ষেত্রেই রোগীদের থেকে অনেক বেশি ভাড়া দাবি করা হয়। রাতে সেই অঙ্কটা আরও বাড়ে। হাসপাতালের একটি অ্যাম্বুল্যান্স থাকলেও সেটি গত বামফ্রন্ট সরকারের আমল থেকেই চালকের অভাবে অযত্নে পড়ে আছে। অনেক সময় ভ্যান, অটো ও অন্যান্য যানবাহনে করেও রোগীদের হাসপাতালে আনা হয়। বারাসত হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা এক রোগীর আত্মীয় তোফায়েল হোসেন বলেন, “হাসপাতালের ভিতরে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে, সাংসদ তহবিলের টাকায় সৌন্দর্যায়নের জন্য অর্থব্যয়ের হিসাব লিখে দেওয়া হয়েছে। যে হাসপাতালে সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স নেই, সেখানে হাসপাতাল রং করে, ‘কাজ’-এর বিজ্ঞাপন দিয়ে রোগীদের কী লাভ হবে?”
এ ব্যাপারে উত্তর ২৪ পরগনা রোগীকল্যাণ সমিতির সদস্য তথা বারাসত পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের সুনীল মুখোপাধ্যায় বলেন, “বারাসত সদর হাসপাতাল ভবনগুলির রং খসে খসে পড়ছিল। বিষয়টি স্থানীয় সাংসদের নজরে আসায় তিনি পুরসভার মাধ্যমে হাসপাতালের সৌন্দর্যায়ন করেন। স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়নের জন্য হাসপাতালের তরফ থেকে সাংসদের কাছে আর্থিক সাহায্য চাওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে তাঁর আশ্বাসও মিলেছে।” অ্যাম্বুল্যান্সের সমস্যার কথা স্বীকার করে সুনীলবাবু বলেন, “বিষয়টি স্বাস্থ্য দফতরে জানানো হয়েছে। পুরসভা সাময়িক ভাবে কর্মী ও অ্যাম্বুল্যান্স দিয়ে সাহায্য করছে।”
হাসপাতালের এক্স-রে বিভাগের পাশের ঘরেই রান্না হয় রোগীদের খাবার। রোজ প্রায় তিনশো জনের রান্না হয় এখানে। রান্নাঘরের পাশেই খাবার ও বিভিন্ন নথিপত্রের গুদামঘর। তবে রান্নাঘরের কোথাও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালের রান্নাঘরের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা জানান, আগুন নেভানোর প্রশিক্ষণ তাঁদের দেওয়া হয়নি। অন্য দিকে, এক্স-রে বিভাগের কর্মীদের অভিযোগ, আগুন লাগার আশঙ্কার কথা ছেড়ে দিলেও এক্স-রে বিভাগের ঠিক পাশেই রান্নার কাজ চলায় রোগীদেরও অসুবিধা হয়। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করে সুপার বলেন, “ওই রান্নাঘরের জন্য কারও অসুবিধা হয় বলে আমার জানা নেই।”
হাসপাতালের সুপার বলেন, “২৪ ঘণ্টা পরিষেবা দিতে গেলে চার জন অ্যাম্বুল্যান্স চালক দরকার। সেখানে দু’জন আছেন। তাঁরা দিনে পরিষেবা দিতে পারলেও রাতে অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হয় না।” সুপার বলেন, “বারাসত পুরসভা থেকে আমরা কিছু কর্মী পেয়েছি। সেই কর্মীদের দিয়েই হাসপাতাল সাফাই ও অন্য কাজগুলি করানো হয়।”
উত্তর ২৪ পরগনার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুকান্ত শীলের কথায়: “২৪ ঘণ্টা অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা দেওয়ার মতো চালক আমাদের হাতে নেই। এই মুহূর্তে বারাসত হাসপাতালে দু’জন চালক আছেন। তাঁদের সাহায্যে বিকল্প যানের মাধ্যমে সাময়িক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হয়। হাসপাতাল সাফাই করার জন্য বারাসত পুরসভার বেশ কিছু কর্মী দায়িত্ব নিয়েছেন। তাঁদের বেতন দেবে হাসপাতালই। কর্মীর অভাব এতটাই যে শয্যায় রোগী আনা-নেওয়ার মতো কর্মী নেই। সে ক্ষেত্রেও বারাসত পুরসভা কর্মী দিয়ে সাহায্য করছে। এ ভাবেই চালাতে হচ্ছে। হাসপাতালের রান্নাঘর নিয়ে আমার কাছে এখনও কোনও অভিযোগ আসেনি।”

ছবি: সুদীপ ঘোষ




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.